Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

সংক্রমণ রোধে টিকায় জোর

মাহমুদুল হাসান

এপ্রিল ৫, ২০২১, ০৮:৫০ পিএম


সংক্রমণ রোধে টিকায় জোর
  • কমে আসছে প্রতিষেধক নেয়ার হার
  • পর্যাপ্ত করোনার টিকা রয়েছে মজুদ
  • ৮ এপ্রিল শুরু হবে টিকার দ্বিতীয় ডোজ
  • দ্বিতীয় ডোজ চললেও বন্ধ হবে না প্রথম ডোজ

করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। সংক্রমণ এখন ঊর্ধ্বমুখী। পূর্বের রেকর্ড ভেঙে প্রতিনিয়ত গড়ছে নয়া রেকর্ড। গত দুদিনে সাত হাজারেরও বেশি সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যুও নেহায়েত কম নয়। প্রতিদিন অর্ধশতাধিক মৃত্যু হচ্ছে। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ মৃত্যু রয়েছে ৬৪ জনের ঘরে। পরিস্থিতি দিনে দিনে অবনতির পথে। সংক্রমণের গতি নিয়ন্ত্রণে জারি করা হয়েছে সাতদিনের লকডাউন। তবুও করোনার লাগাম টানা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ও লকডাউন কার্যকর করতে কাজ করছে মাঠপ্রশাসন।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে শুধু লকডাউন জারি করলে কাজ শেষ হবে না। মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। অসহায় ও প্রান্তিক মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সহায়তা দিতে হবে। সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ কার্যক্রমও অব্যাহত রাখতে হবে। সেই সাথে ব্যাপকভাবে করোনার প্রতিষেধক টিকা প্রয়োগ করতে হবে।

এসব লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। জীবন ও জীবিকার কথা মাথায় রেখে টিকাদানে উদ্বুদ্ধ ও স্বাস্থ্যবিধি মানাতেই বেশি জোর দিচ্ছে। যদিও অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুই ডোজের টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণের পরও সদ্য বিদায়ী স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানাসহ অনেকেই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে মো. আবদুল মান্নান গত বছর জুনে দায়িত্ব গ্রহণের পর সস্ত্রীক করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। পরে তিনি সুস্থ হলেও তার স্ত্রী করোনায় প্রাণ হারান। আবদুল মান্নান দ্বিতীয়বারের মতো করোনা আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্সকে টিকা প্রয়োগের মধ্যদিয়ে দেশে করোনা ভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। এর পরের দিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন সোসাইটির পাঁচ শতাধিক ফ্রন্টলাইনারের শরীরে টিকা প্রয়োগ করা হয়। সেখানে কোনো জটিলতা দেখা না দেয়ায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি একযোগে সারা দেশে গণটিকাদান শুরু হয়। শুরুতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেলেও এক মাস পর টিকা গ্রহণের পরও অনেকে ফের করোনা আক্রান্তের খবর ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষ টিকায় আগ্রহ হারায়। গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে একদিনে সর্বোচ্চ প্রায় দুই লাখ ৬২ হাজার মানুষ টিকা গ্রহণ করেন। কিন্তু সেই টিকা গতকাল মাত্র সাড়ে ৪৫ হাজার মানুষ গ্রহণ করেছেন। সম্প্রতি আবার সাধারণ মানুষের টিকায় আগ্রহ ফেরাতে কাজ শুরু করেছে সরকার। ব্যাপক প্রচার প্রচারণা ও প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় টিকা পৌঁছে দিতে এখন ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগের তথ্যমতে, গতকাল সোমবার পর্যন্ত সারা দেশে ৬৯ লাখ ৪০ হাজার ২০৮ জন মানুষ করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। তার মধ্যে গতকাল ৪৫ হাজার ৫৩৯ জন নতুন করে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকা গ্রহণ করেছেন। এ নিয়ে দেশে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা দাঁড়ালো ৫৪ লাখ ৯৮ হাজার ১৭২ জনে। এদিকে গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ক্লিয়ার করেছেন, ৮ এপ্রিল থেকে যে ভ্যাকসিনের সেকেন্ড ডোজ শুরু হওয়ার কথা সেটা যথাযথভাবে চলবে। ৮ তারিখ থেকে কনফার্ম। আমাদের টিকা আছে। আমি কথা বলেছি। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, যে পরিমাণ ফাস্ট ডোজ দেয়া হয়েছে, দ্বিতীয় ডোজ দিতে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।

এদিকে গত রোববার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড ডিপ্লয়মেন্ট কোর কমিটির সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক  অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার সভাপতিত্বে টিকাদান কার্যক্রমের কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, আগামী আট এপ্রিল থেকে করোনার দ্বিতীয় ডোজ টিকা প্রদান শুরু হবে। তবে প্রথম ডোজ টিকাদানও অব্যাহত রাখা হবে। এ লক্ষ্যে গতকাল থেকে করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকার এসএমএস পাঠানো শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকার সরবরাহকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মার সহায়তায় সারা দেশে টিকা পরিবহন শুরু হবে। রমজান মাসেও করোনার টিকাদান কার্যক্রম চলবে। লকডাউনের মধ্যেও টিকাদান কার্যক্রম চলবে। এক্ষেত্রে টিকাগ্রহীতাকে অবশ্যই টিকার কার্ড সঙ্গে রাখতে হবে। ভ্যাকসিন কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে জনসাধারণ রিকশা বা ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহার করতে পারবেন।

করোনা মোকাবিলায় সাধারণ মানুষকে টিকাদান কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করতে স্থানীয় মসজিদে মাইক ও ক্যাবল টিভিসহ অন্যান্য প্রচার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচারণা চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আমারসংবাদ/জেআই