Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রাজধানী ঢাকা

রফিকুল ইসলাম

এপ্রিল ১১, ২০২১, ০৮:০৫ পিএম


সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রাজধানী ঢাকা

করোনায় ঢাকা সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ও মৃত্যুতে সব চেয়ে বেশি ঢাকায়। তবুও সাধারণ মানুষ মানছে না স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের কঠোরতা কোনো কাজে আসছে না। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে করোনায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশনা এলেও এখন পর্যন্ত মাঠে নিষ্ক্রিয় জনপ্রতিনিধিরা। তারা সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোনো ভূমিকা রাখছে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশেষ করে, রাজধানীর পাড়া-মহল্লা, রেলস্টেশন, বাসস্টেশনসহ বিভিন্ন জনসমাগম স্থানে লিফলেট বিতরণ, মাইকিং করা, মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা, শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, বিনাপ্রয়োজনে বাইরে না আসতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। নইলে পরিস্থিতি কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়।

তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে করোনার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে ৭৮ জন। এর মধ্যে শুধু ঢাকা বিভাগে মৃত্যুবরণ করেছে ৪৭ জন। এ নিয়ে ঢাকা বিভাগে করোনায় মৃতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৬২২ জন। খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, করোনার সব থেকে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। মূলত প্রয়োজনের তুলনায় বেশি মানুষ ঢাকায় বসবাস করেন। একই সাথে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী ঢাকায় ঢুকছে। ফলে রাজধানীর মানুষ বেশি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এমন পরিস্থিতিতে নিষ্ক্রিয় ঢাকার জনপ্রতিনিধিরা। বিশেষ করে ঢাকায় মোট সংসদীয় আসন রয়েছে ২০টি। এর মধ্যে গত ৪ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ঢাকা-১৪ আসনের এমপি আসলামুল হক।

এছাড়া বাকি সংসদ্যরা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় নিষ্ক্রিয় প্রায়। একই অবস্থা ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলররা। হাতেগোনা কয়েকজন কাউন্সিরর করোনা রোধে প্রচার-প্রচারণা ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করলেও তা তেমন কোনো সারা ফেলতে পারেনি। তবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম। তারা করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নানামুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করছেন। এর আগে গত বছর মার্চে বাংলাদেশে আঘাত করে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস।

এমন অবস্থায় রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে কাজ শুরু করেন ঢাকার দুই সিটির সাধারণ কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলর, মহানগর উত্তর-দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং ঢাকার ২০ জন সাংসদ। তারা নিজ উদ্যোগে রাজধানীর পাড়া-মহল্লায়, রেলস্টেশন, বাসস্টেশন, বিভিন্ন জনসমাগম স্থানে করোনার সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করেন। ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালায়। জনপ্রতিনিধিরা নিজ নিজ উদ্যোগে করোনার সুরক্ষাসামগ্রী মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও পিপিই বিতরণ করেন। অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি সরকারের বরাদ্দের পাশাপাশি ব্যক্তিগত অর্থ দিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। করোনাকালীন সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এমন মানবিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকায় ঢাকার সকল জনপ্রতিনিধিদের প্রশংসা করে সরকার। পরিস্থিতি কিছুদিন স্বাভাবিক থাকলেও বর্তমানে বাংলাদেশে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। প্রতিদিন মৃত্যু ও সংক্রমণের রেকর্ড ছাড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। দেশে চলছে লকডাউন। এমন পরিস্থিতিতে রাস্তায় নামছে সাধারণ মানুষ। এদের অধিকাংশই মানছে না শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি। দিনমজুর, রিকশাচালক, ব্যবসায়ী, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী কারো মাঝে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। রাজধানীর অলিগলি, পাড়া-মহল্লায় আড্ডা দিচ্ছেন হরহামেশা। তারা কেউ সরকারের দেয়া ১৮ দফা নির্দেশনা মানছে না। দেশের এমন পরিস্থিতিতে নীরব জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। তারা ব্যক্তিগত উদ্যোগ তো দূরের কথা, সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। ঘরে বসে সময় পার করছেন ঢাকার অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থে জনপ্রতিনিধিরা সব সময় সবার আগে এগিয়ে আসে। করোনার এই পরিস্থিতির মধ্যে সকল জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে। সকলের স্বাস্থ্যবিধির নিশ্চিত করার পাশাপাশি অসহায়দের খাদ্যসামগ্রী নিশ্চিত করতে হবে। পরিস্থিতি বুঝে কাজ করতে হবে। সব সময় সরকারের দিকে চেয়ে থাকলে চলবে না। নিজেদের উদ্যোগেও কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, করোনার এই সময়েও জনপ্রতিনিধিরা নিষ্ক্রিয়।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সবার আগে ঢাকায় করোনার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এজন্য রাজধানীর প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর, দুই মেয়র এবং স্থানীয় সাংসদদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে। বিশেষ করে সরকারের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে নিজ নিজ উদ্যোগে লিফলেট বিতরণ, মাইকিং করা, মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা, শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, বিনাপ্রয়োজনে বাইরে না আসতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। করোনায় অসহায়, দরিদ্র, শ্রমজীবী, দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে করছেন ত্রাণ বিতরণ করতে হবে।

লেখক ও গবেষক আফসান চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, করোনায় সাধারণ মানুষের মাঝে জনসচেতনতায় সৃষ্টি করতে সরকার সফল হয়নি। সরকার ও জনপ্রতিনিধিরা এটা বেশি গুরুত্ব মনে করেনি। কেউ কেউ জানেই না কিভাবে জনসচেতনতা করতে হয়। সরকার যদি কঠোরভাবে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতো। তাহলে করোনার সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হতো। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের জনসাধারণ মনে করে, তারা সবকিছু্ই জানেন এবং বোঝেন। করোনার এমন পরিস্থিতিতেও তারা এই বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারেনি। এটা খুবই দুঃখজনক। তিনি আরও বলেন, আমাদের সকলকে বুঝতে হবে- আমাদের পরিবার রয়েছে। আত্মীয়স্বজন রয়েছে। দিন শেষে আমরা সবাই বাড়ি ফিরি। তাই বয়স্কদের কথা চিন্তা করেই সবাইকে সতর্ক হতে হবে।

আমারসংবাদ/জেআই