Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

সক্রিয়তার আড়ালে নির্বাচনি প্রস্তুতি!

জুন ১১, ২০২১, ০৫:৫০ পিএম


সক্রিয়তার আড়ালে নির্বাচনি প্রস্তুতি!
  • কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে উপস্থিতিই হবে একমাত্র অস্ত্র, সক্রিয়তা যার টিকিটও তার
  • গত তিনদিনে শুধু ঢাকায় কেন্দ্রীয় ২৩টি কর্মসূচি পালন, প্রস্তুতির আহ্বান
  • ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি ও খালেদায় হাইকমান্ডকে রাজপথে থাকতে লন্ডন থেকে নির্দেশনা
  • নেতৃত্ব খুঁজতে রাজপথই এবার হাতিয়ার  অব্যাহত থাকবে রাজনৈতিক চাপ
  • খালেদার মুক্তিতে আসছে কিছু কর্মসূচি  পরিবারও ফের সরকারের দরবারে

রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিস্ময়কর সক্রিয় বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সকল সদস্যই আলাদা আলাদা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। সরকারের ব্যর্থতা ও খালেদা জিয়া ইস্যুতে গরম বক্তব্য দিচ্ছেন। গত তিনদিনে শুধু ঢাকায় কেন্দ্রীয় ২৩টি কর্মসূচি পালন করে দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। নেতাকর্মীদের মাঠে নামতে প্রস্তুত হতেও বলছেন বিএনপি মহাসচিবসহ একাধিক শীর্ষ নেতা।

জানা গেছে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকারের মেয়াদের অর্ধেক সময় পেরিয়ে গেছে, তাই এখন থেকে হাইকমান্ডকে রাজপথে থাকতে বলা হয়েছে। নেতৃত্ব খুঁজতে রাজপথে মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছে। যারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে আগামীতে দল তাদের বিষয়ে চিন্তা করবে এমন বার্তাও দেয়া হয়েছে। ধানের শীষের প্রার্থী চূড়ান্তে সশরীরে খালেদা জিয়ার জন্য কর্মসূচি পালন ও কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে উপস্থিতিই হবে একমাত্র অস্ত্র। এখন সক্রিয়তা যার টিকিটও তার। খালেদা জিয়ার ইস্যুতেও একক কিছু কর্মসূচির ভাবনা রয়েছে। সরকারকে রাজনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখতে দু-একদিনের মধ্যে কিছু নির্দেশনা আসবে। অন্যদিকে মাঝপথে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রার সম্ভাবনা যে আটকে গেলো সেটি আবার পরিবার শুরু করতে যাচ্ছে। খালেদা জিয়ার ঝুঁকি কমাতে পরিবার পুরনো চেষ্টা আবার করছে। অন্যদিকে বিএনপিও দায় সারতে খালেদা জিয়া ইস্যুতে শীর্ষ নেতাদের মাঠে থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

মাঠপর্যায়ে দেখা গেছে, গত তিনদিনে ২৩টি বড় কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। গতকাল ১০টি। বৃহস্পতিবার সাতটি। বুধবার ছয়টি। গতকাল শুক্রবার দলটির স্থায়ী কমিটিসহ শীর্ষনেতারা বিভিন্ন ব্যানারে সরকারবিরোধী অবস্থান ও দলের ভাষ্য উপস্থাপন করেন। গতকাল সকাল ১১টায় গুলশানে প্রেস ব্রিফিং করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও আন্দোলন বিষয়ে ইঙ্গিত দেন তিনি। করোনায় টিকা ব্যর্থতা সংক্রমণ অনিয়ন্ত্রণসহ নানান বিষয় জাতির সামনে তুলে ধরেন। সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জহুর হোসেন হলে দলটির সিনিয়র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান আলোচনায় অংশ নিয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতির কথা বলেন নেতাকর্মীদের উদ্দেশে। সকাল ১০টার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল চিকিৎসা সহায়তা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বিকেল ৩টায় ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নেন। একই সময়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস,  ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু যুক্ত ছিলেন। এর আগে ১০ জুনও দলটির শীর্ষনেতারা বেশকিছু কর্মসূচি পালন করেন। সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপি মহাসচিব, সাড়ে ১০টায় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, দুপুর ২টায় আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, তিনটায় বেগম সেলিমা রহমান, ১১টায় ভার্চুয়াল আলোচনায় ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু অংশ নেন। ৯ জুন বুধবার ছয়টি কর্মসূচি পালন করে। আজ ১২ জুনও রয়েছে মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির একাধিক ব্যক্তির বিভিন্ন ব্যানারে অনুষ্ঠান।

বিএনপির সাংগঠনিক ও দপ্তরে থাকা দুই শীর্ষ নেতা জানান, খালেদা জিয়ার ঝুঁকি আরও বেড়ে গেছে। এ ইস্যুতে সরকারকে বার্তা দিতে স্থায়ী কমিটির সকল সদস্যকে মাঠমুখী হতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এজন্য গত তিনদিন ধরে হঠাৎ করেই স্থায়ী কমিটির সদস্যরা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। খালেদা জিয়ার দেশের বাইরে চিকিৎসা নিশ্চিত এবং জাতীয় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বিএনপির এমন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলেও মনে করছেন তারা। বিশেষ করে এক মাসের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দলীয়ভাবে কর্মসূচি দেয়ার প্রস্তাবনা এসেছে দলে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে গুরুত্ব দিতে রাজনৈতিক চাপ গড়তে হাইকমান্ড থেকেও দেয়া হয়েছে বার্তা। করোনামুক্ত হলেও জটিলতা না কাটায় উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেয়া অনেক বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। গত মে মাসের শুরুতে তাকে বিদেশে নিতে সরকারের সঙ্গে তার পরিবার ভেতরে ভেতরে একটা প্রস্তুতি শুরু করে। মাঝখানে তা স্থগিত থাকলেও আবার শুরু হচ্ছে। দেশের বাইরে নিতে আবার জোর প্রচেষ্টা চলছে। দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার বর্তমানে লন্ডনে যাওয়া খুব ডিফিকাল্ট। বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যাওয়া সহজ। আর যেখানেই যে দেশেই যান না কেন, ১৫ দিনের কোয়ারেন্টাইন মেইনটেন করতে হবে। সেক্ষেত্রে ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর সহজ। এছাড়া তার স্বাস্থ্যের বিষয়টিও জড়িত আছে অনেকভাবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য কর্মসূচি ও সক্রিয়তার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, সরকারের চলমান অর্ধেক সময় পার হয়ে গেছে। ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ নির্বাচন। চলমান নির্বাচনগুলো বিএনপি বয়কট করলেও আগামী নির্বাচনে দলের প্রস্তুতি ও রাজনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখতে এখন থেকেই ভাবনায় এসেছে। আন্দোলনে রাজপথে অবস্থানের মাধ্যমে বিএনপি একদিকে নেতা খুঁজে বের করবে অন্যদিকে সাংগঠনিক কাজ ও বিভিন্ন কমিটি গঠন পূর্ণাঙ্গ করবে। খালেদা জিয়া সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, তার জন্য যদি হাইকমান্ড ভূমিকা পালন করতে না পারে মাঠপর্যায়ের কর্মসূচি নেয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতাধর নেতাদের ওপর চাপ আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই রাজপথে সক্রিয়তার মাধ্যমে বিএনপি নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করবে। অন্যদিকে খালেদা জিয়াকে সরকার যে রাজনৈতিক কারণেই বন্দি রেখেছে এটিও দল ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশে এখন দুই শত্রু। একদিকে আওয়ামী লীগ শত্রু, আরেক দিকে করোনা শত্রু। এই শত্রু, এই দুই দানব তছনছ করে দিচ্ছে দেশের সব কিছু। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শর্টকাট কোনো রাস্তা নেই। একটা যুদ্ধ যখন করতে হবে, সেই যুদ্ধে আমাদের পুরোপুরিভাবে ইকুইপ্ট হতে হবে। যুদ্ধ করতেই হবে। পৃথিবীর সমস্ত বড় বড় বিজয়, বড় বড় বিপ্লব, বড় বড় অর্জন কিন্তু একটা স্লোগানে হয়েছে— আমরা করবো জয়। এই স্লোগান দিয়েই আমাদের জয় করতে হবে। কারণ এরা  এমনি এমনি ক্ষমতা দিয়ে দেবে না। এরা একেবারে ডিক্টেটর বনে গেছে, কর্তৃত্ববাদী বনে গেছে এবং জানে যে, নির্বাচন করে তারা কোনো দিন জিততে পারবে না। সুতরাং নির্বাচন নির্বাচন খেলা করবে।’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখনো ঝুঁকিমুক্ত নন বলে জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘ফান্ডামেন্টাল কিছু সমস্যা রয়েছে, যেগুলো উদ্বেগজনক। তার হার্টের প্রবলেম, কিডনির প্রবলেম আছে। এই দুটি নিয়ে মেডিকেল বোর্ড উদ্বিগ্ন। উনারা মনে করছেন, বাংলাদেশে যে হাসপাতালগুলো আছে, অ্যাডভান্স সেন্টারগুলো আছে, সেগুলো যথেষ্ট নয় উনার টিট্রমেন্টের জন্য।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন, উনার অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট দরকার, তার অসুখগুলো নিয়ে অ্যাডভান্স সেন্টারে যাওয়া জরুরি। আমরা সেটা বারবার বলছি।’

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আজকে দলের নেতাকর্মীরা জেলখানায়, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বন্দি অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশের মাটিতে। এমনি অবস্থায় আমরা ভার্চুয়ালি ও এমনি আলোচনার মধ্য দিয়ে কথাই বলে যাচ্ছি। আমার মনে হয় না কথায় কাজ হবে। এখন কথা বলার চেয়ে বেশি জরুরি সরকারের পতন কীভাবে করাবো তা ভাবতে হবে।’

আমারসংবাদ/জেআই