Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

ব্যাংক ও মিউচুয়াল ফান্ডের দাপট

এম এ আহাদ শাহীন

মে ৫, ২০২১, ০৭:৫৫ পিএম


ব্যাংক ও মিউচুয়াল ফান্ডের দাপট
  • লেনদেনে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধিসহ টানা পাঁচদিনের মতো হাজার কোটি   টাকার ঘর ধরে রাখলো

ঝিমিয়ে থাকা ব্যাংক খাত গত দুই কার্যদিবসে আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠার যে আভাস দিচ্ছিল, তা আরও স্পষ্ট হলো সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে। তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে রেকর্ড ডেটের জন্য লেনদেন বন্ধ ছিলো একটির। বাকিগুলোর মধ্যে একটির দর অপরিবর্তিত ছিলো। বাকি সবগুলোরও বেড়েছে।

গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত যে লভ্যাংশ বিতরণ করেছে তা অনেকটাই অভাবনীয়। অথচ মহামারির বছরে আয় কমে যাবে আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা এই খাতের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যাংকেই গত বছরের চেয়ে বেশি লভ্যাংশ ঘোষণার প্রস্তাব দিয়েছে। আর ব্যাংকের শেয়ার দরের তুলনায় নগদ লভ্যাংশ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এফডিআরের সুদহারের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ ব্যাংকে টাকা রাখলে যে হারে মুনাফা পাওয়া যায়, চলতি বছর ব্যাংকের শেয়ারধারীরা এর চেয়ে বেশি মুনাফা পেয়েছেন। তবে সেই তুলনায় লভ্যাংশ তলানিতে থাকলেও বিমা খাত ছুটছে গত ৫ এপ্রিলের লকডাউনের পর থেকে। কোনো কোনো কোম্পানির শেয়ার দর এক মাসে দ্বিগুণ হয়েছে, কোনোটির বেড়েছে তার চেয়ে বেশি। কিন্তু সবচেয়ে বেশি বাজার মূলধনের ব্যাংক ঝিমাতেই তাকে। তবে চলতি সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস গত সোমবার থেকেই এই খাতে নড়াচড়া দেখা যায়। পরদিন আরও বেশি আগ্রহী হয় বিনিয়োগকারীরা।

তবে টানা তৃতীয় দিনে এসে এই খাত নিয়ে যে চিত্র দেখা গেছে, তা সাম্প্রতিক ইতিহাসে বিরলই বলা যায়। লভ্যাংশ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রেকর্ড ডেটের কারণে ইবিএলের শেয়ার লেনদেন বন্ধ ছিলো এদিন। বাকি ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে উত্তরা ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দর বাড়েওনি, কমেওনি। বাকি ২৮টি ব্যাংকের দামই বেড়েছে। তবে সাধারণ চোখে দেখলে অবশ্য ব্র্যাক ব্যাংকের দর ৬০ পয়সা কমেছে বলে বোঝা যায়। তবে মঙ্গলবার লভ্যাংশ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রেকর্ড ডেটের পর গতকাল বুধবার সমন্বয় হয়েছে দাম। কোম্পানিটি এবার ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ও শেয়ার প্রতি এক টাকা করে নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। গত সোমবার ব্যাংকটির লেনদেন হয়েছে ৪৪ টাকা ৭০ পয়সা। এই হিসাবে সমন্বয় করা দাম হয় ৪২ টাকা ৭০ পয়সা। কিন্তু গতকাল দাম দাঁড়িয়েছে ৪৪ টাকা ১০ পয়সা।

শতকরা হিসাবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে রূপালী ব্যাংকের দাম। বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশ ছুঁইছুঁই। এরপর শতকরা হিসাবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এনআরবিসি ব্যাংকের। এটিরও বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশের আশপাশে। এর বাইরে সিটি, ডাচ্-বাংলা, ইউসিবি, এবি, যমুনা, আইএফআইসি, ওয়ান ব্যাংকের দামও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। তালিকাভুক্ত ৩৭টি ফান্ডের সব কটির দাম বেড়েছে। সবচেয়ে কম ২০ পয়সা বেড়েছে আইসিবি সোনালী ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের। আর সবচেয়ে বেশি ১ টাকা ৮০ পয়সা করে বেড়েছে ফার্স্ট প্রাইম ফিন্যান্স ও আইসিবি এএমসিএল সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের দর। লেনদেনে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধিসহ টানা পাঁচদিনের মতো হাজার কোটি টাকার ঘর ধরে রাখলো পুঁজিবাজার। বেড়েছে সূচক ও আগের দিনের তুলনায় লেনদেন। গত এক মাস ধরেই মিউচুয়াল ফান্ড খাতেও চাঙ্গাভাবের আভাস দেখা দিয়েছিল। তবে একদিনে সবকটির দাম বৃদ্ধি এর আগে দেখা যায়নি। বিএসইসির ৭৭২তম কমিশন সভায় বিদেশি কোম্পানিকে মিউচুয়াল ফান্ডের স্পন্সর হওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এতে পুঁজিবাজারে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। অন্যদিকে ব্যাংক খাতের পাশাপাশি তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতেও চাঙ্গাভাব দেখা গেছে। এই খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে ১৯টির দাম বেড়েছে। টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে আইসিবি ৪ টাকা। এছাড়া আইডিএলসির শেয়ার দর বেড়েছে ২ টাকা ৯০ পয়সা। এক টাকার বেশি শেয়ার দর বেড়েছে আরও চারটি নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। তবে গত দুদিনের মতো উত্থানে নেই তালিকাভুক্ত বিমা খাতের শেয়ার দর। এদিন লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ২৩টির। কমেছে ২০টির।

ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সেটি আরও আগে নেয়া উচিত ছিলো। অন্যান্য কোম্পানির তুলনায় বিদেশি বিনিয়োগ যদি মিউচুয়াল ফান্ডে নিয়ে আসা যায় এবং এসব ফান্ডের মধ্যে বিদেশিদের অংশগ্রহণ বাড়ানো যায় তাহলে এ সেক্টর আরও ভালো করবে। তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পুঁজিবাজারে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে মিউচুয়াল ফান্ড। কিন্তু আমাদের এখানে ভিন্ন অবস্থা। ফলে মিউচুয়াল ফান্ডের দর বৃদ্ধি স্বাভাবিক বিষয়। ব্যাংকের শেয়ারের বিষয়ে তিনি বলেন, এই খাতের দর অনেকদিন ধরে তলানিতে পড়ে ছিলো। এখন বাড়লে সেটি ভালো।

একই বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ব্যাংকের শেয়ারের দর এখন যে পর্যায়ে আছে তা থেকে আরও আগেই উত্তরণ হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু হয়নি। বরং খারাপ ও অল্প লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানির উত্থান হয়েছে বেশি। ব্যাংক ও মিউচুয়াল ফান্ডের যে দর তাতে এসব খাতে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ আগ্রহ আরও আগেই হওয়া উচিত ছিলো।

সূচক ও লেনদেন : ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৩ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৮৮ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস দশমিক ৬৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৪৯ পয়েন্টে।

বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১৩ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৩২ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে গতকাল দর বেড়েছে ২০৩টির। কমেছে ১০০টির। দর পাল্টায়নি ৫৪টির। লেনদেন হয়েছে মোট এক হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৫৩ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ১৪৫ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ৪৩ কোটি টাকা।

আমারসংবাদ/জেআই