Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ভোগান্তিহীন নিয়োগে তৎপর পিএসসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল ৭, ২০২১, ০৭:৫০ পিএম


ভোগান্তিহীন নিয়োগে তৎপর পিএসসি

বিসিএসসহ সরকারি সবধরনের নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। সময়ের জটে অনেকেই বয়সসীমা হারিয়ে সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়। এধরনের অভিযোগ থেকে বেরিয়ে দ্রুত ভোগান্তিহীনভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন- পিএসসি।

কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান সরকারের সাবেক জ্যৈষ্ঠ সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের দীর্ঘ সময় মাঠ প্রশাসনের অভিজ্ঞতার ছাঁপ পড়তে শুরু করেছে। সঠিক রোডম্যাপের মাধ্যমে ইতোমধ্যে গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সময় কমিয়ে আনার উদ্যোগ এবং বাস্তবায়ন শুরু করেছেন তিনি। ১৮ মাসের মধ্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে শুরু করে পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ করে চাকরিতে যোগদানের একটি রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী দুবছরের মধ্যে সময় আরও কমিয়ে ১ বছরের মধ্যে বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নিয়েছে পিএসসি। অন্যসব নিয়োগ প্রক্রিয়াও দ্রুত শেষ করা হবে। পিএসসি সূত্রে এমনটাই জানা গেছে।

সূত্র জানায়, রোডম্যাপ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১৫ মাসে একটি বিসিএসের প্রিলিমিনারি, রিটেন এবং ভাইভা শেষ করা হবে। আর চূড়ান্ত প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও মুক্তযোদ্ধা সনদের সত্যতা যাচাই করতে সময় লাগবে ৩ মাস। অর্থাৎ বিসিএসের  পুরো প্রক্রিয়া ১৮ মাসে করা হবে।

পিএসসি সূত্রে মতে, করোনা সংকটে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জট লেগেছে। আটকে থাকা নিয়োগগুলো শেষ না করতে জোর দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২০১৭ সালের শুরু হওয়া ৩৮তম বিসিএসের নিয়োগ গত ২৮ জানুয়ারি সম্পন্ন হয়েছে। গত ১৯ মার্চ ৪১তম প্রিলিমিনারি এবং গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ৪২তম প্রিলিমিনারি অনুষ্ঠিত হয়। চলতি বছর ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারিও নিতে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ৪০তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশকিছু পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি মাথায় রেখেই মো. সোহরাব হোসাইনের নেতৃত্বে তৎপরতা অব্যাহত রাখা হয়েছে। প্রতিটি প্রক্রিয়াই কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হচ্ছে।

পিএসসি শুধু বিসিএসই আয়োজন করে এমন নয়। ক্যাডার নন-ক্যাডার এবং নতুন করে দায়িত্ব পাওয়া প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করে। চাকরিরতদের পদোন্নতি, শাস্তি বিষয়ে নানা ধরনের মতামত ও সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে। শিক্ষক নিয়োগের মতো বড় এবং জটিল নিয়োগগুলোও পিএসসি করে।

পিএসসি কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছর তিনটি পরীক্ষা শেষপর্যায়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি অবনতির কারণে সেটাও এখনো নিশ্চিত নয়। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে এক বছরের মধ্যে ৪১ হয়ে যাবে, ৪২-এর স্পেশাল এবং ৪৩-এর কাজ এগিয়ে আনা হবে। যদি সম্ভব হয়, তাহলে পরের বছর চাপ কমে আসবে এবং সময়ও কমিয়ে আনা যাবে। এরই মধ্যে রোডম্যাপ অনুযায়ী- প্রিলিমিনারি, লিখিত পরীক্ষা, ভাইভা পরীক্ষার সময়ের খসড়া পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী করা গেলে- কয়েক বছরের মধ্যে এক বছরে বিসিএস শেষ করা যাবে। 

পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, চাকরি দীর্ঘসূত্রতার জন্য পিএসসি শুধু দায়ী নয়, বাস্তবতাও দেখতে হবে। কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে পরীক্ষা হয়েছে। তবে আমাদের সামনে যে জট রয়েছে সেটা শেষ করতে পারলে প্রতি বছর একটা বিসিএস আয়োজন ও শেষ করতে পারব। চলমান চারটি বিসিএসের মধ্যে তিনটি এ বছরই শেষ করা সম্ভব হতে পারে। গত বছর নতুন করে সরকারি চাকরিতে ১১তম থেকে ২০তম গ্রেডের (আগের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি) পদের নিয়োগ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) হাতে দেয় সরকার। প্রশাসনে প্রায় সব সময়ই আড়াই থেকে তিন লাখের মতো তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ খালি থাকে। সারা বছরই এসব নিয়োগ হয়। যে কারণে নতুন করে পিএসসিতে চাপ আরও বেড়েছে। 

পিএসসি কর্মকর্তারা জানান, করোনা সংকটের মধ্যেই গত বছর পিএসসি যোগদান করেন বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন। তিনি যোগ দেওয়ার পর থেকেই পিএসসির কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও গতি বেড়েছে। বিশেষ করে সময়ের জটিলতা কমিয়ে আনতে তিনি বেশকিছু সফল উদ্যোগ নিয়েছেন এবং বাস্তবায়নও শুরু করেছেন। 

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর অবসরোত্তর ছুটি স্থগিতের শর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মো. সোহরাব হোসাইনকে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। সোহরাব কর্মজীবনের সততা ও নিষ্ঠার জন্যে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের এক সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন ক্যাডারের ১৯৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৮৬ সালে সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু করেন। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাঠ প্রশাসন এবং মন্ত্রণালয়-বিভাগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। বি.সি.এস. প্রশাসন একাডেমির রেক্টর হিসেবে অত্যন্ত সুনাম ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।

আমারসংবাদ/জেআই