Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

১৭ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি মামলা!

মে ৯, ২০২১, ০৮:৫০ পিএম


১৭ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি মামলা!
  • বাধা জার্মান ময়নাতদন্ত
  • দুই ডাক্তারকে আদালতে হাজির চায় আসামিপক্ষ
  • বিলম্বিত রায় প্রকাশে লেখক পরিবারে অসন্তোষ

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। এদিন রাতে বাংলা একাডেমির উল্টো পাশে এলোপাতাড়ি কুপানো হয় অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় নেয়া হয় সিঙ্গাপুরে। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয় জার্মানিতে। সেখানেই মারা যান বহুমাত্রিক এই লেখক। ওই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটো মামলা হয়। বিচার কাজও চলছে দীর্ঘকাল। চার্জশিট, চার্জ গঠন, সাক্ষ্য গ্রহণসহ বিচার প্রক্রিয়ায় কেটে গেছে ১৭ বছর। চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। একের পর এক পেছাতে থাকে যুক্তিতর্ক। দুই বছর ধরেই শোনা যাচ্ছে বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে। তবে রায় ঘোষণা হচ্ছে না। রায় প্রকাশে বিলম্বিতে অসন্তোষ লেখকের পরিবারের। রাষ্ট্রপক্ষের আশা, এ বছরই রায় পাওয়া যাবে। তবে আসামিপক্ষ নানাভাবে বিচার বিলম্বিত করে চলেছে। সম্প্রতি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেয়া দুই জার্মান ডাক্তারকে আদালতে হাজির করার দাবি জানানোয় ফের জটলা সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে মামলায় ৫৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। বাকি ১৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এদিকে গত ৪ মার্চ ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মাকছুদা পারভীনের আদালতে পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবীদের যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য থাকলেও শুনানি হয়নি।  

জানা যায়, সকল প্রক্রিয়া শেষ হলেই মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসবে। ‘হত্যা চেষ্টা’ হিসেবে প্রথমে মামলাটি দায়ের করা হলেও পরবর্তীতে তা হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে চার্জশিট দেয়া হয়। হত্যা মামলায় ৪১ জন সাক্ষীর সাক্ষগ্রহণ শেষে গত ২১ মার্চ আসামিদের ‘এক্সামিন’ এর জন্য দিন ধার্য রেখেছেন আদালত। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় জার্মানিতে নেয়ার পর ওই বছরের ১২ আগস্ট সেখানেই মারা যান অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ। এরপর এটি হত্যা মামলা হিসেবে রূপ নেয়। এ ২০১২ সালের ২০ এপ্রিল পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় সিআইডি। এরপর ৯ বছরে ৫৮ সাক্ষীর মধ্যে ৪১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। মামলাটিতে ৫৮ সাক্ষীর মধ্যে ৪১ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। বর্তমানে এ হত্যা মামলায় ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য দিন নির্ধারিত ছিলো। আত্মপক্ষ সমর্থনের পর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হবে। আর এটা শেষ হলেই রায়ের জন্য দিন নির্ধারণ করতে পারবেন আদালত। অন্যদিকে বিস্ফোরক দ্রব্যের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। হুমায়ুন আজাদের বড় মেয়ে মৌলি আজাদ বলেন, ‘বাবার হত্যাকাণ্ডের অনেক পরে অভিজিৎ ও দীপন হত্যাকাণ্ড হলেও তার বিচার শেষ হয়েছে। এটি আমাদের আশাবাদী করেছে। আমাদের পরিবারের প্রত্যাশা, বাবা হত্যার বিচার পাবো। আমাদের বিচারের অপেক্ষা ফুরাবে কবে জানি না। তবে অপেক্ষায় আছি।’ ঢাকার মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু বলেন, ‘আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলেই মামলাটি রায়ের পর্যায়ে চলে আসবে। তবে আশা করছি করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেই রায় ঘোষণা হবে। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সাইফুল ইসলাম হেলাল বলেন, সাক্ষীদের জবানবন্দি, মামলার আলামত এবং আসামির জবানবন্দির ভিত্তিতে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তাই আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছি। এখন পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন। তার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে আদালত রায় ঘোষণার দিন ঠিক করবেন। বিস্ফোরক মামলার বিচারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিস্ফোরক মামলায় ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। সাক্ষীদের আদালতে আনতে আমরা কাজ করছি।’ অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘এ মামলাটি বর্তমানে সাফাই সাক্ষীর জন্য আছে। তাদের সাফাই সাক্ষ্য শেষ হলেই মামলাটি যুক্ততর্ক শুনানির মাধ্যমে রায় নির্ধারণ করা হবে। চলতি বছরেই এ মামলার রায় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘ড. হুমায়ুন আজাদের চিকিৎসা সনদ আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। এছাড়া তার (হুমায়ুন আজাদ) পরিবারের সদস্যরা আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য দেয়নি।’ এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘আসামিদের ব্যবহূত ‘চাপাতি’ (ধারালো ছোরা) উদ্ধার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হলেও সেটা যে তারা ব্যবহার করেছে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই এ মামলার আসামিদের পক্ষে রায় আসবে।

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির রাতে বাংলা একাডেমির উল্টা পাশের ফুটপাতে আক্রান্ত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ। তাকে চাপাতি ও কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। পরদিন হুমায়ুন আজাদের ভাই মঞ্জুর কবির রমনা থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। হুমায়ুন আজাদ ২২ দিন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এবং ৪৮ দিন ব্যাংককে চিকিৎসা নেন। সর্বশেষ জার্মানির মিউনিখে যান এক আমন্ত্রণে। ওই বছরের ১২ আগস্ট সেখানে তিনি রহস্যজনকভাবে মারা যান। তার মৃত্যুর পর মামলাটি আদালতের নির্দেশে হত্যা মামলায় রূপান্তর হয়। একই ঘটনায় হত্যা মামলার পাশাপাশি বিস্ফোরকদ্রব্য আইনেও পৃথক মামলা হয়। মামলার আসামিরা হলেন— জেএমবির শূরা সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শফিক, আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন, হাফিজ মাহমুদ ও নুর মোহাম্মদ ওরফে সাবু। এর মধ্যে মিনহাজ ও আনোয়ার কারাগারে আছে। তারা দু’জনই ঘটনায় সম্পৃক্ততার বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সালাহউদ্দিন ও নুর মোহাম্মদ পলাতক। সালাহউদ্দিন ও হাফিজ মাহমুদ গ্রেপ্তার হলেও ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে তাদের ছিনিয়ে নিয়েছিল জঙ্গিরা। সালেহীন পালিয়ে যেতে পারলেও হাফেজ মাহমুদ পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। আলোচিত এই মামলায় প্রথমে হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে ওয়াজ করা জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকেও আসামি করা হয়। পরে তার নাম বাদ দেয়া হয়।

আমারসংবাদ/জেআই