Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

‘গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেই কাজ করতে চাই’

জুন ১৩, ২০২১, ০৭:১৫ পিএম


‘গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেই কাজ করতে চাই’
  • নাটকের বাইরে এখন চলচ্চিত্রেও নিজের দাপুটে অভিনয় প্রদর্শন শুরু করেছেন দীপা খন্দকার। মাঝে ‘ভাইজান এলো রে’ শিরোনামের একটি ছবিতে কাজ করে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন এই অভিনেত্রী। সম্প্রতি নতুন একটি ছবির কাজ শেষ করেছেন। বর্তমানে ‘রিভেঞ্জ’ নামের আরেকটি ছবিতে কাজ করছেন দীপা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রকিব হোসেন

দেশীয় সিনেমার দুর্দিনে এ মাধ্যমে কাজ করতে এলেন কেন?

আসলে ২০০৪-০৫ সালের দিকে যখন আমার কাছে এই মাধ্যমে কাজের প্রস্তাব আসতো, তখনো আমাদের সিনেমার দুর্দিন ছিলো। সেই সময় ছবির সঙ্গে অশ্লীল কাটপিস জুড়ে দেয়া হতো। ফলে তখন আমি সিনেমায় কাজ করতে ভয় পেতাম। আমি এমন কোনো সিনেমায় কাজ করতে চাইনি, যেটায় অশ্লীল কাটপিস জুড়ে দিয়ে আমার সুনাম নষ্ট করা হবে। ফলে তখন এই মাধ্যম থেকে দূরে ছিলাম। এখন সেই সময়টা নেই। ২০০৮-০৯ সাল থেকেই আমাদের সিনেমা ভালোর দিকে আসছিল। বিশেষ করে ‘মনপুরা’ ছবির পর এই মাধ্যমে কিছু কিছু ভালো কাজ হচ্ছিল। তাছাড়া আমাদের দেশে তো সবসময়ই নায়ক-নায়িকানির্ভর ছবি হয়। মাঝে কিছু ভিন্ন গল্পের ছবিও হতো। কিন্তু তথাকথিত নাচে-গানে ভরপুর ছবির প্রতি আমার কোনো আকর্ষণ ছিলো না। আমি অভিনয়নির্ভর ছবিতে কাজ করতে চেয়েছিলাম। এটা আমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইন্টারভিউতে বলেছি। ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭ সালে আমি আমার পছন্দ মতো কোনো কাজের প্রস্তাব পাইনি। এর মধ্যে ২০১৮ সালে আমাকে যখন ‘ভাইজান এলো রে’ ছবির জন্য কলকাতা থেকে ফোন করা হয়, তখন ছবির গল্প ও চরিত্র শুনে আমার মনে হয়েছে আমি এ ধরনের ছবিতেই তো কাজ করতে চেয়েছি। তবে দেশের বাইরের ছবি বলে প্রথমে একটু সংকোচ বোধ করছিলাম। কিন্তু আমার স্বামীর যেহেতু ওদের সঙ্গে আগে কাজ করেছে, সে আমাকে ইতিবাচক ধারণা দেয়ায় আমি কাজটি করলাম। প্রায় ২০ দিনের টানা একটা শুটিং করলাম। 

‘ভাইজান এলো রে’ কি আপনাকে এই মাধ্যমে কাজের সাহস জুগিয়েছে?

হ্যাঁ, এই ছবিতে কাজের পর আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় যে, এ ধরনের ভালো কাজ হলে আমি করতে পারবো। আমার প্রথম ছবি রিলিজের পর কয়েকটি ছবিতে কাজের প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু সবাই একই ধরনের চরিত্রের জন্য আমাকে অফার করছিলেন। তখন আমার মনে হয়েছে আমি আমার চরিত্রের রিপিটেশন করতে চাই না। শাকিবের (চিত্রনায়ক শাকিব খান) বোন, ভাই-বোনের গল্পের ছবিতে আমি আর কাজ করতে চাইনি। ফলে আমি ভিন্ন গল্পের ছবিতে কাজের অপেক্ষায় ছিলাম। এর মধ্যে পরপর তিন-চারটি ছবির বিষয়ে কথা হয়েছে। সবগুলোই মেইন স্ট্রিমের সিনেমা, এফডিসি ঘরানার ছবি।

রিভেঞ্জে কাজের আগ্রহ পেলেন কিভাবে?

এই ছবিটির কাজ নিয়ে আমি প্রথমে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম, ছবিটি করবো কী করবো না! এর মাঝে আবার সাইফুল ইসলাম মান্নু ভাই তার ‘পায়ের ছাপ’ ছবির জন্য আমাকে ডাকলেন। ছবিটিতে আমার ক্যারেক্টারটা ছোট কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ।

পায়ের ছাপ-এ আপনার চরিত্রটি কীরকম?

এটি নারী জাগরণের গল্পের একটি ছবি। একটা মেয়ের ছোটবেলা, তার একা একা বেড়ে ওঠা,তার স্ট্রাগল, সমাজে একা একা প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে একটি মেয়েকে যে স্ট্রাগল করতে হয়, সেটাই এই ছবিতে দেখানো হবে। ফ্ল্যাশব্যাকে মেয়েটির মায়ের যে গল্প আছে, সেই চরিত্রটিই আমি করেছি। ওর মায়ের যে স্ট্রাগল ছিলো—ছোটবেলায় সে সেটা দেখে দেখে বেড়ে উঠেছে। বাবার সঙ্গে তাদের খারাপ রিলেশন ছিলো। বাবা ওদের কোনো সাপোর্ট করতো না। একটা সময় মেয়েটাকেও তার মা কোনো শেল্টার দিতে পারেনি। মেয়েটাকে ফেলে তাকে অন্যত্র বিয়ে করে চলে যেতে হয়েছে। এ ধরনের একটা চরিত্র। এটি আমার ভালোলাগায় কাজটি করেছি।

আবার রিভেঞ্জ প্রসঙ্গে আসি, এই ছবিটি কেন বেছে নিলেন?

এই ছবিতে আমার চরিত্রটি আগের দুটি ছবি থেকে আলাদা মনে হয়েছে। একজন মা তার বাচ্চার সেফটি বা প্রটেকশনের জন্য কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে— কতটা ভয়ঙ্কর কাজ সে করতে পারে, সেই ধরনের একটা ক্যারেক্টার এটি। আমরা তো সাধারণত মাকে মমতাময়ী হিসেবেই দেখে থাকি। এখানে আমার ভিন্নরূপ দেখা যাবে।

তার মানে এই ছবিতে আপনি খলনায়িকা?

ঠিক খলনায়িকা না, বাট এ ধরনেরই একটা ক্যারেক্টার। আবার এটাকে খলনায়িকা হিসেবেও দেখতে চাইলে সে খলনায়িকা। এটা একটা কঠিন টাইপের চরিত্র। তার পারসোনালিটি অনেক কঠিন। সে পলিটিশিয়ান, সে তার বাচ্চার জন্য স্বামী বিপরীতে ফাইট করে, তাকে মেরে ফেলার জন্যও লোক নিয়োগ করে। এসব কিছু মিলিয়ে চরিত্রটিকে খলনায়িকা হিসেবে ধরা যেতে পারে। 

এটা বাংলাদেশে আপনার প্রথম মূল ধারার সিনেমা, কাজের অভিজ্ঞতা জানতে চাই—

ভালোই লাগছে কাজটি করতে। সবসময়ই চেয়েছিলাম আমার দেশের মূলধারার সিনেমায় কাজ করতে। ‘ভাইজান এলো রে’ও মূলধারার ছবি। তবে সেটা আরেকটা দেশের। মূলত আমার ইচ্ছে ছিলো সিনেমা যদি করি, তাহলে সেটা আমার দেশের মূলধারার হতে হবে। সিনেমা বলতে আসলে আমি আমাদের দেশের এফডিসির মূলধারার সিনেমাকেই বুঝি। এটাই আমাদের সিনেমার কালচার। তো এটাকে ভেঙেই আমাদের চ্যানেলগুলো ছবি করে, আর্টফিল্ম করা হয়। মূলত আমাদের অধিকাংশ দর্শক যে সিনেমা দেখে থাকেন, সেটাই আমাদের সিনেমা। আমি এ ধরনের কাজই করতে চেয়েছি। এখন করছি, আমি আরও ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে কাজ করতে চাই। তবে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেই কাজ করতে চাই— যেখানে আমার কিছু করার আছে। শুধু একটি সিনেমাতে আমি আছি, আর কিছু টাকা নেবো— এ ধরনের কাজ করতে চাই না।

আমারসংবাদ/জেআই