মাহমুদুল হাসান
এপ্রিল ২৮, ২০২১, ০৮:১৫ পিএম
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় প্রয়োজন সচেতনতা। জনস্বাস্থ্যবিদরা জোর দিচ্ছেন স্বাস্থ্যবিধি আর চিকিৎসাসেবায়। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত ওষুধ, মেডিকেল সামগ্রী ও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি। দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং অন্যান্য সরকারি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ওষুধ, মেডিকেল সামগ্রী ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে থাকে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি)। করোনাকালে সরকারের এই প্রতিষ্ঠানের কাজের পরিধি আরও বেড়ে গেছে। গত বছর সরকারের এই প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওঠে চরম দুর্নীতির অভিযোগ। তখন প্রতিষ্ঠানটিতে হয় ব্যাপক রদবদল। গত বছর মে মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশ জাতীয় ইউনেস্কো কমিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল (অতিরিক্ত সচিব) আবু হেনা মোরশেদ জামানকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিএমএসডির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় দিনরাত কাজ করছেন সিএমএসডির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সারা দেশের সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতেই এমন হাড়ভাঙা পরিশ্রম। বর্তমান পরিচালক দায়িত্বগ্রহণের পর সিএমএসডি পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন। অল্পদিনেই ঘটে আমূল পরিবর্তন। দীর্ঘদিন ধরে সিএমএসডিতে একটি ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট ও গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান জিম্মি করে রেখেছিল। ভেঙে দেন সিএমএসডির কেনাকাটায় গড়ে ওঠা দীর্ঘদিনের শক্তিশালী ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট। ফিরিয়ে আনেন কেনাকাটায় স্বচ্ছতা। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার যাচাই করে কেনা হয় পণ্য। টেকনিক্যাল কমিটির পর্যালোচনায় পরিচালিত হয় কেনাকাটা ও পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ। অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করে বিভিন্ন পণ্যের মূল্য কমিয়ে সরকারের বিপুল অর্থ সাশ্রয় হয়েছে। ইতোমধ্যে একচেটিয়া আধিপত্যের অবসান ও সরকারি ক্রয়নীতির বাস্তবায়নে ১০ মাসে প্রায় ১৯০ কোটি টাকার বেশি সাশ্রয় হয়েছে।
নতুন প্রশাসন দায়িত্বগ্রহণের পর গত বছর জুন থেকে এখন পর্যন্ত করোনা মোকাবিলায় ব্যবহূত বিভিন্ন স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী ও চিকিৎসা সরঞ্জামের সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখা হয়েছে। এমনকি এসব পণ্য ও সামগ্রীর মান নিয়ে দেশের কোথাও কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়নি। পর্যাপ্ত আরটিপিসিআর টেস্টিং কিট মজুদ রয়েছে। প্রতিনিয়ত আরও মজুদের লক্ষ্যে সংগ্রহ করা হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় মজুদ রাখা হয়েছে অন্তত এক বছরের করোনা মোকাবিলায় ব্যবহূত মানসম্মত সামগ্রী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন লাইন ডিরেক্টরের আওতায় দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা পণ্যসামগ্রী দ্রুত বিতরণের জন্য বরাদ্দ তালিকা প্রদানে তাগাদা প্রদান করা হয়। ইতোমধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা ২০০ মোটরসাইকেল, সাধারণ অ্যাম্বুলেন্স, কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্স, এক্সরে মেশিন বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা হয়েছে।
সিএমএসডি একটি কেপিআই স্থাপনা। তার নিরাপত্তা জোরদার করতে সংযোজন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। পুরাতন মাল বিতরণ করায় সিএমএসডির স্টোরের সক্ষমতা এখন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। জনসম্পৃক্ততা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান পরিচালক সিএমএসডির ফেসবুক পেইজ ও ওয়েবসাইট (.িপসংফ.মড়া.নফ) চালু করেন। ইতোমধ্যে চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা এবং পুষ্টি খাতের উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সিএমএসডির সাংগঠনিক ও জনবল কাঠামোসহ প্রতিষ্ঠানিক সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বরাবর অনুরোধ করা হয়েছে। পঞ্চম তলা সিএমএসডির স্টোর কাম অফিস ভবন ইতোমধ্যে উন্মুক্ত হয়েছে। সেখানে মনোমুগ্ধকর মুজিব কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। নিজেদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হচ্ছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধাচারের জন্য সবাইকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
এসব বিষয়ে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, প্রতিষ্ঠানকে ভালোবাসলে সেখানে স্বচ্ছতা ও নিয়মতান্ত্রিকতা ফিরে আসবেই। সিএমএসডির প্রতিটি মানুষ এখন প্রতিষ্ঠানকে ভালোবেসে কাজ করেন। তাই গৌরবে ফিরেছে সিএমএসডি। আমরা সব অবৈধ সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে কাজ করছি। প্রতিযোগিতামূলক বাজার থেকে মানসম্মত পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় করতে সক্ষম হচ্ছি। এ ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, করোনা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সারা দেশে সাপ্লাই চেইন ঠিক রয়েছে। প্রতিনিয়ত প্রয়োজনীয় পণ্য মজুদ করা হচ্ছে। সিএমএসডিতে এখন যে পণ্য মজুদ রয়েছে আগামী এক বছরেও করোনা মোকাবিলায় কোনো বেগ পেতে হবে না।
আমারসংবাদ/জেআই