Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

মা-বাবার শেষ ঠিকানা কি বৃদ্ধাশ্রম

আখতার-উজ-জামান

এপ্রিল ২১, ২০২১, ০৮:০০ পিএম


মা-বাবার শেষ ঠিকানা কি বৃদ্ধাশ্রম

(প্রথম পর্ব) চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির ফলে মানুষের আয়ু বাড়ছে। বাড়ছে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সংখ্যা। বাড়ছে তাদের সমস্যাও। সমাজের পরিবর্তিত মূল্যবোধ, পারিবারিক অবহেলা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাংসারিক অশান্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রবীণ-প্রবীণাদের বাড়িতে থাকার পথে বাধা। বিবেকহীন সভ্যতায় যদি আদিবাসীরা একত্রিত হয়ে তাদের চলাফেরায় ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে, তাহলে এখনকার বিবেকবান সভ্যতায় কেন রেষারেষি? কেনা বা মানব সম্প্রদায়ের মধ্যে হানাহানি কিংবা কিছু সময়ের জন্য বেঁচে থাকার লড়াই! এই চেতনার বিকাশকে আমরা কেন নিয়ে যাই বর্বরোচিত নিজেদের তৈরি করা সময়ের কালো অধ্যায়ে। আসলে কথাগুলোর মূল ভাবনা এটাই যে, মানবজাতি, যাকে সৃষ্টির সেরা জীব বলা হয়। এ মানব সম্প্রদায়ে হূদয়-মস্তিস্কে কি ঘটছে, যেখানে তারা বিবেকহীন সভ্যতাকেও হার মানিয়ে দেয়। আমরা মানুষ- আমার মতে যার মূল অর্থ মান সম্মান আর যার মধ্যে হুঁশ বেশি তাড়া করে। এখানে হুঁশকে বিবেকহীন বা বিবেক-বুদ্ধির ভাবকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। যখন মানুষ নিজস্ব সত্তায় তার চিন্তা-চৈতন্যকে প্রকাশ করে একটি পারিবারিক বন্ধন দিয়ে; সেখানে রয়েছে মা-বাবা নামক দুটি শব্দ। এইখান থেকে উদ্ভব মাতা-পিতা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্তানাদি, দাদা-দাদি, নানা-নানিসহ বিভিন্ন পারিবারিক শ্রেণিবিন্যাস। আমাদের দেশে প্রতিদিনই বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মানুষের গড় আয়ু ছিলো ৫০ বছর। তখন ৫০-এর মধ্যেই মানুষের জীবনের সমাপ্তি ঘটত। শুধু ৪ শতাংশ মানুষ ৬০ বছর কাল আয়ু পেতো। দেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু এখন ৭২ বছর ৭ মাস। ১৯৭১ সালে এ দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিলো ৪৬ বছর। ৫০ বছরে এ দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে ২৬ বছর ৭ মাস। স্বাধীনতার পর প্রতি এক বছরে এ দেশের মানুষের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল প্রায় ছয় মাস করে বেড়েছে। জনস্বাস্থ্যবিদরা মনে করেন, গত ৫০ বছরে স্বাস্থ্য খাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি। মানুষ বেশি দিন বাঁচতে চায়। এখন এ দেশের মানুষের বেশি দিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়েছে।

বিশ্বের অনেক দেশেই ২০৩০ সাল নাগাদ মানুষের প্রত্যাশিত আয়ু বাড়বে। কোনো কোনো স্থানে তা ৯০ বছর ছাড়িয়ে যাবে। আর এ ক্ষেত্রে বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে দক্ষিণ কোরিয়া। তখন সেখানে নারীদের প্রত্যাশিত আয়ু ৯০ বছরের কিছু বেশি হবে। অন্যদিকে, সে সময় প্রত্যাশিত গড় আয়ুর ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সবার নিচে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমনটিই বলা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সাল নাগাদ মানুষের গড় আয়ু হবে ৭৭ বছর। আর বিশ্বে ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে মানুষের সংখ্যা হবে শতকরা ২০ ভাগ।

জাতিসংঘের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা প্রায় দুইগুণ হবে। আর ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় তিনগুণ। ১৯৮১ সালের আদম শুমারিতে দেখা গেছে বাংলাদেশে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা ছিলো ৪০ লাখ ৯০ হাজার। ১৯৯১ সালে এই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৬০ লাখে। আর বর্তমানে বাংলাদেশে ১ কোটি ৩০ থেকে ৩৫ লাখ প্রবীণ রয়েছে। ২০২৫ সালে প্রবীণের সংখ্যা ১০ শতাংশ বেড়ে প্রায় ২ কোটিতে দাঁড়াবে। বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার সাড়ে ৭ ভাগই প্রবীণ। ২০২৬ সালে এই সংখ্যা দাঁড়াবে ১৫ ভাগে। প্রবীণ জনসংখ্যার বার্ষিক গড় বৃদ্ধির হার প্রায় ৪ দশমিক ৪১ ভাগ। এই হার অব্যাহত থাকলে আগামী ৫০ বছরে উন্নয়নশীল দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫ ভাগই হবে প্রবীণ জনগোষ্ঠী। এ পরিসংখ্যান থেকে প্রকাশ পাচ্ছে প্রবীণ মানুষের লাইন আগামীর পৃথিবীতে দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এই বয়সে এসে প্রবীণরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এজন্য অনেকে বার্ধক্যকে একটি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আসলে মানুষের প্রবীণ জীবন আর শেষ জীবনের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য একটা মিল রয়েছে। একটি শিশুকে বাবা-মা যেমন করে লালন পালন করে তেমনি একজন প্রবীণকেও শিশুর মতো লালন পালন করতে হয়। একটি শিশু আর একজন প্রবীণ অসহায়ত্তের দিক থেকে এক রকম হলেও তাদের মধ্যে অনেক বিষয় পার্থক্য রয়েছে। একটি শিশু উদীয়মান সূর্যের মতো প্রখর হতে থাকে আর একজন প্রবীণ অস্তমিত রবির মতো ক্রমশই দুর্বল হয়ে পড়েন। তাই একটি শিশুকে বাবা-মা যেভাবে লালন-পালন করতে পারেন একজন প্রবীণকে সেভাবে লালন পালন করতে পারেন না বা করেন না। এর পেছনে আরও একটি কারণ রয়েছে। তা হচ্ছে একটি শিশুকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতে পারেন কিন্তু একজন প্রবীণকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার কিছু নেই। শুধুই দায়িত্ব পালন। এ দায়িত্ব পালনে অনেকে অনীহা প্রকাশ করেন। তাই প্রবীণরা অনেক সময় প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাছাড়াও কিছু সংগত কারণেই প্রবীণরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তা হলো অর্থনৈতিক ও পারিবারিক। অর্থনৈতিক কারণগুলোর মধ্যে দারিদ্র্য যেমন রয়েছে তেমনি অর্থ উপার্জনেরও একটি দিক রয়েছে। দারিদ্র্যের প্রভাব যেমন পরিবারে পড়ে  তেমনি অর্থ উপার্জনের প্রভাবও পরিবারে পড়ে। পরিবারের এসব সমস্যার প্রভাব গিয়ে পড়ে প্রবীণদের ওপর। প্রবীণরা জীবনের শেষ অধ্যায়ে এসে পরিবারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। দেখা যায় অনেকের সেই শেষ আশ্রয়টুকু  থেকেও বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করতে হচ্ছে। কেননা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে নগরায়ন শিল্পায়ন। ফলে পরিবারে সৃষ্টি হয়েছে ভাঙন। শিল্পায়ন ভেঙে দেয় জমিদারি, রাজত্ব। পরিবর্তন আসে জীবন ও কর্মক্ষেত্রে। গ্রাম ছেড়ে অনেক মানুষ বিশেষ করে তরুণরা শহরে চলে আসে। গ্রামে ক্ষেত খামারের কাজ ছেড়ে শহরে এসে বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় কাজ নেয়। আর এ থেকেই শুরু হয় বিচ্ছিন্নতা বা পরিবারে ভাঙন। আর ভাঙনের প্রভাব পড়েছে প্রবীণদের ওপর। প্রবীণদের দেখা দেয় আর্থিক দীনতা, শারীরিক অসুস্থতা। এ অবস্থায় তারা পারিবার ও সমাজে অবহেলার ও বঞ্চনার সম্মুখীন হচ্ছেন। বিশেষ করে যেসব প্রবীণ নারীদের স্বামী ও সন্তান নাই, নিজের সম্বল বলতে তেমন কিছু নাই তাদের জীবন আরও বিভীষিকাময়। এর চেয়েও ভয়াবহ হচ্ছে প্রবীণদের একাকিত্ব জীবন। এ সময় বলতে গেলে কেউই তাদের পাশে দাঁড়াতে চান না। প্রবীণদের এ সমস্যা পৃথিবীর সব দেশেই রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইংল্যান্ডে এক দম্পতি নিঃসঙ্গতার কারণে আত্মহত্যা করেছেন। তাদের উভয়েরই বয়স ছিলো নব্বই ঊর্ধ্ব। তাদের দাম্পত্য জীবন ছিলো সত্তর বছরের। এই দীর্ঘ সময় তারা একে অপরকে ছেড়ে একটি রাতও যাপন করেননি। কিন্তু জীবনের শেষ সময় এসে সন্তানরা তাদের এই বন্ধনকে পৃথক করতে চাইলো। অর্থাৎ তাদের দেখা-শোনার মতো কোনো লোক না থাকায় তাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে চাইল। বৃদ্ধাশ্রমে তাদের দুজনকে আলাদা থাকতে হবে। এই প্রবীণ দম্পতি কোনোভাবেই তা মেনে নিতে পারছিল না। তাই দুজনে হাতে হাত রখে নিজেদের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছিল। তাদের এ আত্মহত্যা ছিলো শুধু নিঃসঙ্গতার কারণে। এলভিন টপলার তার থার্ড ওয়েভ বা তৃতীয় তরঙ্গ নামের বইতে লিখেছেন, ‘নিঃসঙ্গতা এখন সর্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে যা, বিশ্বাস করার মতো নয়’। সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্কের মতো পশ্চিমা দেশগুলোতে এখন নিঃসঙ্গ বৃদ্ধদের পক্ষে স্লোগান উঠেছে— প্রবীণদের কোণঠাসা অবস্থা থেকে মুক্তি দাও। এই স্লোগানের দাবি মেটাতে সেসব দেশে বৃদ্ধদের জন্য বৃদ্ধাশ্রম গড়ে উঠেছে। পরিবার থেকে বহুদূরে এই বৃদ্ধনিবাসে বৃদ্ধদের রাখা হয়। মৃত্যুর প্রহর গণনাকারী এই বৃদ্ধরা পারিবারিক পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। সেই হতাশা থেকে অনেকে আত্মহত্যাও করেন। জাপানে এরকম এক নিঃসঙ্গ নারী একাকি তার বাড়িতে বাস করতেন। সেই নারীর মৃত্যুর প্রায় দুই যুগ পরে তার কোনো দূরাত্মীয় তার কঙ্কাল উদ্ধার করে। এভাবেই বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর প্রবীণরা অবহেলা ও নিঃসঙ্গতার শিকার হচ্ছেন। আবার কোনো কোনো দেশে প্রবীণদের যথাযথ মর্যাদা দেয়া হচ্ছে। তাদের পেনশন ভাতা, স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। পরিবারকে তাদের যত্ন নিতেও উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সে তুলনায় বাংলাদেশের প্রবীণরা অনেকটাই সুখি। কেননা বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় পরিবারিক বন্ধনটা খুবই শক্তিশালী। শুধু পরিবারে নয়, সমাজেও বৃদ্ধজনের বেশ সম্মান শ্রদ্ধা রয়েছে। তবে পশ্চিমা সমাজের প্রভাব বাংলাদেশেও অনেক ক্ষেত্রে বিরাজ করেছে। বাংলাদেশের পারিবারিক সংস্কৃতি অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে। এক সময় দেখা গেছে আমরা দাদি-নানির মুখে গল্প শুনে ঘুমিয়েছি। তাদের শাসনে বড় হয়েছি। আর সেখানে এই প্রজন্ম বড় হচ্ছে যান্ত্রিক জীবনের মধ্যে। তারা ভুলে যাচ্ছে পারিবারিক সম্প্রীতি। হারিয়ে ফেলেছে পারিবারিক শিক্ষা। কেননা বাংলাদেশেও ভেঙে গেছে একান্নবর্তী পরিবার। এক পরিবার ভেঙে এখন কয়েক পরিবার হয়েছে। যাকে আমরা ছোট পরিবার বলি। অনেকে মনে করেন ছোট পরিবার মানেই সুখি পরিবার। আসলে কতটা সুখি তা বাস্তবে দেখা যায়। বাংলাদেশেও এই পরিবারের ভাঙন শুরু হয়েছে নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে। বাবা-মাকে গ্রামে বা অন্যত্র রেখে সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে কর্মক্ষেত্রে বাস করতে হচ্ছে। সন্তানের ইচ্ছা থাকলেও অনেক প্রবীণ গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে থাকতে চান না। ফলে বাবা-মা একা হয়ে যাচ্ছেন। তারা সঙ্গী খুঁজে পাচ্ছেন না। সব পরিবারেই দেখা যাচ্ছে সন্তানরা এক সময় বাবা-মায়ের কাছ থেকে দূরে সরে যান। তাদের সঙ্গী হন নাতি-নাতনিরা। তখন নবীন আর প্রবীণের মাঝে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু পরিবারের ভাঙনের ফলে তাদের সেই সম্পর্ক আর গড়ে ওঠে না। উভয়ই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। আবার এমনও কিছু চিত্র দেখা যায় যেখানে ছেলে-মেয়ের সুখ কিংবা সংসারের ঠিকমতো ভরণপোষণ দেয়ার জন্য ভিটে-বাড়ির সম্পদ বিক্রি করে হলেও অর্থনৈতিক সচ্ছলতার জন্য বিদেশ কিংবা ব্যবসার কাজে নিজেকে তৈরি করে নেন। সব গুছিয়ে এনে বাবা যখন সন্তানদের কিংবা স্ত্রীকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যান তখন আর কি বলার থাকে। সন্তানরা তো ঠিক স্বাবলম্বী হয়েও কিন্তু মায়ের কাছে থাকতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। কারণ তাদের চিন্তা হলো আমরা এখন পুরোপুরি সচ্ছল, তাই আরও সচ্ছল হতে হলে বিদেশ কিংবা অন্য কোথাও থেকে আরও বেশি উপার্জন করতে হবে। সেক্ষেত্রে সন্তান তার স্ত্রী ও সন্তানদের কাছ থেকে হতভাগা মাকে রেখে বিদেশে পাড়ি দিয়ে থাকেন। তখন মা হয়ে যান নিঃস্ব। কখন সন্তান আসবে? আর নাতি-নাতনিদের মুখ দেখে আনন্দিত হবে। এটাই চিরচরিত রূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমান সমাজব্যবস্থায়। আবার দেখা যাচ্ছে বাবা-মা দুজনই চাকরি করেন। কর্মময় জীবনে সন্তানদের লালন পালন, দেখা শোনার সময় পাচ্ছেন না। সন্তান বড় হচ্ছে কাজের বুয়ার কাছে। ফলে সে শিখছে কাজের বুয়ার সংস্কৃতি। এদিক থেকে কিন্তু একান্নবর্তী পরিবারগুলো বেশ সুখে রয়েছে। তবে একান্নবর্তী পরিবারের নাতি-নাতনিরাও যখন ছোট থাকে তখন প্রবীণদের সঙ্গী হয়। খেলাধুলা ও গল্প বলার বিষয়টা তাদের জীবনে এক ধরনের প্রভাব ফেলে। কিন্তু ওই শিশু যখন কৈশোরে কিংবা যৌবনে পদার্পণ করে তখন আর তাদের দাদা-দাদির প্রয়োজন পড়ে না। এ সময় প্রবীণদের সাহচর্যে তারাও বিরক্ত বোধ করে। প্রবীণদের ধ্যান-ধারণা মূল্যেবোধ তাদের ধ্যান-ধারণা মূল্যবোধের সঙ্গে বিপরীতমুখী হয়ে ওঠে। তখন আর প্রবীণদের কথা কেউ শুনতে চায় না। উল্টো অভিযোগ করা হয় প্রবীণরা বাঁচাল। বেশি কথা বলে। সারা দিন বকবক করে। কান ঝালাপালা করে দেয়। একজন প্রবীণের দীর্ঘ জীবনের হাজারো অভিজ্ঞতা নিয়ে অনেক কথা বলার থাকে। তবুও দেখা গেছে একজন প্রবীণ একটি শিশুর চেয়ে কম কথা বলেন। আমাদের সমাজে কিংবা পরিবারে সবাই শিশুদের মুখের কথা শুনে আনন্দ পান। এককথা বারবার শুনেও বিরক্ত হন না। আর প্রবীণদের কথা শোনা দূরে থাক তাদের কথা বলতেই নিষেধ করা হয়। প্রবীণরা অসহায়ের মতো নীরব থাকেন। তাছাড়াও নানা ভাষায় প্রবীণকে কটাক্ষও করা হয়। তখন দেখা যায় প্রবীণের এই নিঃসঙ্গতার সঙ্গে মানসিক সমস্যাও যোগ হয়। আর তখনই সমাজের বিত্তবান কিংবা সুহূদরা মনে করেন এখনই সময় বৃদ্ধাশ্রমের মতো জায়গা বেছে নিতে এই প্রবীণদের দেখভাল করার জন্য।

লেখক : গবেষক, সাংবাদিক

আমারসংবাদ/জেআই