Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

‘আদালত বন্ধ বা খোলা রাখার এখতিয়ার প্রধান বিচারপতির’

নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল ১৫, ২০২১, ০৮:১০ পিএম


‘আদালত বন্ধ বা খোলা রাখার এখতিয়ার প্রধান বিচারপতির’

আদালত বন্ধ বা খোলা রাখার এখতিয়ার প্রধান বিচারপতির বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক আইনমন্ত্রী সিনিয়র অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর জানাজা শেষে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতে আদালতের কার্যক্রম নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে আবদুল মতিন খসরুর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আদালত বন্ধ বা আদালত খোলা রাখার যে এখতিয়ার সেটা প্রধান বিচারপতির, আমার নয়। কিন্তু আমার বিশ্বাস করোনা ভাইরাসের তীব্রতা বা করোনা ভাইরাস যদি কমে যায় এসব বিবেচনা করে প্রধান বিচারপতি সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। আবদুল মতিন খসরু সম্পর্কে আইনমন্ত্রী বলেন, খসরু সাহেবের সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৬৯ সাল থেকে। তখন তিনি ছাত্রলীগ করতেন। সিনিয়র আইনজীবী আব্দুল মতিন খসরু সাহেব একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি পাঁচবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী যখন প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন তখন তাকে ছয় মাসের জন্য প্রতিমন্ত্রী করেছিলেন। তারপর ৯৭ সালের জানুয়ারিতে তাকে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী করা হয়েছিল। ব্যক্তিগতভাবে তিনি আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধার।

তিনি আমাকে স্নেহ করতেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সময় তিনি তখন মন্ত্রী ছিলেন, আমরা যেখানে কাজ করতাম, কাজ শেষ করে তিনি সন্ধ্যাবেলা আসতেন, আমাদের কাজ শেষ হলে তিনি বাড়ি ফিরতেন। ১৯৯৬ সালে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিলের সময় জাতীয় সংসদে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন সেটা মনে রাখার মতো। সেদিন তিনি মানুষকে কাঁদিয়ে ছিলেন। ‘সবচেয়ে বড়া কথা, তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস ছিলো। তিনি আইনজীবী হিসেবে একজন মেধাবী এবং অত্যন্ত প্রজ্ঞাবান আইনজীবী ছিলেন। তার মৃত্যুতে আইন অঙ্গনে একটা বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। আমি জানি না এই শূন্যতা পূরণ হবে কি-না। তার মৃত্যুতে আমি অত্যন্তভাবে মর্মাহত হয়েছি। আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।’ এর আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে আবদুল মতিন খসরুর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান বিচারপতিসহ জানাজায় অংশ নিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিরা, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, আইনজীবী ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতারা। জানাজার আগে আবদুল মতিন খসরুর ছেলে আবদুল মুনায়েম ওয়াসিফ তারা বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চান। জানাজা শেষে এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। পরে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের পক্ষ থেকে তার কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। প্রধান বিচারপতি আপিল বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ে, ডেপুটি স্পিকারের পক্ষে, আওয়ামী লীগের পক্ষে মাহবুব-উল আলম হানিফ, আইনমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের আইন উপ-কমিটি, আবদুল মতিন খসরু অ্যাসোসিয়েটস, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ ও ঢাকা আইনজীবী সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। জানাজা শেষে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কয়েক দফা জানাজা শেষে নিজ গ্রামে দাফন করা হবে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে আবদুল মতিন খসরু ইন্তেকাল করেন।

জ্যেষ্ঠ এ আইনজীবী ২০২১-২২ সেশনের (মার্চে অনুষ্ঠিত) নির্বাচনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। নির্বাচনের পর গত ১৫ মার্চ তিনি করোনা টেস্ট করান। টেস্টে পজেটিভ আসার পর ১৬ মার্চ তিনি সিএমএইচে ভর্তি হন। ২৮ মার্চ তাকে আইসিইউতে হস্তান্তর করা হয়। অবস্থার উন্নতি হলে ৩১ মার্চ তাকে কেবিনে নেয়া হয়। পর দিন ১ এপ্রিল তার করোনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসে। এর মধ্যে ফের তার অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে নেয়া হয়। সর্বশেষ ১৩ এপ্রিল আবদুল মতিন খসরুকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। উচ্চ আদালতের এ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের মিরপুর গ্রামে ১৯৫০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। ১৯৯১ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে কুমিল্লা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তারপর ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৯ সালে মোট পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে সপ্তম সংসদে (১৯৯৬-২০০১) আইনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমান সংসদে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে ছিলেন।

আমারসংবাদ/জেআই