Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

মাদকের বিষ ছড়াচ্ছে উচ্চবিত্তের সন্তানরা

জুন ১০, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


মাদকের বিষ ছড়াচ্ছে উচ্চবিত্তের সন্তানরা
  • গাঁজা পাতার নির্যাস থেকে তৈরি তেল দিয়ে ‘ব্রাউনি’ নামের কেক বানাচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্র, জনপ্রিয় হয়ে উঠছে উচ্চবিত্তদের জন্মদিন কিংবা পার্টিতেও

মাদকের ভয়াল থাবায় ধ্বংসের পথে দেশের তরুণসমাজ। কিছুতেই মাদকাসক্তি থেকে এদের বের করে আনা যাচ্ছে না। একের পর এক নতুন মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ মাদক নির্মূলে সরকারের এমন জিরো টলারেন্স নীতিও সমাজকে করতে পারেনি মাদকমুক্ত। এখনো দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে ইয়াবা-হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদক নিয়ে নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার ঘটনা ঘটছে। এরই মধ্যে মাদক নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যেনো নতুন খেলা জুড়ে দিয়েছে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা। সাম্প্রতিক সময়ে এরা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, ভয়াবহতার বিচারে যে মাদক লাস্ট স্টেজে অবস্থান করছে সে মাদক নিয়েও সেবনের পাশাপাশি শুরু করেছে ব্যবসা। রয়েছে ভয়ঙ্কর আরেক মাদক আইসও। এসব মাদকের দাম অন্য মাদকের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি বলে বলছে গোয়েন্দারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চবিত্ত পরিবারের এমন মাদকাসক্ত সন্তানরা নির্লজ্জও বটে। সমাজে মাদকের বিষ ছড়াচ্ছে তারা। সম্প্রতি হাফিজ নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এলএসডি সেবনের পর মৃত্যুর ঘটনায় আলোচনায় আসা এলএসডি মাদকসহ চার-পাঁচজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর তাদের নির্লজ্জ হাসির চিত্র দেখেছে দেশের মানুষ। নির্লজ্জ-বেপরোয়া এমন উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরাই এখন আবার গাঁজা নামক মাদক দিয়ে তৈরি করছে কেক। যা উচ্চবিত্তদের জন্মদিন কিংবা পার্টিতে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ওই কেকের নাম ‘ব্রাউনি’। গাঁজা পাতার নির্যাস থেকে তৈরি তেল দিয়ে ব্রাউনি নামে ওই কেক বানাচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। যা খেয়ে নেশার অন্ধকার জগতে হারিয়ে যাচ্ছে ধনাঢ্য ঘরের সন্তানরা। ভয়ঙ্কর এই নেশার কেক বিক্রি হচ্ছে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকায়।

গোয়েন্দারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে উচ্চবিত্তদের জন্মদিন কিংবা পার্টিতে ব্যবহার হচ্ছে এই মাদক। আর সর্বনাশা মাদকের রমরমা এমন ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অনেক দিন ধরেই উচ্চবিত্ত সমাজে মাদকটি ব্যবহূত হলেও, আটকের ঘটনা এটিই প্রথম। পুুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আইস-এলএসডির পর এবার ব্রাউনি নামের মাদকের খোঁজ পেয়েছেন তারা। মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তারও হন দুজন। গাঁজা থেকে তৈরি হয় এই মাদক। অনলাইনে রেসিপি জেনে ঘরে বসে এটি তৈরি করছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী। বিক্রি হয় ফেসবুক গ্রুপ ও রেডিট অ্যাপের মাধ্যমে। সমপ্রতি আইস ও এলএসডি মাদকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গ্রপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপরই বেরিয়ে আসে গাঁজার তৈরি নতুন মাদকের তথ্য। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযানও চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উদ্ধার করা হয় বিপুল ব্রাউনি। আটক দু’জনই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান।

রমনা বিভাগের (গোয়েন্দা) উপ-পুলিশ কমিশনার এইচ এম আজিজুল হক বলেন, যাদের আমরা ধরেছি তারা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাদের রান্নাঘরেই এটা তৈরি হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দামি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেলো, একেকটা ব্রাউনি তিন হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। ঢাকা মহানগরীতে যে পার্টি কালচার শুরু হয়েছে এতে এই ব্রাউনি জনপ্রিয় একটি মাদক। এইচ এম আজিজুল হক বলেন, অনেকটা এলএসডির মতোই। ইন্টারনেট নির্ভর তাদের গ্রুপ আছে। এসব গ্রুপে যোগাযোগের মাধ্যমে এর কেনাবেচা হয়। কেউ আছে তৈরি করে, কেউ সেগুলো কেনে। লেখাপড়া করা ছেলেরা এর সঙ্গে জড়িত। শুধু গাঁজার কেক নয়, অনলাইনে সুকৌশলে বিক্রি হচ্ছে আইস ও এলএসডির মতো ভয়ঙ্কর মাদকও। এসব মাদক কারবারিকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নজরদারিতেও রাখা হয়েছে অনলাইন মাদক হোতাদের।’

আমারসংবাদ/জেআই