Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

গণপরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী, মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

এপ্রিল ৭, ২০২১, ০৭:৫০ পিএম


গণপরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী, মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর রেকর্ড ভাঙছে নিয়মিতই। প্রতিদিনই এখন মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে গত সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন) আরোপ করে সরকার। এর আওতায় দুদিন বন্ধও ছিলো গণপরিবহন চলাচল। তবে তৃতীয় দিনের মাথায় এসেই তুলে নেয়া হয় গণপরিবহন চলাচলের সেই শিথিলতা। ফের সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গণপরিবহন চলাচলের কথা জানানো হয়। গতকাল থেকে গণপরিবহন চলাচল শুরুও হয়েছে। অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখেই যাত্রী পরিবহন করার কথা থাকলেও দৃশ্যত দু-চারটি বাদে অধিকাংশ গণপরিবহনই কখনো যাত্রীদের চাপাচাপিতে আবার কখনো বর্ধিত ভাড়ার চেয়েও বেশি ভাড়া আদায়ের লোভে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করছে। তুলছে অতিরিক্ত যাত্রী। মানছে না যথাযথ স্বাস্থ্যবিধিও।

আবার স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বাসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার কথা থাকলেও তা দেখা যায়নি। আর অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে উপেক্ষিতই হচ্ছে শারীরিক দূরত্ব। শুধু তাই নয়, সিটি কর্পোরেশন এলাকাগুলোতেই কেবল গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি পেয়েই দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহনগুলোও রাজধানীতে প্রবেশ শুরু করেছে।

এছাড়া ঢাকার ব্যস্ততম বেশকিছু এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ফুটপাতের দোকান, যানবাহন চলাচল, রাইড শেয়ারিং, ব্যাংকে লেনদেন, মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ, বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি ফিলিং স্টেশন, খাবার হোটেল এবং দোকানসহ অন্যান্য কার্যক্রমও অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে। এর ফলে করোনা সংক্রমণ রোধে যে লকডাউন দেয়া হয়েছে তা কার্যত অনেকটাই গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।  

এদিকে নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ মেনে চলাচলের অনুমতি পেয়ে চলাচল শুরু করলেও গণপরিবহনে ভোগান্তির চিত্রও কাটেনি পুরোপুরি। রাজধানীর আসাদগেট, কলাবাগান, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, বাটা সিগন্যাল, আজিমপুর ও নীলক্ষেত এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে গতকাল। গণপরিবহন চললেও কম ভাড়ার স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের বাসে তুলতে অনীহা দেখাচ্ছেন কন্ডাক্টররা। ফলে বাসে উঠতে দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে অনেক যাত্রীকে। রাইড শেয়ারিং কিংবা সিএনজি-রিকশায় বেশি ভাড়া গুনতে হবে এমন শঙ্কায় বাসের অপেক্ষায় থেকে নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে পৌঁছাতে পারেননি অনেকেই। বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ তো রয়েছেই।

যাত্রীরা বলছেন, এমনিতেই রাজধানীজুড়ে গণপরিবহনের সংকট রয়েছে। তার মাঝেই যাত্রী পরিবহনে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এমন অবস্থায় যাত্রীরা পড়েছেন মহাবিপাকে। সময়মতো অফিসপাড়ায় পৌঁছাতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে। সেই সাথে ভাড়ার নৈরাজ্য তো রয়েছেই। মাসের শেষে যে টাকা বেতন আসবে তার অর্ধেকের বেশিই চলে যাবে অফিস যাতায়াতে গণপরিবহনের ভাড়ায়। ভাড়া নিয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতকারী যাত্রীরা। বাসে উঠলেই তাদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।

যাত্রীরা বলছেন, বাস থামানোর পর যখন স্বল্প দূরত্বের কথা বলছি তখন আর কেউ নিতে চাইছে না। সিট খালি থাকলেও গাড়িতে উঠতে দিচ্ছে না। প্রতিদিন যাতায়াতেই চলে যাচ্ছে আড়াইশো থেকে তিনশ টাকা। এমন অবস্থা যদি দীর্ঘসময় চলতে থাকে তবে আমাদের বেঁচে থাকাই দায় হয়ে পড়বে। গাড়িতে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করলে অর্ধেক ভাড়া বাড়ানো যেতে পারে কিন্তু ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করার কোনো মানেই হয় না। সংশ্লিষ্টদের উচিত অচিরেই এই বাড়তি ভাড়া প্রত্যাহার করা— এমনটাই বলছেন যাত্রীরা।     সিটি কর্পোরেশনগুলোতে গণপরিবহন চলাচলের নতুন সিদ্ধান্তে বাইরের গণপরিবহন সিটিতে প্রবেশ করতে পারবে না বলে জানিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই বাইরের গণপরিবহনগুলোও প্রবেশ করছে রাজধানী ঢাকায়।

গতকাল সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাজলা এলাকায় দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জের অসংখ্য বাস রাজধানীতে প্রবেশ করছে। একই সঙ্গে সিলেট, কুমিল্লা ও লাকসাম এলাকার দূরপাল্লার বাসগুলোকেও প্রবেশ করতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাস চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। যাত্রাবাড়ী পয়েন্ট দিয়ে বাইরের গাড়ি প্রবেশ করছে কি-না সেটা আমরা তদারকি করছি। নির্দেশ অমান্য করে কেউ যদি গাড়ি নিয়ে আসে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।  এদিকে কাজলা থেকে গুলিস্তানের ভাড়া ১০ টাকা। কিন্তু ১০ টাকার কম দিতে চাইলেই গাড়িতে উঠতে দেয়া হচ্ছে না— এমন অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। সরকারের উদ্ভট সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষের ওপর এমন জুলুম করার সাহস পায় বাস চালকরা- ক্ষোভ প্রকাশ করে এমনটাই বলছেন যাত্রীরা। রাইড শেয়ারিং রাইডারদের প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করে যাত্রীরা বলছেন, দ্রুত পৌঁছানোর জন্য অ্যাপে মোটরসাইকেল ব্যবহার করা গেলেও বর্তমানে সরকারের নিষেধাজ্ঞায় সেটিও বন্ধ রয়েছে। তারপরও দু-চারটি যা-ও পাওয়া যাচ্ছে তারাও তিন থেকে চারগুণেরও বেশি ভাড়া চাচ্ছে। রাইডারদের বক্তব্য, মোটরসাইকেল চালিয়ে সংসার চলে অধিকাংশ রাইডারের। বর্তমানে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না তাই ভাড়া একটু বেশি চাইতে হচ্ছে।  

গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর ১, ২, ১০ নম্বর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকেই সড়কে নেমেছে সরকারি ও বেসরকারি মালিকানাধীন গণপরিবহনগুলো। অফিসগামী মানুষ তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে এসব গণপরিবহন ব্যবহার করছেন। তবে যাত্রীরা বলছেন, এ দুদিন গণপরিবহন না থাকায় যে ভোগান্তি সহ্য করতে হয়েছে সেটা কিছুটা লাঘব হলেও মূলত লাভের লাভ কিছুই হয়নি। বরং করোনার চলমান ঊর্ধ্বগতির মধ্যে বাসের চালক, হেলপার ও কন্ডাকটরদের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি না মানা, ভাড়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম এবং স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের ঠেলে নামিয়ে দেয়া- এসবই সরকারি নির্দেশনার অন্তরায়।

আমারসংবাদ/জেআই