Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বদলে গেছে রাজনীতি

রফিকুল ইসলাম

এপ্রিল ২৯, ২০২১, ০৮:১৫ পিএম


বদলে গেছে রাজনীতি
  • নেই মাঠের আন্দোলন-সংগ্রাম, মিছিল-মিটিং
  • ফাঁকা পার্টি অফিস, নেতাদের বাসায় নেই কর্মীদের আনাগোনা
  • ঘরবন্দি আওয়ামী লীগ-বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম
  • মানুষের প্রয়োজনেই আমাদের রাজনীতি -কাজী জাফর উল্লাহ, প্রেসিডিয়াম সদস্য, আওয়ামী লীগ
  • মানুষের কল্যাণেই তো রাজনীতি -আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি
  • মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছেনি অধিকাংশ দল -মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সভাপতি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি

মাঠের রাজনীতিতে নেই আন্দোলন-সংগ্রাম এবং মিছিল-মিটিং। নেই কোনো দলের সভা-সমাবেশ। ফাঁকা আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলগুলোর পার্টি অফিস। নেতাদের বাসাবাড়িতে নেই কর্মীদের আনাগোনা। করোনার কারণে সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এখন ঘরবন্দি। লড়াই এখন জীবিকা-চিকিৎসা ও জীবন বাঁচানোর। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি— দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণেই রাজনীতি। তাই মাঠের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকলেও আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো সক্রিয় মানবিকতার রাজনীতিতে। ফলে প্রতিদিন ভার্চুয়ালি চলছে একে অপরের বাগযুদ্ধ। করোনার এই পরিস্থিতিতে বদলে গেছে রাজনীতির ছক।

সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশে শুরু হয় করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। করোনার সংক্রমণ রোধ, স্বাস্থ্যবিধি এবং দলীয় নেতাকর্মীদের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে দৈনন্দিন সাংগঠনিক কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ দেশের শীর্ষপর্যায়ের রাজনৈতিক দলগুলো। এ অবস্থায় বন্ধ হয়ে যায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সরকারবিরোধী সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং, আন্দোলন-সংগ্রাম। দৈনন্দিন কর্মসূচি স্থগিত হওয়ায় ঘরবন্দি হয়ে যায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির মাঠের রাজনীতি। এরপর থেকেই দলীয় পার্টি অফিস ও সিনিয়র নেতাদের বাসাবাড়িতে কমে গেছে নেতাকর্মীদের আনাগোনা। আওয়ামী লীগ-বিএনপির সিনিয়র নেতারা প্রতিদিন কথা বলছেন ভার্চুয়াল মাধ্যমে। করোনার কারণে মাঠে রাজনীতি না থাকলেও সামাজিক মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে যোাগাযোগ রাখছেন বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা। শুধু তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ নয়, বর্তমান করোনার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিন গণমাধ্যমে কথা বলছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের নেতারা। তারা একে অপরকে দোষারোপের রাজনীতিতেও ব্যবহার করছেন ভার্চুয়াল মাধ্যম।

আ.লীগ-বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের দাবি, করোনার কারণে মাঠের আন্দোলন-সংগ্রাম, মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশ ও দৈনন্দিন কর্মসূচি স্থগিত হলেও সক্রিয় আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলগুলোর মানবিকতার রাজনীতি। তারা সবাই দেশের অসহায়, দরিদ্র, শ্রমজীবী, দুস্থ, নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের পাশে রয়েছেন। তারা মনে করেন, দেশের কল্যাণে ও দেশের মানুষের কল্যাণেই রাজনীতি। কোনো রাজনৈতিক নেতা নিজের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য রাজনীতি করেন না। সবাই মানুষকে ভালোবেসে মানবিকতার রাজনীতি করেন। দেশের মানুষের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। নেতাদের কার্যক্রম ভালো হলে সাধারণ মানুষও তাদের মূল্যায়ন করে। তাই মাঠের রাজনীতিতে আন্দোলন-সংগ্রাম, মিছিল-মিটিং না থাকলেও মানবিকতার রাজনীতি করছেন সবাই। ফলে দুস্থদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণসামগ্রী, করোনার সুরক্ষাসামগ্রী, দুস্থদের চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। মানবিকতার এই রাজনীতি আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে দাবি তাদের। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা এমন দাবি করলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রায় নিষ্ক্রিয় ত্রাণ তৎপরতা ।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি- সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আমার সংবাদকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক নেতা নিজের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য রাজনীতি করেন না। সাবই মানুষকে ভালোবেসে মানবিকতার রাজনীতি করেন। প্রত্যেক রাজনৈতিক নেতা মনে করেন, দেশের মানুষের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। নেতাদের কার্যক্রম ভালো হলে সাধারণ মানুষও তাদের মূল্যায়ন করে। তখন নেতাদের প্রতিও সাধারণ মানুষের দায়বদ্ধতা থাকে। ভালো কাজ করলে প্রতিটি মানুষ রাজনৈতিক নেতাদের মূল্যায়ন করে। তিনি আরও বলেন, করোনার পরিস্থিতিতে যেভাবে মানবিকতার রাজনীতি আমাদের করা উচিত বা দরকার কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই সেই স্থানে পৌঁছাতে পারেনি। সবাই নিজ নিজ স্বার্থ বড় করেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, দেশের কল্যাণে ও দেশের মানুষের কল্যাণেই তো রাজনীতি। মাঠের রাজনীতিতে আন্দোলন-সংগ্রাম, মিছিল-মিটিং না থাকলেও বিএনপি মানবিকতার রাজনীতি করছে। করোনার শুরু থেকে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণসামগ্রী, করোনার সুরক্ষাসামগ্রী, দুস্থদের চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। মানবিকতার এই রাজনীতি আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, বর্তমান রাজনীতিতে এতই দুর্বৃত্তায়ন  সৃষ্টি হয়েছে, ফলে মানুষ ভুলেই গেছে রাজনীতি মানবিকতার জন্য হয়। এই অবস্থা থেকে ক্ষমতাসীনদের বেরিয়ে আসতে হবে। তাহলে মানবিকতার যে রাজনীতি হয়, মানুষ তার সুফল পাবে। 

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ আমার সংবাদকে বলেন, মানুষের প্রয়োজনেই রাজনীতি। আর মানুষের প্রয়োজনে রাজনৈতিক কৌশলের পরিবর্তন স্বাভাবিক বিষয়। করোনার সংক্রমণ থেকে প্রতিটি মানুষকে রক্ষা করতে আওয়ামী লীগ সকল কৌশল হাতে নিয়েছে। গুরুত্ব দেয়া হয়েছে করোনায় অসহায়, দরিদ্র, শ্রমজীবী, দিনমজুর ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর। তাদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়া হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী। জেলা, মহানগর, উপজেলাসহ সকল ইউনিটের নেতাকর্মীরা বৈশ্বিক মহামারি করোনার শুরু থেকেই ঐক্যবদ্ধভাবে মানুষের পাশে আছেন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ধান কেটে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন। তাই মাঠের রাজনীতিতে আন্দোলন-সংগ্রাম, মিছিল-মিটিং না থাকলেও মানুষের কল্যাণের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ যুক্ত আছে।

আমারসংবাদ/জেআই