Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

ব্যবসায়ীরা দিশাহারা

জাহাঙ্গীর আলম

এপ্রিল ৬, ২০২১, ০৭:৫০ পিএম


ব্যবসায়ীরা দিশাহারা
  • ঘরবন্দি হয়ে হাত বুকে করে দিন পার
  • স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খুলে দেয়ার দাবি

করোনায় গতবছর ঈদে তালা খুলতে পারিনি। তাই এবার আশা করে বেশি মাল তুলেছি। সামনে রোজা। পহেলা বৈশাখও আসছে। কিন্তু গত সোমবার থেকে সরকার লকডাইন দিয়েছে। সবই খোলা। শুধু আমাদের ব্যবসা বন্ধ। নিয়ম মেনে দোকান খুলতে চাই। কিন্তু দেয়া হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় নেই। গতকাল নিউমার্কেটের আশা গার্মেন্টের মনিরুল ইসলাম এভাবেই লকডাউনে অসহায় হয়ে খেদোক্তি প্রকাশ করেন।

মোহাম্মপুরের টোকিও স্কোয়ারের আবুল হোসেন বলেন, কি করবো বুঝতে পারছি না। দিশাহারা হয়ে গেছি। শুধু ওই দুই ব্যবসায়ীই নয়, রাজধানীর ছোট-বড় সব মার্কেট, ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের একই অভিযোগ, আশায় গুড়েবালি। তারা হাত বুকে করে অসহায় হয়ে ঘরবন্দি দিন পার করছেন। তাদের দাবি— ‘আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা করতে পারবো না কেন’। সরকার সুযোগ না দিলে পথে বসে যেতে হবে। অনেকেরই সংসারে যা আছে বিক্রি করেও দেনা মেটানো যাবে না। তাই বাধ্য হয়ে তারা প্রথম দিনের মতো গতকালও বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন বিক্ষোভ করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান।

সার্বিক ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সহ-সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন আমার সংবাদকে বলেন, লকডাউনে সরকার ব্যবসা বন্ধ করতে কঠোরভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এই সিদ্ধান্ত মানতে হবে। পথে-ঘাটে আন্দোলন, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে লাভ নেই। একটু ধৈর্য ধরতে হবে। যেহেতু সব খোলা। সামনে রোজা। একই সাথে পহেলা বৈশাখ। ব্যবসায়ীরা সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে। কাজেই এভাবে বন্ধ থাকলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্তত ঈদের আগে ব্যবসা করার সুযোগ চাওয়া হয়েছে সরকারের কাছে। প্রতিনিয়ত মুখ্যসচিব, মন্ত্রী পরিষদ সচিব থেকে শুরু করে আইজির সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তারা আশ্বাস দিয়েছেন, দু-একদিনের মধ্যে সুসংবাদ আসতে পারে। ব্যবসায়ীরা যাতে অন্তত ঈদের ও বৈশাখের ব্যবসাটা করতে পারে।

২০২০ সালের মার্চ থেকে শুরু হওয়া করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার হুহু করে বাড়ছে। তা প্রতিরোধে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২৯ মার্চ ১৮ দফা নির্দেশনা প্রদান করে। তাতেও পরিমাণ কমতে না থাকায় সরকার করোনা ভাইরাস রোধে সোমবার মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে এবার সাতদিনের জন্য ১১টি বিধিনিষেধ আরোপ করে কঠোরভাবে পালন করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ নিয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও শিল্প-কারখানা ও নির্মাণকাজ চলতে পারবে।

এই বিধিনিষেধের চ নম্বরে বলা হয়েছে— শপিংমলসহ ব্যবসা বন্ধ থাকবে। তবে পাইকারী ও খুচরাপর্যায়ে অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। কিন্তু কোনো ক্রেতা স্বশরীরে যেতে পারবে না। সরকারের এ ঘোষণার দিন থেকে ব্যবসায়ীরা রাজধানীর নিউ মার্কেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, মানববন্ধন করছেন। বিভাগীয় রাজশাহী শহরের মতো পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার ব্যবসায়ীরাও বিক্ষোভ করেছেন। তারা বলেন, আমাদের ব্যবসা করার সুযোগ দিতে হবে। তারা দ্রুত এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য সরকারকে অনুরোধ জানান। ক্ষুদ্র ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের এ দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন উপজেলার ব্যবসায়ী নেতারাও। এফবিসিসিআই সভাপতিকে বিষয়টা দেখার অনুরোধ জানান তারা। বলেন, না খেয়ে মরার চেয়ে খেটে খেয়ে মরা ভালো। পোশাকশিল্পের পাইকারী বাজার ইসলামপুরের সিটি ক্লথ স্টোরের মালিক জয়নাল বলেন, চিন্তার শেষ নেই। কি করব। লকডাউনে বাসায় ঘুমিয়ে সময় পার করছি। সরকার না দেখলে পথে বসে যেতে হবে। লাখ লাখ টাকার বেচাকিনা বন্ধ হয়ে গেছে। দোকান বন্ধ থাকলে খামু কি, কর্মচারীদের বেতন দিবো কীভাবে। ব্যাংকের ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবো।

বাংলাদেশে সপ্তাহব্যাপী লকডাউন শুরুর আগের দিন মার্কেট খোলা রাখার দাবিতে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন ঢাকার নিউমার্কেট, গাউছিয়া ও নীলক্ষেত, মিরপুর, উত্তরা, মিরপুর-১০, মিরপুর-১ ও আব্দুল্লাহপুরের দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। গতকালও বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, আন্দোলন হয়েছে। নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমদের সারা বছরের ব্যবসা হয় এই সময়ে। ঈদের আগের দুমাসে। গত বছর আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এবারও যদি এই সময় মার্কেট বন্ধ থাকে, তাহলে তো পথে বসে যেতে হবে। তিনি দাবি করে বলেন, যেভাবে বিশেষ বিবেচনায় শিল্প-কারখানা চালু রাখা হয়েছে, সেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেট খোলা রাখার সুযোগ দেয়া হোক। রাজধানীর গুলিস্তান, বায়তুল মোকারম থেকে শুরু করে মতিঝিল এবং মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাতে ব্যবসা চলে। এ ব্যবসায়ীরাও বলছেন, সুযোগ না দিলে সংসার চালাবো কীভাবে? তাই পেটে ভাত পেতে দোকান খুলে রাখতে চাই। 

উল্লেখ্য, গতবার ঈদের লকডাউনের কারণে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এবছরও প্রথম দফায় সাতদিনের জন্য রোজার ঈদের আগে লকডাউনে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

আমারসংবাদ/জেআই