Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

করোনাকালে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছে ইফা

নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল ৭, ২০২১, ০৭:৫০ পিএম


করোনাকালে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছে ইফা
  • বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানটি দেশে সাম্প্রদায়িক চেতনার বিস্তার রোধে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই রেখে আসছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে দেশবাসীর প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্বের হাল ধরেছেন ড. মো. মুশফিকুর রহমান

ইসলামিক ফাউন্ডেশন। করোনাকালে জাতির চরম সংকটময় মুহূর্তে আলেম সমাজের মাধ্যমে বিভিন্ন সচেতনতামূলক বার্তা প্রেরণ, আলেম সমাজকে আর্থিকভাবে সহায়তা, করোনায় মৃতদের কাফন-দাফনের ব্যবস্থা, করোনায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের জাকাতের অর্থ প্রদানসহ বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করে যেমন কুড়িয়েছে সর্বমহলের প্রশংসা তেমনি দেশবাসীর কাছেও পরিণত হয়েছে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানে।

এছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া এই প্রতিষ্ঠান দেশে সাম্প্রদায়িক চেতনার বিস্তার রোধেও প্রতিষ্ঠার পর থেকেই রেখে আসছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ধর্মের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিষয়েও কঠোর নজরদারির দায়িত্ব নিতে হবে প্রতিষ্ঠানটিকে সম্প্রতি এমনটিই বলেছেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান দুলাল। বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শের পরিপন্থী এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যাতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিচ্যুতি ঘটে এমনটা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতা ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও মূল্যবোধের প্রচার-প্রসারের লক্ষ্যেই ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নেও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিটি পদক্ষেপই অত্যন্ত প্রশংসার দাবিদার— বলছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি কর্মকর্তাই প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি উজ্জলে সততা, নিষ্ঠা ও দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান ফাউন্ডেশন সংশ্লিষ্টরা।

এরই মধ্যে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে দেশবাসীর প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম এই প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্বের হাল ধরেছেন ড. মো. মুশফিকুর রহমান। তার দক্ষ ব্যবস্থাপনায় আরও সমৃদ্ধ হবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন— এমনটাই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে অনেক দূর এগিয়ে নেয়ারও অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে আমরা সকলে মিলে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবো- প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

ইসলামি ভ্রাতৃত্ব এবং এর মূল্যবোধের প্রচার এবং পাশাপাশি চরমপন্থা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামের প্রকৃত মর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে জাতির পিতার পদচিহ্ন অনুসরণ করে ও ইসলামের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়েই সারা দেশে আট হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণের ভাবনা নিয়ে এগিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা বহুমুখী সেতুর পর যেটি দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রকল্প যা নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। বিশ্বের মধ্যে এটিই প্রথম যেকোনো সরকার একই সময়ে এত বেশি সংখ্যক মসজিদ নির্মাণ করছে। বর্তমান সরকারের আমলে ইসলামি ফাউন্ডেশনের ৫৬০টি মডেল মসজিদের মধ্যে প্রায় ১৭০টি মসজিদ তিন ধাপে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে উদ্বোধন করারও কথা রয়েছে।

৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক মো. নাজিবার রহমান সংবাদকর্মীদের জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন মিলিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে তিন ধাপে মোট ১৭০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হবে। এর মধ্যে আসন্ন রমজানের আগেই প্রথম ধাপের ৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করা হবে, যেখানে সেপ্টেম্বর মাসে আরও ৬০টি এবং ডিসেম্বরে ৬০টি মসজিদ উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, সিরাজগঞ্জে চারতলা জেলা মডেল মসজিদ এবং ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণকাজ প্রায় ৮০ শতাংশেরও বেশি শেষ হয়েছে। মসজিদের রিমিংয়ের কাজ ১৭ মার্চের আগে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে, যা প্রথম ধাপে উদ্বোধন করা হবে। এছাড়া রংপুর জেলায় প্রথম ধাপে উদ্বোধনের জন্য ৯টি মডেল মসজিদ প্রস্তুত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে রংপুরে চারতলা জেলা মডেল মসজিদ এবং ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণকাজ প্রায় ৯১ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুই ইসলামিক ফাউন্ডেশন (আইএফ) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন আইন, ১৯৭৫ কার্যকর করেন। তার চিন্তাধারার সাথে মিল রেখেই দেশজুড়ে মসজিদ এবং ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করে একটি শক্তিশালী ইসলামি সাংগঠনিক কাঠামো গঠন করতে চায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এটি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারের পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ ও নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিতেও উদ্বুদ্ধ করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে ৪২০টি মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে এবং বাকি মসজিদগুলোর কাজ শিগগিরই শুরু হবে বলে জানা গেছে। প্রকল্পের দলিলপত্রাদি অনুসারে মডেল মসজিদগুলো এ, বি এবং সি তিনটি ক্যাটাগরিতে নির্মিত হচ্ছে ‘এ’ ক্যাটাগরির অধীনে, ৬৪টি জেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় লিফটের সুবিধা সম্বলিত প্রায় ৬৯টি চারতলা মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। একটি মসজিদের প্রতিটি তলায় দুই হাজার ৩৬০.০৯ বর্গমিটার জায়গা থাকবে। ‘বি’ ক্যাটাগরির অধীনে, প্রত্যেক তলায় ১৬৮০.১৪ বর্গমিটার জায়গাসহ ৪৭৫টি মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। অন্যদিকে,  উপকূলীয় অঞ্চলে ‘সি’ ক্যাটাগরির অধীনে থাকা ১৬টি মসজিদের প্রতিটির তলায় ২,০৫২.১২ বর্গমিটার জায়গা থাকবে। প্রতিটি জেলা ও সিটি কর্পোরেশন মসজিদে এক সাথে নামাজের জন্য এক হাজার ২০০ জন লোকের ব্যবস্থা ছিলো এবং প্রতিটি উপজেলা ও উপকূলীয় অঞ্চলের মসজিদে ৯০০ জন লোক একসাথে নামাজ পড়তে পারতো। এই মসজিদগুলোতে প্রায় ৪.৯৯ লাখ পুরুষ এবং ৩১ হাজার ৪০০ নারী একসাথে নামাজ পড়তে পারবেন। মডেল মসজিদগুলোতে ইসলামি গবেষণা ও দ্বীন-ই-দাওয়াহ কার্যক্রম, কুরআন হেফজখানা, শিশু ও গণশিক্ষা ব্যবস্থা, স্থানীয় ও বিদেশি পর্যটকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা, মৃতদের জন্য গোসল ও দাফনের ব্যবস্থা, হজযাত্রী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের মতো সুবিধা থাকবে। গাড়ি পার্কিংসহ ইমাম-মুয়াজ্জিন এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য থাকার ব্যবস্থাও থাকবে। এই মসজিদগুলোতে গ্রন্থাগারের ব্যবস্থা থাকবে যেখানে প্রায় ৩৪ হাজার মানুষ একসাথে পবিত্র কুরআন এবং অন্যান্য ইসলামিক বই পড়তে পারবে। এছাড়া প্রায় ছয় হাজার ৮০০ লোকের জন্য ইসলামিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করার ব্যবস্থা থাকবে।

অন্যদিকে, প্রকল্পটি শেষ হলে প্রায় ৫৬ হাজার লোক দো’আ ও মুনাজাত করতে পারবেন এবং মসজিদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাসবিহ জপতে পারবেন।  অন্যান্য ধর্মীয় কর্মকাণ্ড ছাড়াও প্রতিবছর প্রায় এক লাখ ৬৮ হাজার শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এই মসজিদ থেকে প্রতি বছর প্রায় ১৪ হাজার কুরআনে হাফেজ (সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্থ যাদের) বের হবে। এছাড়াও পবিত্র হজের জন্য ডিজিটাল নিবন্ধনের সুবিধার পাশাপাশি প্রায় দুই হাজার ২৪০ জন দেশি-বিদেশি অতিথির আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে।

আমারসংবাদ/জেআই