Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

নিরাপদ খাদ্য ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে তৎপর খাদ্যমন্ত্রী

আসাদুজ্জামান আজম

এপ্রিল ১১, ২০২১, ০৭:৪৫ পিএম


নিরাপদ খাদ্য ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে তৎপর খাদ্যমন্ত্রী
  • চলতি এপ্রিল পর্যন্ত খাদ্যশস্যের মজুদ ৪.৯১ লাখ  টন। এর মধ্যে চাল ৩.৮১ লাখ টন এবং গম ১.১০ লাখ টন। ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রমে এসেছে সাফল্য

উৎপাদন থেকে শুরু করে খাবার টেবিল পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে নিরাপদ খাদ্য ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে কাজ করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকটেও খাদ্য উৎপাদন, সঠিক পদ্ধতিতে পণ্য উৎপাদন ও সকল অংশীজনসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়। গত বোরো মওসুমে ধানের ভালো ফলন ও ন্যায্য দাম পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছিল। আমন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছেছে। ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাও আশানুরূপ। সরবরাহকৃত পণ্যের সঠিক মান নিশ্চিতে নেয়া হয়েছে কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা। নানামুখী উদ্যোগের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, করোনা মহামারি ও বন্যা মোকাবিলার পরও দেশে খাদ্যের অভাব নেই। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা এমনটাই মনে করেন।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, বন্যা-খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশপাশি অর্থনীতিতে ধাক্কা দেয় বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, করোনা মহামারি ও বন্যা মোকাবিলার পরও দেশে খাদ্যের অভাব নেই। এক্ষেত্রে সফলতা দেখিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। সকল প্রতিকূলতার মাঝেও দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়াদি নিশ্চিত করতে একাগ্রচিত্তে কাজ করে যাচ্ছেন খাদ্যমন্ত্রী। মন্ত্রীর সার্বিক দিকনির্দেশনায় গোটা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টদের সবাই খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। যে কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতেও দেশকে পড়তে হয়নি খাদ্য সংকটে। গত বছর দেশব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকালীন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ এবং মাঠ প্রশাসনের কাজে সম্পৃক্ত থেকে সহযোগিতার নির্দেশনা দেন মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

এ ছাড়া করোনার সময়ে চালের বাজারে দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা কঠোর হাতে দমন করেছেন মন্ত্রী। দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকেই নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। মন্ত্রণালয় সূত্র আর জানায়, করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণের সময়ের কথা মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আগভাগেই ব্যবস্থা নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে পণ্যের দাম নির্ধারণ করা দেয়। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য এবং মিলমালিকদের কারসাজি রোধে কয়েক স্তরের মনিটরিং ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যার কারণে ধান-চাল সংগ্রহের সাফল্য এসেছে। গত ৭ নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি  পর্যন্ত ২৬ টাকা কেজি দরে দুই লাখ মেট্রিক টন ধান, ৩৭ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাল এবং ৩৬ টাকা কেজি দরে আতপ চাল সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়। প্রান্তিক চাষির ধানের ন্যায্য দাম নিশ্চিতে সরকার প্রতি বছর বোরো মওসুমে ধান ও চাল সংগ্রহ করলেও আমন মওসুমে শুধু চাল সংগ্রহ করা হতো। গত বছর থেকে আমন মওসুমে চালের পাশাপাশি ধানও সংগ্রহ করা হচ্ছে। গত ১৫ মার্চ পর্যন্ত ৭০ হাজার ১৩৬ টন আমন সিদ্ধ চাল, চার হাজার ৮৬৩ টন আতপ চাল এবং  আমন  ধান ১২ হাজার ৩৪২ টন  আমন ধান সংগৃহীত হয়েছে। চালের আকারে সর্বমোট ৮৩ হাজার ২০২ টন। চলতি ৮ এপ্রিল পর্যন্ত খাদ্যশস্যের সরকারি মোট মজুদ ৪.৯১ লাখ টন। এর মধ্যে চাল ০৩.৮১ লাখ  টন এবং গম ১.১০ লাখ টন। সরকারি মজুদ বাড়াতে বিভিন্ন দেশ থেকে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারত থেকে মোট এক লাখ ১১ হাজার ৫২০ টন চাল দেশে পৌঁছেছে। ভোমরা, দর্শনা, বেনাপোল, সোনামসজিদ, হিলি, বুড়িমারি, বাংলাবান্দা, শেওলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে বেসরকারিভাবে মোট ৫৬ হাজার ৩৯১ টন চাল দেশে পৌঁছেছে। এছাড়া সরকারিভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির আওতায় ৫৫ হাজার ১২৯ টন চাল দেশে পৌঁছেছে। সর্বমোট এক লাখ ১১ হাজার ৫২০ টন চাল দেশে পৌঁছেছে। সর্বশেষ গত ৭ এপ্রিল অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রতি টন চালের দাম পড়বে ৪১১ দশমিক ৯৩ মার্কিন ডলার। এতে মোট ব্যয় হবে ১৭৪ কোটি ৬৫ লাখ ৮৩ হাজার ২০০ টাকা। গত বছর নভেল করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া শুরুর দিকে সাধারণ ছুটিকালীন সময়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অফিসসহ সকল স্থাপনা খোলা রেখে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পরিস্থিতিতে গ্রামে বসবাসরত হতদরিদ্র দুস্থ পরিবারের খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু রাখা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিবেচনায় বছরের কর্মাভাবকালীন পাঁচ মাসের অতিরিক্ত মে-২০২০ মাসেও এ কর্মসূচির চাল বিতরণ করা হয়। সেই সাথে শহরাঞ্চলে বসবাসকারী সকল কর্মহীন মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম চালু করে ১০ টাকা কেজি দরে প্রায় ২১ লাখ কার্ডের মাধ্যমে পরিবার প্রতি মাসিক ২০ কেজি হারে এপ্রিল ও জুন মাসে মোট প্রায় ৬৮ হাজার টন চাল বিতরণ করা হয়। করোনাকালীন কার্যক্রম পরিচালনার সময়ে খাদ্য অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণও করেন এবং চিকিৎসা নেন। দ্বিতীয় সংক্রমণ শুরুর পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী।

করোনা সংকটে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত উন্নয়ন প্রকল্প ও কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ প্রণয়ন ও আইনের আওতায় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খাদ্যের নিরাত্তা রক্ষায় প্রচার-প্রচারণ পরিচালনাসহ বিভিন্ন প্রকার ভেজাল ও দূষিত খাদ্যের বিক্রয়, আমদানি বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশের প্রতিটি জেলায় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের জেলা কার্যালয়  স্থাপন করে তাদের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য মনিটরিং ব্যবস্থা রুট লেভেল পর্যন্ত জোরদার করা হচ্ছে। সংস্থাটি খাদ্যের নিরাপত্তা ও গুণগতমান পরীক্ষণ, নিরাপত্তার মান অনুসারে রেস্টুরেন্টের  গ্রেডিং প্রদান ও নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ২০১৯ সালে দেশের বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় আনুষ্ঠানিকভাবে এ+, এ, বি, সি এই চার ক্যাটাগরিতে গ্রেডিং পদ্ধতির প্রবর্তন করা হয় ঢাকা মহানগরীর হোটেল-রেস্তোরাঁকে। খাদ্যের নিরাপত্তা ও গুণগতমান পরীক্ষণের জন্য দেশের ছয়টি বিভাগে ছয়টি ল্যাবরেটরি নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। একটি মোবাইল ল্যাবরেটরি ভ্যানের কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। 

কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি, শ্রমিক কল্যাণ ও শ্রমনীতি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্প পূরণ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রদত্ত খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট অঙ্গীকার এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়ে লক্ষ রেখে খাদ্য মন্ত্রণালয় ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের সময় সরকারি পর্যায়ে খাদ্য সংরক্ষণ ক্ষমতা ছিলো ১৪.০০ লাখ টন; যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২১.৫০ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ধারণক্ষমতা ৩০ লাখ টনে উন্নীত করার লক্ষ্যে বর্তমানে তিনটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ চলছে। এ ছাড়া দেশের ১৯ জেলার ৬৩টি উপজেলায় পাঁচ লাখ পারিবারিক সাইলো বিতরণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ২০২০-২১ অর্থবছরে আরো তিন লাখ পারিবারিক সাইলো বিতরণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষকদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য প্যাডি সাইলো নির্মাণের একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। চলমান সারা দেশে পুরাতন খাদ্য গুদাম ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদির মেরামত এবং নতুন অবকাঠামো নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প।  ৩১৬৮৭.৫৭ লাখ টাকা (সম্পূর্ণ জিওবি) ব্যয়ে জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২১ মেয়াদে বাস্তবায়নাধীন আছে। প্রকল্পের আওতায় খাদ্য অধিদপ্তরের স্থাপনাসমূহে ৫৫০টি পুরাতন খাদ্য গুদাম ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদির মেরামত এবং অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।  সারা দেশে ১.০৫ লাখ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন খাদ্যগুদাম নির্মাণ, আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ প্রকল্প উল্লেখযোগ্য।

সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী  সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘সুষম, নিরাপদ ও শক্তিশালী খাদ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করছে সরকার। সব ধরনের পরিস্থিতি মাথায় রেখেই মজুদ রাখা হচ্ছে, কেউ খাদ্যভাবে থাকবে না। নতুন নতুন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হচ্ছে। আমরা খাদ্যের উৎপাদন থেকে শুরু করে খাবার টেবিল পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। এ লক্ষ্যে সকল অংশীজনসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করা হচ্ছে। পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হলে আগামীতে বাংলাদেশের খাদ্য ব্যবস্থাপনা বিশ্বে রোলমডেল হিসেবে জায়গা করে নেবে।’

আমারসংবাদ/জেআই