Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনই চলবে ট্রেন চলছে কর্মযজ্ঞ

আসাদুজ্জামান আজম

মে ৫, ২০২১, ০৭:৫৫ পিএম


পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনই চলবে ট্রেন চলছে কর্মযজ্ঞ

সারা দেশে আধুনিক রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ট্রেনের প্রাত্যহিক কার্যক্রমে আনা হয়েছে ডিজিটাল সুবিধা। ট্রেন চলাচলের খবরাখবর, ট্রেনের টিকিট ক্রয়, ট্রেনের ভাড়া, এসএমএস প্রাপ্তিসহ সব ধরনের সেবা এখন মিলছে প্রযুক্তির মাধ্যমে। আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা নিশ্চিত করে রেলওয়ে বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রেলওয়ে সূত্র মতে, সারা দেশে একটি নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও সুলভ সরকারি গণপরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর খাতটি এগিয়ে নিতে নানা ধরনের অগ্রাধিকারমূলক উদ্যোগ নেয়া হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম সেকশনের সিঙ্গেল লাইন অংশে ডাবল লাইন নির্মাণ, পুরাতন জরাজীর্ণ ট্র্যাক পুনর্বাসন, বন্ধ করে দেয়া রেললাইন পুনঃচালুকরণ, নতুন রেললাইন নির্মাণ, নতুন ইঞ্জিন ও কোচ সংগ্রহ, সিগন্যালিং সিস্টেম আধুনিকায়ন ইত্যাদি। বাংলাদেশ রেলওয়ের মোট ২৯৫৫.৫৩ কিলোমিটার রুট রয়েছে। গত ১২ বছরে ৩৩০.১৫ কিলোমিটার নতুন রেলসড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ২৪৮.৫০ কিলোমিটার মিটারগেজ রেললাইন ডুয়েলগেজে রূপান্তর হয়েছে। ১১৩৫.২৩ কিলোমিটার রেললাইন পুনর্বাসন/পুনঃনির্মাণ হয়েছে। ৯১টিন নতুন স্টেশন বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়েছে।

১৭৭টি স্টেশন বিল্ডিং পুনর্বাসন/পুনঃনির্মাণ হয়েছে। নতুন রেলসেতু নির্মাণ হয়েছে ২৯৫টি। ৬৪৪টি রেলসেতু পুনর্বাসন/পুনঃনির্মাণ হয়েছে। ৪৬টি লোকোমোটিভ সংগ্রহ হয়েছে। ২৭০টি যাত্রীবাহী ক্যারেজ যোগ হয়েছে। যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন হয়েছে ৪৩০টি। মালবাহী ওয়াগন যোগ হয়েছে ৫১৬টি এবং ৩০টি ব্রেক ভ্যান। মালবাহী ওয়াগন পুনর্বাসন হয়েছে ২৭৭টি।  সিগন্যালিং ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন ৯০টি স্টেশনে। ১১৭টি নতুন ট্রেন চালু হয়েছে। ৩৬টি রুট বৃদ্ধি পেয়েছে। তারাকান্দি-বঙ্গবন্ধু সেতু (পূর্ব) : ৩৫.০০ কিলোমিটার এবং পাবনা-মাঝগ্রাম : ২৫ কিলোমিটার নতুন রেলওয়ে সেকশন নির্মাণ হয়েছে। কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া (৭৫.৫০ কিলোমিটার) এবং পাঁচুরিয়া-ফরিদপুর (২৫ কিলোমিটার) বন্ধ রেলওয়ে সেকশন পুনঃচালু হয়েছে। ১০২টি বন্ধ রেলস্টেশনের কার্যক্রম চালু হয়েছে। রেলওয়ে সূত্র মতে, বাংলাদেশ রেলওয়ের বর্তমান মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার যোগদানের পর যেকোনো সময়ের চেয়ে রেলওয়ের কাজে নতুন গতি সঞ্চার হয়েছে। গ্রাহকসেবার মান বৃদ্ধিসহ প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিতে তৎপর রয়েছেন তিনি। তার অভিজ্ঞতা এবং কঠোর অবস্থানের কারণে রেলওয়ে সেবা এখন প্রতিটি নাগরিকের দোরগোড়ায়। গোটা প্রতিষ্ঠানকে স্বয়ংক্রিয় ও কম্পিউটারাইজড করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। রেল ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ, সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে দেশে নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী ও সাশ্রয়ী রেল ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিরোধ ও পরিবেশ দূষণমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে পরিবেশবান্ধব, জ্বালানি সাশ্রয়ী পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার।

বাংলাদেশ রেলওয়ের সার্বিক উন্নয়ন ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত সমৃদ্ধ, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার। সারা দেশে রেলপথ এবং স্টেশন অবকাঠামোগত উন্নয়নে লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রেলওয়ে। সিগন্যালিং এবং ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম এবং টেলিকম সিস্টেমকে আধুনিকীকরণ, নিরাপদ, দ্রুত এবং দক্ষ ট্রেন অপারেশন নিশ্চিত, আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কিত রোলিং স্টক, ট্র্যাক উপকরণ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য উপযুক্ত সিগন্যালিং সিস্টেম, রেলওয়ের জমি সম্পদ সঠিক পরিচালনার মাধ্যমে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশ রেলওয়েতে চলমান প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে— দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত  সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ, খুলনা থেকে মংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত), কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশনের পুনর্বাসন, ৭০টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ সংগ্রহ প্রকল্প (প্রথম সংশোধিত), ঢাকা-টঙ্গী সেকশনের তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত), আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর (প্রথম সংশোধিত), ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটসমূহের পুনর্বাসন ও মানোন্নয়ন (দ্বিতীয় সংশোধিত), বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটসমূহের পুনর্বাসন ও মানোন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত), রেলওয়ের জন্য মিটারগেজ ও ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ (প্রথম সংশোধিত), বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০০টি মিটারগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ, আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ  নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু, ভাঙ্গা জংশন (ফরিদপুর) থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, ঢাকা-চট্টগ্রাম ভায়া কুমিল্লা/লাকসাম দ্রুত গতির রেলপথ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং বিশদ ডিজাইন (প্রথম সংশোধিত), ঢাকা শহরের চতুর্দিকে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা কার্যক্রম, পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত মিটারগেজ রেলওয়ে লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর, মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ, চট্টগ্রাম পতেঙ্গায় প্রস্তাবিত বে-টার্মিনালে রেলওয়ে সংযোগের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, খুলনা-দর্শনা জংশন সেকশনে ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সিগন্যালিংসহ রেললাইন সংস্কার ও নির্মাণ, দর্শনা থেকে দামুড়হুদা এবং মুজিবনগর হয়ে মেহেরপুর পর্যন্ত নতুন ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিশদ ডিজাইন, চিলাহাটি এবং চিলাহাটি বর্ডারের মধ্যে ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ, বগুড়া থেকে শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন, সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত নতুন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ, জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প, সুনামগঞ্জ জেলা সদরে রেলওয়ে সংযোগের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং বিশদ ডিজাইন, আখাউড়া-সিলেট সেকশনের মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজ রেললাইনে রূপান্তর, গোবরা থেকে পিরোজপুর পর্যন্ত ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ এবং বাগেরহাটে রেলসংযোগ স্থাপনের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিশদ ডিজাইন।

চলমান প্রকল্পগুলো দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বলে রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে। আগামী বছর যখন পদ্মা সেতু চালু হবে একই দিনে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে মাওয়া প্রান্ত থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালু করার সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সেতুটির দুই পাড়েই রেলওয়ের বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার প্রতিনিয়ত প্রকল্পটির তদারকি করছেন। গতকাল কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করে রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন এমপি। এ সময় তিনি বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু, দেশের অনেক বড় অর্জন। এটি দেশের একটি বৃহৎ সামর্থ্য। পদ্মা সেতুতে সড়ক ও রেলপথ যুক্ত আছে। রেল অংশটি ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত ধরা আছে। তবে আগামী বছর পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনে মাওয়া প্রান্ত থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালু অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী দ্রুত কাজ চলমান রয়েছে।

আমারসংবাদ/জেআই