Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

গ্রামীণ উদ্যোক্তা তৈরিতে ভূমিকা রাখছে

আখতার উজ জামান

এপ্রিল ৮, ২০২১, ০৮:৪৫ পিএম


গ্রামীণ উদ্যোক্তা তৈরিতে ভূমিকা রাখছে

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরভুক্ত ‘উপকূলীয় চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প’ বাংলাদেশের উপকূলীয় চরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা তৈরি করেছে। প্রকল্পটি বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের ১৬টি উপকূলীয় উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রতিটি ইউনিয়নে ৫০০ জন করে মোট ৩৪ হাজার সুফলভোগী রয়েছে। প্রত্যেক সুফলভোগী শুরুতে ৩ দিনের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে ২০টি করে হাঁস বা ২০টি করে মুরগি বা ৩টি করে ভেড়া বিনামূল্যে পেয়ে থাকেন।

পাশাপাশি বিনামূল্যে হাঁস, মুরগি ও ভেড়া রাখার জন্য শেড, খাদ্য, মেডিসিন, ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা সুবিধা পান। সরেজমিন প্রকল্পভুক্ত এলাকাসমূহের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন সুফল ভোগীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, অনেকেই ইতোমধ্যে মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে ২০টি করে হাঁস বা ২০টি করে মুরগি বা ৩টি করে ভেড়া, হাঁস, মুরগি ও ভেড়া রাখার জন্য শেড, খাদ্য, মেডিসিন ও ভ্যাকসিন উক্ত প্রকল্প থেকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের মাধ্যমে পেয়েছেন।

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার ধান সিঁড়ি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের নব গ্রামের সুফলভোগী শামসুন্নাহার বেগম ও তার স্বামী মো. ওয়ালি উল্লাহ বলেন, তারা অত্র প্রকল্প থেকে ৩ দিনের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে প্রাপ্ত ২০টি মুরগি থেকে ১২০টি মুরগি উৎপাদন করেছেন এবং প্রায় ৬০০টি ডিম বিক্রি করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। একই ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ জগদানন্দ গ্রামের সুফলভোগী মর্জিনা বেগম বলেন তিনিও অত্র প্রকল্প থেকে ৩ দিনের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে ৩টি ভেড়া, শেড, খাদ্য, মেডিসিন ও ভ্যাকসিন বিনামূল্যে পেয়েছেন। তার মোট ভেড়ার সংখ্যা এখন ৭টি। ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার চর লক্ষীগঞ্জ গ্রামের সুফলভোগী হোসনে আরা বেগম ৩টি ভেড়া থেকে ৭টি ভেড়া উৎপাদন করেছেন। বরগুনা সদর উপজেলায় আয়োজিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সুফলভোগীদের সাথে মতবিনিময় এবং বিভিন্ন সুফলভোগীর বাড়ি পরিদর্শনকালে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মুরগি পালন গ্রুপের সুফলভোগী মোসা. মনিকা জানান, তিনি প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত ২০টি মুরগি থেকে গড়ে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৩টি ডিম পান, এ পর্যন্ত প্রায় ৫০টি বাচ্চা উৎপাদন করেছেন। তিনি প্রায় ৭০০০-৮০০০ টাকা পুঁজি গড়েছেন।

অত্র প্রকল্পের ৩৪ হাজার সুফলভোগীর ৯০ শতাংশই নারী অর্থাৎ ৩০,৬০০ জনই নারী। তারা ঘরে বসে হাঁস, মুরগি ও ভেড়া পালন করে পরিবারের উন্নতি তথা গ্রামীণ অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছেন। অর্থাৎ নারীর ক্ষমতায়ন, চরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের বেকারত্ব মোচন ও গুণগত পুষ্টির চাহিদাপূরণ করে মেধাবী জনগোষ্ঠী গঠনে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।

বিগত ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে বাংলাদেশের জিডিপিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ছিলো প্রায় ১.৫৩ ভাগ। কিন্তু কোভিড ১৯ পরিস্থিতিতে অন্যান্য খাতের মতো এ শিল্পটিও কিছুটা হোঁচট খেয়েছে। অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৯ অনুসারে বাংলাদেশের বেকারত্বের হার ৪.১৯ শতাংশ। কোভিড ১৯ প্রাদুর্ভাবকালীন দেশে প্রায় ৫৩.৬৪ মিলিয়ন মানুষ বেকার হয়েছেন যাদের প্রতিদিনের আয় মাত্র ১৬০ টাকা বা ১.৯ ডলার। গত মার্চ থেকে মে পর্যন্ত গড় পারিবারিক আয় কমেছে প্রায় ৭৪ শতাংশ। এ অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, টার্কি, ভেড়া, শুকর, কবুতর পালন বেকার জনসম্পদকে আলোর পথ দেখাতে পারে। বাংলাদেশে একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষের প্রতি দিন মাংস দরকার ১২০ গ্রাম, দুধ দরকার ২৫০ মিলি। এমন প্রেক্ষাপটে দুধ, ডিম তথা পুষ্টির চাহিদাপূরণ, বেকারত্ব মোচন ও উপকূলীয় চরাঞ্চলের অবহেলিত জনগোষ্ঠী বিশেষ করেনারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে ‘উপকূলীয় চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পটি’ ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে।

অত্র প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডা. এস.এম. জিয়াউল হক রাহাত জানান, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে সমাজের বঞ্চিত ও অবহেলিত অংশবিশেষ করে উপকূলীয় চরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে অর্থনীতির মূলস্রোতে অন্তর্ভুক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। এ প্রকল্পটি সরাসরি উপকূলীয় চরাঞ্চলের মানুষকে প্রশিক্ষণ ও বিনামূল্যে ২০টি করে হাঁস বা ২০টি করে মুরগি বা ৩টি করে ভেড়া, হাঁস, মুরগি ও ভেড়া রাখার জন্য শেড, খাদ্য, মেডিসিন ও ভ্যাকসিন বিতরণ করে স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুফলভোগীরা অত্র প্রকল্পের জন্য একদিকে যেমন প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন পাশাপাশি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ.ম. রেজাউল করিম এমপি, সচিব রওনক মাহমুদ ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আব্দুল জব্বার শিকদারের কাছে প্রকল্প এলাকা বৃদ্ধির জন্য পুঁজির দাবি জানিয়েছেন।

আমারসংবাদ/জেআই