Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

করোনা ও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সচেতনতাই সম্বল

ইমরান হুসাইন

মে ২৮, ২০২১, ০৭:৫০ পিএম


করোনা ও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সচেতনতাই সম্বল
  • করোনা ভাইরাসের পাশাপাশি মহামারি ঘোষিত বিরল প্রজাতির এই ছত্রাকজনিত রোগ ব্ল্যাক ফাঙ্গাস থেকে সময় থাকতেই আমাদের সুরক্ষিত থাকতে হবে। আরো বেশি সচেতন হতে হবে। যেসব মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে থাকে তা পরিহার করতে হবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মহামারির চিত্র দেখে আমরা এতটুকু অনমান করতে পারি এটি কোনো সহজ রোগ নয়। করোনা ভাইরাসের মতো এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসও মহামারির রূপ ধারণ করেছে। সমপ্রতি আমাদের দেশে একজনের মৃত্যু হয়েছে এ রোগে। এটি যেনো আমাদের দেশেও মহামারি আকার ধারণ করতে না পারে সেক্ষেত্রে নজরদারি বাড়াতে হবে। জনগন ও প্রশাসনে অধিক সতর্ক হতে হবে

করোনা ভাইরাসের তাণ্ডবে সারা বিশ্বের প্রায় দুই শতাধিক দেশের মতো বাংলাদেশ ও ব্যাপকভাবে করোনার এই ভয়াল থাবায় আক্রান্ত। যার প্রভাবে জনজীবন হয়ে উঠেছে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত। পাল্টে গেছে সাধারণ মানুষের জীবন যাপনের গতিধারা। করোনার প্রথম ধাক্কা সামলিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ধাক্কা, এই ভয়াবহ অবস্থার কারণে সমাজের মানুষগুলো যখন আতঙ্কিত এবং বেশ হতাশজনকভাবে সময় কাটাচ্ছে ঠিক তখনই নতুন আরেকটি ছত্রাকজনিত রোগের প্রভাব বিস্তার শুরু হয়েছে ভারত ছাপিয়ে বাংলাদেশও— যার নাম ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’। করোনা ভাইরাসের ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট রুখতে বাংলাদেশের সরকার যখন একের পর এক নানারকম পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং স্বাভাবিক জীবন যাপনের সূচনা করতে নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে ঠিক সে সময় দেশে ভারতীয় ছত্রাক জনিত রোগ ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর খবর  অনেকের মাঝে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

ভারতে সমপ্রতি আতঙ্ক ছড়ানো ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা কালো ছত্রাকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বাংলাদেশের এক ব্যক্তির শরীরে। তিনি বেশ কিছুদিন আগে কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠেন এবং গত ২৫ মে মারা যান। হাসপাতালের ল্যাবে পরীক্ষায় ওই ব্যক্তির শরীরে মিউকরমাইকোসিস শনাক্ত হয়। ওই রোগী সাতক্ষীরা থেকে এসেছিলেন। বেশ আগে খুলনায় তার করোনা শনাক্ত হয়েছিল। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বারডেমে রেখেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। যা নিয়ে পুরো দেশসহ ডাক্তার ও গবেষকরাও চিন্তায় পড়েছেন। কিন্তু এর মাঝেও একটা স্বস্তির বার্তা তা হলো— এই ছত্রাকজনিত রোগটি করোনা ভাইরাসের মতো এত সংক্রামক নয়। কিন্তু তারপরও এটার প্রভাব কম নয়। করোনা ভাইরাসে প্রাণহানি তিন লাখ ছাড়ানো পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এর মধ্যেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে মহামারি ঘোষণা করেছে বিভিন্ন রাজ্য। এ রোগে আক্রান্তরা প্রাণে বেঁচে গেলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এক বা দুই চোখ, এমনকি চোয়ালও ফেলে দিয়ে বাঁচতে হয় বাকি জীবন। এ পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ৯ হাজারের বেশি মানুষের দেহে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জানা যায়,  বিরল এই  রোগটি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য হাতে আসার আগেই দেশটিতে মানবদেহে শনাক্ত হয়েছে আরো দুই ধরনের ছত্রাক হোয়াইট ও ইয়েলো ফাঙ্গাস। এটি হোয়াইট ও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চেয়ে আরো বেশি মারাত্মক বলে সতর্ক করেছেন চিকিৎসকরা।

বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের মতে, এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ। মিউকরমাইকোসিস খুবই বিরল একটি সংক্রামণ। মিউকর নামে একটি ছত্রাকের সংস্পর্শে এলে এই সংক্রমণ হয়। সাধারণত এই ছত্রাক পাওয়া যায় মাটি, গাছপালা, সার এবং পচন ধরা ফল ও শাকসবজিতে এবং এই ছত্রাক মাটি এবং বাতাসে এমনিতেই বিদ্যমান থাকে। এমনকি নাক ও সুস্থ মানুষের শ্লেষ্মার মধ্যেও এটা স্বাভাবিক সময়ে থাকতে পারে। এই ছত্রাক সাইনাস, মস্তিষ্ক এবং ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের ফুসফুস যেহেতু দুর্বল থাকে, সে জন্য তাদের ক্ষেত্রে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে সে ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসে যারা আক্রান্ত হবে তাদের ক্ষেত্রে একটু বেশিই সচেতনতা অবলম্বন করতে  হবে। সিডিসি বলছে, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অর্থাৎ করোনা ভাইরাস মহামারির আগে বিশ্বে প্রতি ১০ লাখ মানুষে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ১ দশমিক ৭। অথচ শুধু ভারতে গত এক মাসে কমপক্ষে ৯ হাজার মানুষের দেহে রোগটি শনাক্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। প্রত্যেকেই করোনা ভাইরাস থেকে সেরে উঠেছিলেন। চিকিৎসকদের ধারণা, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের প্রাণ বাঁচাতে স্টেরয়েডের ব্যবহারের ফলে মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। তবে অন্যান্য রোগের মতো ব্ল্যাক ফাঙ্গাসেরও বেশ কিছু পৃথক লক্ষণ রয়েছে যেমন— নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং নাক থেকে রক্ত পড়া, চোখে ব্যথা এবং চোখ ফুলে যাওয়া, চোখের পাতা ঝুলে পড়া, চোখে ঝাঁপসা দেখা, যার থেকে পরে দৃষ্টিশক্তি চলে যায় এবং নাকের চামড়ার চারপাশে কালো ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেয়া। যার লক্ষণগুলো অন্যান্য সাধারণ রোগের থেকে ভিন্ন। সুতরাং এরূপ কোনো লক্ষণ আমরা দেখলেই আগে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করবো।

এদিকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বলছে, যেসব জায়গায় ছত্রাকের উপস্থিতি আছে সেসব জায়গা এড়িয়ে যাওয়া খুবই কঠিন এবং চিকিৎসকরা বলছেন, যেসব ছত্রাকের কারণে মিউকরমাইকোসিস হয় সেটা পরিবেশে থাকা খুবই সাধারণ ঘটনা। তবে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তারা কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে যাতে করে মিউকরমাইকোসিস সংক্রমণের সম্ভাবনা কমিয়ে আনা যেতে পারে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বা সিডিসি বলছে, যেসব জায়গায় অনেক বেশি ধুলোবালি রয়েছে সেসব জায়গা এড়িয়ে চলা। যদি সেসব জায়গা এড়িয়ে চলা সম্ভব না হয়, তাহলে এন-৯৫ মাস্ক ব্যবহার করা। প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেসব স্থাপনা পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলোর সরাসরি সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। সিডিসি বলছে এসব জায়গা থেকে ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে। শরীরের চামড়ায় যাতে কোনো ইনফেকশন না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা। কোথাও কেটে গেলে কিংবা চামড়া উঠে গেলে সেটি যাতে ধুলো-ময়লার সংস্পর্শে না আসে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। রোগীর স্টেরয়েড ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানী হতে হবে। বারডেম হাসপাতালে রেসপিরেটরি মেডিসিনের অধ্যাপক স্টেরয়েডের ব্যবহার ডায়াবেটিসকে অনিয়ন্ত্রিত করে তুলতে পারে। ফলে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমতি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। রোগীকে অক্সিজেন দেয়ার সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাতে হবে। মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বলছে, এসব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলেই যে মিউকরমাইকোসিস সংক্রমণ এড়ানো যাবে সেটি এখনো পুরোপুরি প্রমাণিত নয়। করোনা ভাইরাসের পাশাপাশি মহামারি ঘোষিত বিরল প্রজাতির এই ছত্রাকজনিত রোগ ব্ল্যাক ফাঙ্গাস থেকে সময় থাকতেই আমাদের সুরক্ষিত থাকতে হবে। আরো বেশি সচেতন হতে হবে। যেসব মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে থাকে তা পরিহার করতে হবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মহামারির চিত্র দেখে আমরা এতটুকু অনমান করতে পারি এটি কোনো সহজ রোগ নয়। করোনা ভাইরাসের মতো এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসও মহামারির রূপ ধারণ করেছে। সমপ্রতি আমাদের দেশে একজনের মৃত্যু হয়েছে এ রোগে। এটি যেনো আমাদের দেশেও মহামারি আকার ধারণ করতে না পারে সেক্ষেত্রে নজরদারি বাড়াতে হবে। জনগন ও প্রশাসনে অধিক সতর্ক হতে হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আমারসংবাদ/জেআই