Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বাজেট বাস্তবায়ন নিয়েই শঙ্কা

রফিকুল ইসলাম

জুন ৩, ২০২১, ০৮:০০ পিএম


বাজেট বাস্তবায়ন নিয়েই শঙ্কা
  • বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কিত —ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ
  • সংকটে বাজেট খারাপ হয়নি —অধ্যাপক আবু আহমেদ, অর্থনীতিবিদ
  • কিছু বরাদ্দ একদম অপ্রয়োজনীয় —অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
  • স্বাস্থ্যে বরাদ্দ খরচ করতে হবে —ড. ফাহমিদা খাতুন, নির্বাহী পরিচালক, বসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)

২০২১-২২ অর্থবছরে ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব  পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। বিশাল ঘাটতির এ বাজেটকে উচ্চাকাঙ্ক্ষা হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।  আয় এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রেও অসামঞ্জস্য দেখছেন অনেকে। সব মিলিয়ে করোনায় ভঙ্গ অর্থনীতিতে বাজটে বাস্তবায়ন করা সরকারের পক্ষে কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, ‘এবারের বাজেটে যেগুলো টার্গেট আছে, সবগুলোই ঠিক আছে। এবারের বাজেট সমর্থনযোগ্য বলে আমি মনে করি। কিন্তু বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে আমি গভীরভাবে শঙ্কিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘অতীতের বাজেটের আলোকে  বর্তমান বাজেট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এটি রাজস্ব আহরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং আমাদের যে লক্ষ্য রয়েছে, সেটিও বাস্তবায়ন হবে। সে জন্য সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।’

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারি করোনার সংকটের মধ্যে সরকার যে বাজেট ঘোষণা করেছেন, তা খারাপ নয়। বিশেষ করে এ বাজেটে শেয়ার বাজারের ক্ষেত্রে কিছু প্রণোদনা আছে এবং ট্যাক্স কমিয়েছে। মূলত এটিই আমরা সবাই চেয়েছিলাম। তবে টেফিফোন, সিগারেট কোম্পানি এবং ব্যাংকিংসহ বেশ কিছু বিষয়ে বাদ রাখা হয়েছে। মূলত এগুলো থেকে সরকার বেশি ট্যাক্স পেয়ে থাকে। তাই হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি জাতীয় বাজেট। করোনা সংকট মোকাবিলা ও সবকিছু মিলে  এবারের বাজেট খারাপ হয়নি, ভালোই হয়েছে। কিন্তু যেগুলো থেকে প্রতিটি মানুষ উপকৃত হবে, সেগুলো কমালে আরও ভালো হতো।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আমার সংবাদকে বলেন, ‘বর্তমান সময়ে যেগুলোতে বেশি অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা ছিলো, তা অগ্রধিকার পায়নি। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অগ্রাধিকার দেয়ার কথা ছিলো, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনের কথা ছিলো, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভঙ্গুর ব্যবস্থা দূর করার কথা ছিলো কিন্তু তা করা হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাজেটে পরিমাণগতভাবে বরাদ্দ কম। অন্যদিকে বাজেটে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, সেটিও ঠিকমতো ব্যয় হবে কি-না তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। এমন কিছুর ওপর বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা একদম অপ্রয়োজনীয়। পুরো বাজেটে উপরে অনেক ঋণ বেড়ে গেছে। মোট বাজেটের এক তৃতীয় অংশ ঋণ। এভাবে ঋণ নিয়ে যদি জনগণের কাজে না লাগে, জনগণকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়া যায়। তাহলে ঋণ কাজে লাগে। কিন্তু ঋণের টাকা দুর্নীতিবাজদের পকেটে যায়, লুটপাট হয়। এই ঋণের বোঝা কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের উপর এসে পড়ে।’          

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন আমার সংবাদকে বলেন, ‘করোনা মহামারি রুখতে জরুরি প্রয়োজনে আসছে বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু আমরা মনে করি, এই টাকা যথেষ্ট নয়। যারা টিকা নেয়ার যোগ্য, তাদের সবাইকে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

টিকাদান কর্মসূচি থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটেও তাই রাখা হয়েছে। মানে হলো আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়েনি। তবে যে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, সেই টাকা খরচ করতে হবে। সে জন্য স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন করোনা মোকাবিলা। রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত আইসিইউ ও অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা। চিকিৎসক ও নার্সের ব্যবস্থা করা। ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে বলা হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু এখানে সরকারি কর্মকর্তাদের পেনশন যোগ করা হয়েছে। এ কারণে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ বড় করে দেখানো হচ্ছে। এই খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।’

আমারসংবাদ/জেআই