Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কবলে গণপরিবহন

মে ৪, ২০২১, ০৭:৩০ পিএম


দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কবলে গণপরিবহন
  • দৈনিক ৫০০ কোটির হিসাবে মালিকপক্ষের ক্ষতি ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি
  • একই সময়ে শ্রমিকপক্ষের ক্ষতি ১৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি
  • এই ক্ষতি পোষাতে বেশ বেগ পেতে হবে, ক্ষতি হলেও সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি -খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, মহাসচিব, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি 
  • করোনায় দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবহন শ্রমিকদের যেনো আর্থিক অনুদান দেয়া হয় -হানিফ খোকন, সভাপতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ

দূরপাল্লার বাস বন্ধ রেখেই আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে ফের সড়কে নামছে  লকডাউনে বিধিনিষেধ মেনে বন্ধ থাকা গণপরিবহন। সরকার ঘোষিত চলমান লকডাউনের মধ্যে এ খাতে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এবং আগামী ১৬ মে পর্যন্ত ঘোষিত  লকডাউনে যে পরিমাণ ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব নয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। মালিকপক্ষ বলছেন, লকডাউনে তাদের দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা। সে হিসাবে আগামী ১৬ মে নাগাদ লকডাউনের এক মাস এগারো দিনে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। অন্যদিকে শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, একই সময়ে গড়ে একজন শ্রমিকের পারিশ্রমিক মাসিক সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা (কমবেশিও হতে পারে) করে ধরলেও সারা দেশে ৬০ লাখ শ্রমিকের মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। যদিও ক্ষতির কবলে পড়া এ খাত সংশ্লিষ্টদের জন্য সরকারের ছিলো না কোনো রকমের প্রণোদনা। বিশেষ করে সংকটে পড়া শ্রমিকদের পাশেও দাঁড়ায়নি কেউই। আর এতে করে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কবলেই পড়তে হচ্ছে পরিবহন খাত ও সংশ্লিষ্টদের। 

এদিকে লকডাউনকালীন সময়ে পুলিশি বাধার মুখেও সড়কে রিকশার সংখ্যা বেড়ে যেতে দেখা গেছে। করোনাভীতি ও পুলিশের কঠোর বাধা উপেক্ষা করেই জীবিকার তাগিদে সড়কে নামেন রিকশাচালকরা। গতকাল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মালিবাগ, মতিঝিল, পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে রিকশাচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পূর্বের তুলনায় সড়কে রিকশার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ পরিবহন শ্রমিকদেরও অনেকেই বাধ্য হয়েই রিকশা নিয়ে সড়কে নামা। একাধিক রিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়েই রিকশা নিয়ে সড়কে নেমেছেন তারা। তবুও পরিবার নিয়ে চলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যে পরিমাণ আয় ছিলো গণপরিবহনে রিকশা চালিয়ে সে পরিমাণ আয় করতে পারছেন না তারা।

ওয়েলকাম পরিবহনের হেলপার সুমন আমার সংবাদকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বাসায় খাবারের সংকট। অন্যসব চাহিদা বাদ দিলেও শুধু স্ত্রী ও তিন সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতেই রিকশা নিয়ে সড়কে নামতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। একই কথা বললেন যাত্রাবাড়ীতে তুরাগ পরিবহনের এক সুপারভাইজারসহ একাধিক রিকশাচালক। যাদের অধিকাংশই লকডাউনের পূর্বে বিভিন্ন গণপরিবহনের চালক-হেল্পার ও সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করতেন। বৃহস্পতিবার থেকে পুনরায় গণপরিবহন চালুর ঘোষণা এসেছে সরকার থেকে এমনটা জানালে তারা বলেন, এ আর নতুন কি, যেভাবে চালু হচ্ছে এ পদ্ধতিতেও আমাদের টিকে থাকা কঠিন। এ খবরে আমরা যতটা না আনন্দিত হওয়ার কথা তার চেয়েও বেশি দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছি যে রিকশাই চালাবো নাকি পরিবহনে ফিরে যাবো। কারণ ক্ষতি যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে এবং তা দীর্ঘমেয়াদি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি হানিফ খোকন আমার সংবাদকে বলেন, গণপরিবহনে ক্ষতি দুই রকমের— একটা মালিকপক্ষের ক্ষতি আরেকটা শ্রমিকপক্ষের ক্ষতি। চলমান লকডাউনে গড়ে একজন শ্রমিকের মাসিক ২০ হাজার টাকা করে পারিশ্রমিক ধরলেও সারা দেশে ৬০ লাখ শ্রমিকের মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। অথচ করোনাকালীন এই সময়ে শ্রমিকদের সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি কোনো রকমের আর্থিক অনুদান বা চালু করা হয়নি রেশনিং ব্যবস্থা (খাদ্যদ্রব্য)। তিনি বলেন, করোনার কারণে পরিবহন শ্রমিকরা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিগ্রস্ত পড়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যেক পরিবহন শ্রমিককে যেনো আর্থিক অনুদান দেয়া হয় এবং সরকার যেনো এজন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে- সরকারের প্রতি এমন আহ্বানও জানিয়েছেন হানিফ খোকন।  

এদিকে মালিকপক্ষ বলছেন, গত বছরের লকডাউনে দুই মাসের অধিক সময় পরিবহন বন্ধ থাকায় যে ক্ষতি হয়েছে, সে ক্ষতিই এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। চলতি লকডাউনেই আবার সেই ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে কয়েকগুণ। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ আমার সংবাদকে বলেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মালিকপক্ষের প্রতিদিন প্রায় ৫০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এর আগে একটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, আমাদের এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বেশ বেগ পেতে হবে। তবুও সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে তো আমরা যেতে পারি না। তাই ক্ষতি হলেও মেনে নিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা করোনার শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহন চালাতে। এখনো চাই সব স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পরিবহন চালাতে। সামনে ঈদ। ঈদের সময় মানুষ বাড়িতে যাবে। সব সময়ই ঈদের আগে আমাদের পরিবহনের বাড়তি চাপ থাকে। তাই এই সময়টায় পরিবহন বন্ধ থাকলে বাস মালিক ও শ্রমিক উভয়েরই ক্ষতি হবে। ইতোমধ্যে যে ক্ষতি হয়েছে তাও কাটিয়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব। আরও বেশি দিন পরিবহন বন্ধ থাকলে ক্ষতি কাটানো যাবে না। খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, সরকার যদি পরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয় তাহলে আমাদের পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা যথাযথভাবে সরকারের দেয়া নির্দেশনা মেনেই গাড়ি চালাবো। মালিক সমিতির পক্ষ থেকেও তেমন নির্দেশনা দেয়া হবে। অর্থাৎ আমরা সরকারের নির্দেশের বাইরে যাবো না।

উল্লেখ্য, গত রোববার গণপরিবহন চালুসহ তিন দফা দাবিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাস টার্মিনালে বিক্ষোভ মিছিল করেন পরিবহন শ্রমিকরা। এ সময় শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি-সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলেও অংশ নেয়।

আমারসংবাদ/জেআই