Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ

এনামুল হক শামীম

মে ১৬, ২০২১, ০৮:২৫ পিএম


অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ

আজ ১৭ মে। বাংলাদেশের মানুষের আশার বাতিঘর বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ ছয় বছর নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফেরার চার দশক আজ। অর্থাৎ আজ থেকে ৪০ বছর আগে বঙ্গবন্ধুবিহীন স্বপ্নের সোনার বাংলায় আলোর মশাল হাতে কাণ্ডারি হয়ে এসেছিলেন জাতির পিতার জ্যেষ্ঠকন্যা শেখ হাসিনা। এশিয়া মহাদেশের অন্যতম বৃহতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আ.লীগের সভানেত্রীর দায়িত্বেও চার দশক। সরকারপ্রধান হিসেবে প্রথম মেয়াদের পাঁচ বছর এবং টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রায় সাড়ে ১২ বছর। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বে বাংলাদেশের এক অনন্য পরিচিতি লাভ করেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যার যোগ্য নেতৃত্ব, দক্ষতা, সততায় আজকের এই অবস্থান। 

কিসিঞ্জারের সেই ‘বটমলেস বাসকেট’-এর দেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেলই শুধু নয়, মানবতার অনন্য উদাহরণ। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর একাধিক গণতান্ত্রিক সরকার ও স্বৈরশাসক দেশ পরিচালনার দায়িত্বে এলেও মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করেনি। নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত ছিলো। আ.লীগের প্রথম মেয়াদ (১৯৯৬-২০০১) এবং ২০০৮ থেকে টানা তিন মেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করায় বিজয়ের ৫০ বছরে অর্থ ও বাণিজ্যের বিভিন্ন সূচকে অর্জন বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ, অর্থনৈতিক মুক্তি, রিজার্ভ, প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ে উন্নত দেশগুলোকেও টেক্কা দিচ্ছে বাংলাদেশ। চলতি মাসেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বৃদ্ধির অর্থ হলো অর্থনীতির শক্তিশালী হচ্ছে। ১৯৭১ সালে ১২৯ ডলার মাথাপিছু আয়ে শুরু করা বাংলাদেশের বর্তমান মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৬৪ ডলার। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের আগে যেখানে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করত ৮০ শতাংশ মানুষ, আজ সেই সংখ্যা ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। বাংলাদেশের প্রথম অর্থবছর (১৯৭২-৭৩) বাজেটের আকার ছিলো ৭৮৬ কোটি টাকা। ৫০ বছরের মাথায় এসে বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। গ্রামাঞ্চলে এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। বার্ষিক মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সর্বশেষ পরিমাণ ২৪ হাজার মেগাওয়াট। খাদ্যশস্যের উৎপাদন ৪৫১ লাখ টন। স্বাধীনতার আগে এর পরিমাণ ছিলো অনেক নিচে। অন্যদিকে স্বাধীনতা পরবর্তী ৩৪৮ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় বেড়ে চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫৮৬ কোটি ডলার। শিক্ষা, গড় আয়ু, আমদানি, রপ্তানি, রিজার্ভ, ডলারের মান, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার এবং মাথাপিছু আয়ের মতো প্রতিটি সূচকে এখন বাংলাদেশ পাকিস্তানের তুলনায় অনেক এগিয়ে। অনেক সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ এখন ভারত থেকে এগিয়ে। বিস্ময়কর উত্থানের কারণ খুঁজছে ভারতও। স্বাধীনতার পরপর আমাদের ১০০ টাকা দিয়ে ভারতীয় ৩৫-৪০ রুপি পাওয়া যেত। আর এখন পাওয়া যায় ৮৫-৯০ রুপি। সবকিছু সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আ.লীগের হাল ধরেছিলেন বলেই। তিনি আজকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আছেন বলেই করোনা মহামারিতেও মানুষের জীবন ও জীবিকা সচল। বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়ও রীতিমতো ক্লান্ত। তারা যখন প্রকৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করছেন তখন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অসীম সাহসিকতা আর মানবিকতা দিয়েই জয় করছেন সবকিছু। প্রধানমন্ত্রীর সাহসী ও যুগান্তকারী পদক্ষেপের ফলেই বাংলাদেশে করোনার টিকা আনা সম্ভব হয়েছে। বিশ্বের অনেক ধনী দেশও যখন টিকা পায়নি, তখন দেশের মানুষের জন্য বিনামূল্যে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। অতি সম্প্রতি ভারত করোনা টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় ভ্যাকসিন নিয়ে বাংলাদেশে সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। গত বছর থেকে শুরু হয়েছে মুজিবশতবর্ষ। মুজিববর্ষের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন— একটি পরিবারও ভূমিহীন থাকবে না। ঠিক সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭০ হাজার গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে পাকা ঘর দেয়া হয়েছে। আশ্রয় প্রকল্পের আওতায় আরো ৫৫ হাজার ঘর আগামী জুন মাসে হস্তান্তর করা হবে। যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। চার দশক আগে দিনটি ছিলো রোববার। দিনটিতে বইছিল ঘণ্টায় ৬৫ মাইল বেগে কালবৈশাখী ঝড়। অথচ প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি আর বৈরী আবহাওয়াও গতিরোধ করতে পারেনি গণতন্ত্রকামী লাখ মানুষের মিছিল। সারা দেশের গ্রাম-গঞ্জ-শহর-নগর-বন্দর থেকে অধিকারবঞ্চিত মুক্তিপাগল জনতা ছুটে এসেছিল রাজধানী ঢাকায়। সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী লাখো কণ্ঠের স্লোগানে প্রকম্পিত পুরো রাজধানী। দেশে প্রত্যাবর্তনের পর তার হাতে তুলে দেন দেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আ.লীগের পতাকা। লাখো মানুষের প্রাণঢালা উষ্ণ সম্ভাষণ এবং গোটা জাতির ভালোবাসা মাথায় নিয়ে প্রিয় স্বদেশ ভূমিতে ফিরে এসেছিলেন আ.লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যার আগমনে সেদিন গগনবিদারী মেঘ গর্জন, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ প্রকৃতি যেনো জাতির জনককে হত্যার বদলা নেয়ার লক্ষ্যে গর্জে উঠেছিল, আর অবিরাম মুষলধারে বারিবর্ষণে যেনো ধুয়ে-মুছে যাচ্ছিল বাংলার পিতৃ হত্যার জমাটবাঁধা পাপ আর কলঙ্কের চিহ্ন। জননেত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আজকের মতো সে দিনটি এমন নিষ্কলুষ ছিলো না। তার চলার পথও ছিলো না কুসুমাস্তীর্ণ। তখনো জাতির জনক, তার পরিবার-পরিজন ও জাতীয় চার নেতার রক্তের দাগ শুকায়নি। গণতন্ত্র অবরুদ্ধ। সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের নির্যাতনের স্টিমরোলার চলছে বঙ্গবন্ধুবিহীন আ.লীগ নেতাকর্মীদের ওপর। চলছে আ.লীগের বিরুদ্ধে শাসক ও নানা পথের রাজনৈতিক নেতাকর্মীর গোয়েবলসকে হার মানানো অপপ্রচার। বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে সেই সময়টিতে শ্বাসরুদ্ধকর অন্ধকার বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মুখোমুখি করা হয়েছিল গোটা জাতিকে। শেখ হাসিনা দুই শিশু সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছোট বোন শেখ রেহানার কাছে লন্ডনে রেখে এ দেশে গণতন্ত্র আর প্রগতিশীলতার রাজনীতি ফেরাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে আসেন। ১৯৮১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের লাখো মানুষের সঙ্গে স্কুলপড়ুয়া একজন ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে উপস্থিত হওয়ার সৌভাগ্য আমারও হয়েছিল। ঝড়-বাদল আর জনতার আনন্দাশ্রুতে অবগাহন করে শেরেবাংলা নগরে লাখ লাখ মানুষের সংবর্ধনা ও হূদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা-ভালোবাসার জবাবে বাবা-মা-ভাইসহ স্বজন হারানোর বেদনায় কাতর বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেছিলেন, ‘আমি সবকিছু হারিয়ে আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার বিচার করতে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। বাংলার দুঃখী মানুষের সেবায় আমার এ জীবন দান করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছুই নেই। বাবা-মাত-ভাই সকলকে হারিয়ে আপনাদের কাছে এসেছি, আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’ শেখ হাসিনা সেদিন জনগণকে দেয়া সেই অঙ্গীকার পূরণে ৩৬ বছর ধরে প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে জনগণের ভাগ্যবদলে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছিলেন বলেই সব ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা ও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে সামরিকতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে দেশবাসী পেয়েছিলেন কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্র। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে স্র্রোতের বিপরীতে সেই যে উজানে নাও বাওয়া শুরু করেছিলেন জাতির জীবনে সাফল্যের পালক পরিয়েই তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। জীবনে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে কুড়িবারের বেশি। যারা স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশে আ.লীগ আর কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না, তাদের সব হিসাব-নিকাশ যেনো মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে গেলো। দেশের মাটিতে নেমেই অন্ধকার দুঃসময়ে আলোর প্রদীপ জ্বালিয়ে তিনি নামলেন গণতন্ত্রের সংগ্রামে। তারই হাত ধরে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসি, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিতে ঝোলানোর মধ্যে দিয়ে দেশ দায়মুক্ত, কলঙ্কমুক্ত হতে পেরেছে। তারই বলিষ্ঠ ও সাহসী নেতৃত্বগুণে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। স্বপ্ন দেখছে উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছার। অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা থেকে শুরু করে সর্বত্রই আজ উন্নয়নের জোয়ার। ডিজিটাল বাংলাদেশের এখন রূপকথার গল্প নয়, বাস্তব। মানুুষের মুখে ফুটেছে হাসি। আজকের বাংলাদেশের এই উন্নয়নের ভিত্তিমূল শেখ হাসিনার সেই স্বদেশ প্রত্যার্বতনের মধ্যেই রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর পরই ক্যারিশমেটিক নেতা হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হচ্ছে। সারা বিশ্বে তার নেতৃত্ব আজ প্রশংসিত। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে সুপ্রতিষ্ঠিত। বিশ্ব নেতারা আজ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের শুধু প্রশংসাই করেন না, উন্নয়নের রূপকার ও রোলমডেল আখ্যায়িত করেন। আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর স্নেহসান্নিধ্য পাইনি তারা তার যোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনার স্নেহসান্নিধ্যে ধন্য হলাম। আমরা তার স্নেহচ্ছায়ায় কাছে থেকে দেখলাম দুঃখী বাংলার মানুষের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা ও আস্থা এবং দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট। তার সাহসী সংগ্রামের একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে বিস্ময়ের সঙ্গে দেখেছি তিনি কীভাবে একের পর এক প্রাণনাশের আঘাত, হামলা, নির্যাতনের মুখে অমিত সাহসিকতার সঙ্গে নেতৃত্বই দিলেন না, আমাদের বুকের ভেতরে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের আগুনও জ্বালিয়ে দিলেন। তার স্নেহচ্ছায়ায় জাকসু ভিপি থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি, বাংলাদেশ আ.লীগের তিন মেয়াদে সদস্য, এক মেয়াদে সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। এখন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। জাতির পিতার আদর্শের একজন কর্মী হয়ে রাজনীতির পথ পরিক্রমায় খুব কাছে থেকে দেখার চেষ্টা করেছি বঙ্গবন্ধুকন্যাকে। বঙ্গবন্ধুর হূদয়ের বিশালত্ব দিয়ে তিনি ভালো বেসেছেন মাটি ও মানুষকে। দলের কর্মীদের জন্য তার কোমল হূদয় বারবার কেঁদে উঠতে দেখেছি। কর্মীদের কাছে কখনো তিনি এক স্নেহময়ী মা, মমতাময়ী বড় বোন, কখনো বা আদর্শ অভিভাবক। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নিয়মিত ছাত্রদের হাতে রাখতে তিনি বয়সের সীমানাই টেনে দেননি, আমাদের হাতে তিনি তুলে দিয়েছিলেন বই-খাতা-কলম। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা রাজনীতির দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর আ.লীগ নামের ঐতিহ্যবাহী দলটিকে ব্যালট বিপ্লবে ক্ষমতায় এনে প্রচলিত আইনে সাধারণ মানুষের কাতারে দাঁড়িয়েই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করেছেন। সংসদীয় গণতন্ত্রে সংসদকে সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু করতে তিনি ‘প্রাইম মিনিস্টার আওয়ার্স’ চালু করে প্রতি সপ্তাহে সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাব দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর রক্ত যার ধমনিতে কোনো ভয়-ডর তাকে দমাতে পারেনি। তা তিনি ফের প্রমাণ করেছেন। ওয়ান-ইলেভেনে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ও দেশি-বিদেশি চক্রান্তের বিরুদ্ধে তিনিই প্রথম তার সাহসী প্রতিবাদী চরিত্র উন্মোচন করে গণতন্ত্র ও ব্যালটের পথে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলেছেন। সব বাধা অতিক্রম করে দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে আবারো প্রমাণ করেছেন— এই দেশ ও মানুষের জন্য জীবন দিতেও তিনি কার্পণ্য করবেন না। তিনি সবসময় বলেন, দেশের জনগণের কল্যাণে প্রয়োজনে তার জীবন উৎসর্গ করবেন। সংগ্রামমুখর জীবনের পরতে পরতে তিনি তা প্রমাণ করেছেন। মানুষ ও কর্মীর জন্য তার দরদ, গরিবের জন্য ভালোবাসা উপলব্ধি করা যায়, বোঝানো যায় না। তাহাজ্জুদের নামাজ দিয়ে রাত শেষ হয়, ফজরের নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ও সংবাদপত্র পড়ে তার দিন শুরু হয়। খাওয়া-দাওয়ায় একেবারেই সাদামাটা। কজন রাষ্ট্রনায়ক আছেন, যারা নিজ হাতে রান্না করে কর্মী ও সন্তানদের খাওয়ান? সাধারণের মতোই জীবন যাপনে অভ্যস্ত আমাদের মহান নেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গৌরব। একজন সম্ভ্রান্ত পরহেজগার মুমিন হলেও তার চিন্তা ও চেতনাজুড়েই অসামপ্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতি জায়গা নিয়েছে। সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে তিনি দ্বিধা করেন না। অবসরে বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকতে তাকে দেখেছি। সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করলেও ক্ষমতার কাছে ভিড়তে দেন না। আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনা হচ্ছেন স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র রক্ষক। নিজে রাজনীতি করার পাশাপাশি তার দুই সন্তানকেও সুশিক্ষিত করে তুলেছেন। ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় আজ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম বিশেষজ্ঞ হিসেবে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় ইতোমধ্যেই সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি এমন একজন নেত্রী যিনি কর্মীদের ভালোবাসেন নিজ সন্তানের মতোই। তার মতো স্নেহশীল মা, কর্মীবান্ধব সভানেত্রী, প্রাজ্ঞ দৃঢ়চেতা দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেত্রী যেভাবে দেশ ও মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিরন্তর পথ চলছেন, দেশের স্বার্থে যেভাবে আপসহীন দৃঢ়তা দেখিয়ে এসেছেন তা ইতিহাসে তাকে অমরত্ব দেবে। বিশ্ববরেণ্য নেতারা শেখ হাসিনা সম্পর্কে বলেছেন, ‘মেধা, যোগ্যতা, সততা আর দক্ষতায় শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায়ই নয়, সমগ্র বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারেন।’ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িও তিনি জনগণকে দিয়েছেন। লোভ, মোহের ঊর্ধ্বের পথচলা শেখ হাসিনা যতদিন বেঁচে থাকবেন, আমাদের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবেন, ততদিন দেশ উন্নয়নের সিঁড়িপথেই হাঁটবে, ততদিন গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে থাকবে। আজ তার এই দেশে ফেরার শুভ দিনে মহান আল্লাহর কাছে তার সুস্থ, কর্মঠ ও দীর্ঘজীবন প্রত্যাশা করি। এই দেশ ও মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে আছে এই মহান নেত্রীর ভাগ্যের সাথে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের মনের দোয়া কবুল করুন। শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবী হোন।

লেখক : উপমন্ত্রী, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, আওয়ামী লীগ, সাবেক সভাপতি ছাত্রলীগ ও জাকসুর সাবেক ভিপি

আমারসংবাদ/জেআই