Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

দোকান বন্ধে ব্যাংকে নেই ভিড়

জাহাঙ্গীর আলম

এপ্রিল ৭, ২০২১, ০৭:৫০ পিএম


দোকান বন্ধে ব্যাংকে নেই ভিড়

‘খুব তাড়া নেই। সময় করে ব্যাংকে এলাম। দোকানসহ অনেক কিছু খোলা না থাকায় ভিড় নেই। তাই অল্প সময়ে লেনদেন সেরে ফেললাম’- বেসিক ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখায় ব্যাংকিংয়ের ব্যাপারে এভাবেই অভিমত ব্যক্ত করেন ধানমন্ডির ৯/এ বাসিন্দা জামাল শেখ। মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের দোকানদার আবুল হোসেন বলেন, ব্যবসা বন্ধ। তাহলে ব্যাংকে কি জন্য যাবো। আমরা ব্যাংকে না যাওয়ায় লেনদেন কম হবে, এটাই স্বাভাবিক।

ব্যাংকপাড়া নামে পরিচিত মতিঝিল, পল্টন এলাকাতেও একই দৃশ্য। ব্যাংকাররাও বলছেন, লকডাউনের আগে গ্রাহকদের রেকর্ড ভিড় হয়েছে ব্যাংকে। তাছাড়া শপিংমল, দোকানও বন্ধ, তাই লকডাউনে আড়াই ঘণ্টার ব্যাংকিংয়েও গ্রাহকরা কম আসছেন।

তবে লেনদেনে কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের রমনা কর্পোরেট শাখার ম্যানেজার (এজিএম) দেবব্রত বিশ্বাস আমার সংবাদকে বলেন, এখানে দুই দিক থেকে ব্যাংকিং হয়। একদিকে সবিচালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লেনদেন। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের লেনদেন। দুই দিন বন্ধ ও লকডাউনের ঘোষণার কারণে রোববার প্রচুর ভিড় হয়েছে। তা দেড় বছরেও এত বেশি ভিড় হয়নি। লকডাউনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে ব্যাংকিং লেনদেন করা হচ্ছে। এ জন্য সময় কমিয়ে আড়াই ঘণ্টা করা হয়েছে। তাতে কোনো সমস্যা হচ্ছ না। কারণ যাদের দরকার তারা ঠিকই ব্যাংকে আসছেন। অতি প্রয়োজন না হলে কেউ ব্যাংকে আসছেন না।

এ সময় বিজ্ঞাপন সংস্থার রিপন নামে একজন জানান, সময় করে এসেছি। ভিড় নেই। তবে তাড়া দিয়ে আসতে হয়েছে। কারণ সাড়ে ১২টার পর সুযোগ থাকবে না। যেখানে আগে ৪টা পর্যন্ত লেনদেন করা যেতো।

জানতে চাইলে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুখতার হোসেনও আমার সংবাদকে বলেন, লকডাউনে লেনদেন কম হচ্ছে। কারণ শপিংমল, দোকানপাট বন্ধ। শিল্পকারখানা ছাড়া আরও অনেক কিছু বন্ধ।

তিনি বলেন, অর্থনীতির দিক থেকে এটা করা হয়েছে। তাই লেনদেন কম হচ্ছে। তাছাড়া শাখা ছাড়াও বিভিন্ন উপশাখায় লেনদেন হচ্ছে। সিডিউল করে সব শাখা খোলা রাখা হয়েছে। করোনাকালেও ব্যাংকিং সেবা দেয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃতের হার। তাই প্রকোপ ঠেকাতে প্রথমে ১৮টি নির্দেশনার পর ৫ এপ্রিল থেকে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে। সাতদিনের লকডাউনে শিল্পকারখানা খোলা রাখা হয়েছে। একই সাথে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সীমিত পরিসরে ব্যাংক চালু রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সরকারের নির্দেশনা মেনে বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং সেবা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে সার্কুলার জারি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিদিন ব্যাংকিং লেনদেনের সময়সূচি সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলবে। অর্থাৎ আড়াই ঘণ্টা নির্ধারণ করে দিয়েছে। তবে প্রধান কার্যালয় ও শাখা ব্যাংক দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। টাকা জমা থেকে শুরু করে উত্তোলন, ঋণের অর্থ ছাড়করণ, শিল্প এলাকায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ, ভাতা ও অনুদান বিতরণসহ সব ব্যাংকিং লেনদেন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। লেনদেনের সময় হবে সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মো. আনোয়ারুল ইসলাম সার্কুলার জারি করেছেন। ব্যাংকগুলো রোস্টার করে অফিস করতে শুরু করেছে।

গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি থেকে ব্যাংকপাড়া নামে পরিচিত মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় দেখা যায়, বেশির ভাগ ব্যাংকের শাখায় গ্রাহকের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। কাউন্টারগুলোতে স্বাভাবিক দিনের চেয়ে গ্রাহক কম দেখা গেছে। আবার অনেক ব্যাংকে স্বাস্থ্যবিধির কারণে ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে গ্রাহকদের বাইরেই লাইন ধরে দাঁড়াতে হয়।

সোনালী ব্যাংকের পল্টন কর্পোরেট শাখার কর্মকর্তারা বলেন, এখানে সব সময় ভিড় থাকলেও লকডাউনে গ্রাহকের উপস্থিতি কম। গত রোববার অনেক গ্রাহকই বেশি বেশি করে টাকা তুলেছেন। তাই লকডাউনে স্বাভাবিক দিনের তুলনায় লেনদেন অনেক কম হচ্ছে। দু-একদিন গেলে আবার লেনদেন স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে তারা জানান।

তবে বৈদেশিক লেনদেনের কারণে ব্যাংকপাড়া মতিঝিলের বিভিন্ন শাখায় গ্রাহকদের দীর্ঘলাইন দেখা যায়। অনেকে অভিযোগ করে জানান, ভেতরে দুজনের বেশি ঢুকতে দিচ্ছে না। তাই বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। আর ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেবা দিচ্ছি। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সীমিতসংখ্যক গ্রাহককে পর্যায়ক্রমে শাখার ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। এ জন্য গ্রাহকদের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে বলে তারা জানান। 

এদিকে ১১ কঠোর নির্দেশনার মধ্যে শপিংমলসহ দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়ায় মফস্বলে ছোটখাটো দোকান খুললেও রাজধানীতে বন্ধ। তা খুলে দেয়ার জন্য তারা প্রতিদিন আন্দোলন, মানববন্ধন এবং বিক্ষোভও করছেন। তারা ব্যবসা করতে না পারায় ব্যাংকে কোনো টাকা জমা ও উত্তোলনও হচ্ছে না। এ জন্য লেনদেনও কম হচ্ছে বলে তারা জানান। শুধু তাই নয়, খাবারের দোকান, হোটেল এবং রেস্তোরাঁয় কেবল খাদ্য বিক্রয় ও সরবরাহের কথা বলা হয়েছে। কোনো অবস্থায় বসে খাবার গ্রহণ করা যাবে না। এই রকম বিধিনিষেধে মোটেই খাবার তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ রাজধানীতে ব্যাংকের সময়ের সাথে সব কিছু চলে। তাই দুপুরে মতিঝিল এলাকাতে খাবারের পরিমাণ একেবারে কমে গেছে। এ জন্য আমরা আগে ব্যাংকে গেলেও লকডাউনে একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান হানিফ বিরিয়ানির ম্যানেজার শরিফ।

আমারসংবাদ/জেআই