ঢাকা
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,
মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত, সিলেট
জুন ১, ২০২১, ০৯:১৫ পিএম
জীবিকার তাগিদে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে প্রয়োজন মেটাচ্ছেন সিলেটের কিছু তরুণ ও যুবক। রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজের ও পরিবারের খরচ বহন করছেন। অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক চাকরি না পেয়ে বেছে নিয়েছেন এই পেশা। অনেকে কিস্তিতে মোটরসাইকেল ক্রয় করে রাইডিংয়ে যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু তাদের আয় উপার্জনে চোখ পড়েছে ছিনতাইকারীদের। ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণও দিচ্ছেন রাইডাররা। সম্প্রতি তাদের হাতে প্রাণ হারাতে হয়েছে রেদওয়ান রশিদ চৌধুরী সৌরভ নামে এক রাইডারের।
সর্বশেষ গত ১০ মে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে এক রাইডারকে প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে মোটরসাইকেল ছিনতাই করে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন জায়গায় প্রায়ই রাইডারদের মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাঝে মধ্যে ছিনতাই চক্রের সদস্যদের আটক করলেও অনেকে থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে। যাদের আটক করা হয় তারাও রাজনৈতিক আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে বের হয়ে ফের যুক্ত হন ছিনতাই কাজে। সর্বশেষ গত রবি ও সোমবার সিলেটের বিভিন্ন জায়গা থেকে মোটরসাইকেল ছিনতাই চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় দুটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তিনজন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী।
পুলিশ জানায়, গত ১০ মে সন্ধ্যার সময় কোম্পানীগঞ্জ থানাধীন দয়ারবাজার পয়েন্ট থেকে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল চালক কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কালিবাড়ী গ্রামের বিলাল আহমদকে এক ছদ্দবেশী ছিনতাইকারী ভাড়ায় বুড়িডহর গ্রামে যাওয়ার জন্য ৩৫০ টাকায় চুক্তি করে। রাত সাড়ে ৭টার সময় সাইফুর রহমান ডিগ্রি কলেজের সামনে পূর্বপরিকল্পিত অজ্ঞাত দুইজন ছিনতাইকারী তাদের পথ আটকায়। পরে যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীসহ অজ্ঞাত দুইজন ছুরি দিয়ে প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে মোটরসাইকেল ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এর আগে গত ১৩ মে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার থানাধীন হাজিপুর গফুরের বাঁধ এলাকা থেকে রেদওয়ান রশিদ চৌধুরী সৌরভ নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ১৫ মে পুলিশ চার ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার হওয়া ছিনতাইকারীরা আরও একজন রাইডারের মোটরসাইকেলও ছিনতাই করে। পরে পুলিশ তাদের কাছ থেকে ছিনতাইকৃত মোটরসাইকেল ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করে।
পুলিশ আরও জানায়, সম্প্রতি এভাবে আরও বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীরা রাইডারদের ভয় দেখিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে মোটরসাইকেল ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ হারাতে হচ্ছে রাইডারদের। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে অভিযানে নামে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার পর্যন্ত সিলেটের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মোটরসাইকেল ছিনতাই চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় দুটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো— কোম্পানীগঞ্জ থানার দক্ষিণ বুড়দেও গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে সজল আহমদ (২৪), সিলেটের শাহপরান থানার ইসলামপুর এলাকার মৃত বদরুল ইসলামের ছেলে খায়রুল ইসলাম রায়হান (২০), একই থানার সুরমা গেট এলাকার বশির আহমদের ছেলে আল আমিন হোসেন শিমুল (২০), একই এলাকার আব্দুল মোতালেবের ছেলে জিহাদ (২০), কানাইঘাট উপজেলার ঢালাইচর গ্রামের হারুনুর রশিদের ছেলে আলী হোসেন জনি (২৪), একই উপজেলার শিবনগর গ্রামের এবাদত রহমানের ছেলে মারুফ আহমদ (২৭), শ্রীপুর গ্রামের মৃত কুতুব আলীর ছেলে দেলোয়ার হোসেন দুলাল।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মধ্যে শেখ খায়রুল ইসলাম রায়হান, আল আমিন হোসেন শিমুল ও সজল আহমদ সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। এদিকে পুলিশের কাছে আসামি সজল ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিলেও কোন গ্রুপের সাথে সম্পৃক্ত জানায়নি। তবে তার বিরুদ্ধে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানা এবং সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি এবং এয়ারপোর্ট থানায় ছিনতাই ও দ্রুত বিচার আইনেসহ আটটি মামলা রয়েছে। আসামি রায়হানের বিরুদ্ধে এসএমপি শাহপরান থানায় দ্রুত বিচার আইনে দুটি ও হত্যাচেষ্টা মামলায় আরও একটি মামলা রয়েছে। অন্যদিকে আসামি দুলালের বিরুদ্ধে পুলিশ এসল্ট, হত্যাচেষ্টাসহ চারটি মামলা রয়েছে।
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমান জানান, কোম্পানীগঞ্জসহ বেশকিছু এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট ও সিলেট শহরতলীতে অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারীসহ চক্রের সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে দুটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।
