Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বরাদ্দ বিবেচনায় পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনায় গুরুত্ব দিন

বিধান চন্দ্র পাল

জুন ১৮, ২০২১, ০৭:০০ পিএম


বরাদ্দ বিবেচনায় পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনায় গুরুত্ব দিন

একথা বলা বাহুল্য যে, বাংলাদেশ উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্বের দেশ। এ ছাড়া ভৌগোলিক ও অবস্থানগত কারণ, অবকাঠামোর অপর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনাগত দিকসহ বিভিন্ন কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশ অন্যতম। ফলে পরিবেশ সংরক্ষণ টেকসই উন্নয়ন কৌশলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়া প্রয়োজন।

আমরা জানি যে, জিডিপির প্রবৃদ্ধির হিসাব করতে গিয়ে মূলধনী সামগ্রীর অবচয় বাদ দিলে নিট প্রবৃদ্ধির হিসাব পাওয়া যায় (যাকে যথাক্রমে জিএনপি ও এনএনপি বলা হয়ে থাকে)। এর সঙ্গে পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতির অর্থনৈতিক মূল্যায়নের হিসাব নিলে আমাদের জিডিপির বার্ষিক নিট প্রবৃদ্ধির প্রকৃত হার ৭ দশমিক ২ শতাংশের বদলে ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসতে পারে বলেই আমাদের কাছে মনে হয় (যাকে গ্রিন অ্যাকাউন্টিং বা গ্রিন ফাইন্যান্সিং বলা হয়)। এই ক্ষয়ক্ষতির উৎসের মধ্যে আছে জমির গুণমান ও উর্বরতা হ্রাস এবং অপরিকল্পিত ব্যবহার, জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি, যানজটজনিত ক্ষতি, নদীর দূষণ ও নাব্য হ্রাস, বনজ সম্পদের ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি ইত্যাদি। পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা এখনই যদি না নেয়া হয় তাহলে ভবিষ্যতে এসবের ক্ষতিপূরণের ব্যয় অনেক বেশি হবে। অন্য অরেকটি দৃষ্টিকোণ থেকেও বলা যায় যে, আমাদের বৈদেশিক নির্ভরতা এবং ঋণ আরও বাড়ছে। আমাদের সরকারকে নতুন করে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ নিতে হবে। এ বাজেটে রাজস্ব যতটুকু বাড়বে, তাতে রাজস্ব ব্যয় যত বাড়বে, তাতে কিন্তু কুলোবে না। সুতরাং আমাদের প্রকৃত উন্নয়ন ব্যয় কমে যাবে। ফলে এদিকে দৃষ্টি না দিলে যে প্রবৃদ্ধি সরকার চাচ্ছে, তা অর্জন করাটা সম্ভব হবে না। ফলে সেদিকে আরও বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়ার প্রয়োজন আছে বলেই আমাদের কাছে মনে হয়।

অর্থমন্ত্রী গত ৩ জুন সংসদে ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন। সরকারকে এই বাজেটে গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে কীভাবে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং একইসাথে জলবায়ু পরিবর্তন সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা করা যায়। বাজেট বক্তৃতায় অষ্টম অধ্যায়ে পরিবেশ সংরক্ষণবিষয়ক অনেক প্রসঙ্গই গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়েছে। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করেছি যে, প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাকৃতিক পরিবেশের অবনতি বন্ধ করা নিয়ে তেমন কিছুই বলা হয়নি। বাজেটে পরিবেশ ও মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের বিষয়টি উপেক্ষিত বলেই আমাদের কাছে মনে হয়েছে।

প্রসঙ্গত, এবারের বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম নির্ধারণ করা হয়েছে— জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ। কোভিড পরিস্থিতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সার্বিক প্রেক্ষিত বিবেচনা করে শিরোনামে পরিবেশের বিষয়টিও আসা উচিত ছিলো বলেই আমাদের কাছে মনে হয়। ফলে শিরোনামটি পরিবর্তন করে আমরা পরিবেশ-জীবন ও জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামী পথে বাংলাদেশ করার দাবি জানাচ্ছি। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং পরিবেশগত স্থায়িত্বের সাথে মিলিত না হলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কখনোই টিকবে না।

এবারের বাজেটে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অনেকগুলো বিষয়ের সুস্পষ্ট কোনো প্রতিফলন আমরা খুঁজে পাইনি। এসব বিষয়ে বাস্তব পরিকল্পনা বা আর্থিক বরাদ্দও আমরা লক্ষ্য করিনি। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে— কৃষি গবেষণায় প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করা এবং গবেষণার পরিসর আরও বিস্তৃত করা; উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় অবকাঠামো, কৃষক সংগঠন (এফএফএস), বিপণন সংগঠন, সমবায় সমিতি ও কৃষি ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করা; প্রাণী খাদ্য, গবাদিপশুর ঔষধপত্র ও চিকিৎসা ব্যয় হ্রাস এবং সহজপ্রাপ্য করা, সে সঙ্গে এগুলোর জন্য যাতে ভালো দাম পাওয়া যায়, তার জন্য বাজার-ব্যবস্থা ও বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ সুবিধার আরও উন্নয়ন করা; জেলা শহর ও মফস্বল শহরে স্থানীয় কাঁচামালভিত্তিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের গুচ্ছ শিল্পাঞ্চল (ক্লাস্টার ইন্ডাস্ট্রি) গড়ে তোলা, সরকারের ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পকে গ্রামভিত্তিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি গুচ্ছশিল্প কাঠামোর সাথে সংযুক্ত করা। বিশ্ব উষ্ণায়নের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ এলাকা থেকে মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। সেই প্রেক্ষিতে পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন করা; সেচ সুবিধা সমপ্রসারণ ও লবণাক্ততা রোধ ও সুন্দরবনসহ অববাহিকা অঞ্চলের মিঠা পানি প্রাপ্তির লক্ষ্যে গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া; দেশের বিস্তীর্ণ হাওর ও ভাটি অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করা ইত্যাদি।

প্রসঙ্গত, গত বছর বাজেটে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে এক হাজার ২৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও এবারের বাজেটে তা কমিয়ে এক হাজার ২২১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এছাড়া জলবায়ু-সংক্রান্ত বরাদ্দগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

সরকার মোট উন্নয়ন বাজেটের ২৫.৮ শতাংশ পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে, ১১.৫ শতাংশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে, ১৫.১ শতাংশ স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে, ১৯.৭ শতাংশ শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে, ৫.৬ শতাংশ কৃষি খাতে, ৬.৬ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে, ৬.৪ শতাংশ জনপ্রশাসন খাতে ও ৩ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে প্রতিবেশের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য বাজেটে কোনো ধরনের বরাদ্দই রাখা হয়নি।

আমরা জানি যে, গত ৫ জুন অনুষ্ঠিত বিশ্ব পরিবেশ দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো ‘প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার’। কিন্তু এই খাতে সরকারের অবহেলা এই বাজেটেও দৃশ্যমান। এর মাধ্যমে দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের সার্বিক অবস্থা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেই মনে করি।

এছাড়া অতি সামপ্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) ‘বিশ্ব বাসযোগ্যতার সূচক- ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সবচেয়ে কম বাসযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকা চার নম্বরে। করোনার বছরে নম্বর কমেছে তিন ক্ষেত্রে, তার মধ্যে পরিবেশ একটি। তাই বাজেটে এই খাতে অবহেলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যদিকে যেসব ক্ষেত্রে বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তাও অপ্রতুল। বিগত সময়ে আমরা দেখেছি, প্রকল্প বাস্তবায়নের দুর্বলতার কারণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। যেমন, জাতীয় দৈনিকে ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, গত ১০ বছরে পরিবেশ অধিদপ্তর দেশে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ২২১ কোটি টাকা খরচ করেছে। বিশ্বব্যাংকের ঋণের অর্থে ‘নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ’ নামের এ প্রকল্পের (কেইস) মাধ্যমে এই অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। তবে অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ১২৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে প্রশিক্ষণের নামে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর, পরামর্শক ফি, গাড়ি কেনা ও ভবন নির্মাণে।

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য গত বছরের চেয়ে ৬৩৭ কোটি টাকা বেশি রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিলো সাত হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা, আর ২০২০-২১ অর্থবছরে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ৯ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। অথচ ২০২০ সালের টিআইবির একটি বিশ্লেষণে বের হয়ে এসেছে যে, পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প, বরগুনা ও পটুয়াখালীতে পোল্ডার নির্মাণ প্রকল্প, মনু নদী সেচ ও পাম্পহাউজ পুনর্বাসন, খুলনার কয়রায় বাঁধ সংস্কার প্রকল্প- এই চারটি প্রকল্পে মোট টাকার অঙ্ক ছিলো ১১০২ কোটি টাকা। অথচ সেখানে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে ২০০ কোটি টাকার মতো। এছাড়া দুর্নীতির কারণে চারটি প্রকল্পে ক্ষতির পরিমাণ ১৯১ কোটি টাকা বলেও টিআইবি তার বিশ্লেষণে উল্লেখ করেছিল। সেটাও খুবই হতাশাব্যঞ্জক।

প্রস্তাবিত বাজেটে আমরা জানি যে, স্বাস্থ্য খাতে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এটা অপ্রতুল বলেই আমাদের কাছে মনে হয়েছে। এই বরাদ্দ দিয়ে মহামারি মোকাবিলা আদৌ সম্ভব হবে কিনা সেটা নিয়ে যথেষ্ট আশঙ্কা থেকে যায়। তামাক পণ্যে আগের মতোই উৎপাদকের ওপর আয়কর ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ রাখা হয়েছে। যা ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুসারে গৃহীত কার্যক্রমকে আরও পিছিয়ে দেবে এবং জনস্বাস্থ্য আরও হুমকির মুখে পড়বে বলেই আমাদের কাছে মনে হয়।

বাজেটে ৮০ শতাংশ মানুষকে করোনার টিকা দেয়া হবে কিন্তু কত সময়ের মধ্যে সেটি দেয়া হবে সেটি স্পষ্ট করা হয়নি। অনুমান অনুসারে মন্ত্রীর মাসিক টিকাদানের কভারেজের ভিত্তিতে দেশ এই লক্ষ্যযুক্ত শতাংশের আওতাভুক্ত হতে অন্তত চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে। ফলে টিকা আমদানি এবং টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে এই অর্থবছরের মধ্যে আমাদের জোর দেয়াটা খুবই জরুরি হবে।

ওয়ান গ্রুপ ইকোনমি থেকে আমাদের মাল্টি গ্রুপ ইকোনমিতে পরিবর্তিত হওয়া প্রয়োজন। এজন্য আমাদের চাষাবাদে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং পরিবেশসম্মত বীজ ও ফসল উৎপাদনের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। সেজন্য গবেষণা ও গবেষণার ফোকাসের পরিধি আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এসব কারণে এটা স্পষ্টত যে, পরিবেশ-বান্ধব বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীর সদিচ্ছা ও আর্থিক বরাদ্দই যথেষ্ট নয়। সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার কঠোর বাস্তবায়নের জন্য দরকার প্রভাবশালী স্বার্থগোষ্ঠীর পরিবেশবিরোধী অন্যায় কার্যকলাপ প্রতিরোধে রাজনৈতিক অঙ্গীকার। টেকসই উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ এবং সে অনুযায়ী প্রকল্প তৈরি ও যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমাদের বিচার-বিশ্লেষণ ক্ষমতার অভাব ও চিন্তা-ভাবনার দৈন্যতাও আছে। এটা সবচেয়ে স্পষ্ট হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প তৈরি ও বরাদ্দকৃত অর্থের ব্যবহারের বিষয় থেকে। স্বাভাবিকভাবেই প্রকল্পগুলোর পরিকল্পিত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে উপযুক্ত স্থানে দক্ষ জনবলের প্রয়োজনীয়তাটাও স্পষ্টভাবেই সবার সামনে এসেছে।

সরকার পঞ্চমবারের মতো পৃথক জলবায়ু বাজেট প্রতিবেদন তৈরি করেছে। পৃথক বাজেট দেবার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠছে তা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। এতে ২৫টি মন্ত্রণালয়ের জলবায়ুজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় যেসব উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে সেগুলো এই বাজেটে চিহ্নিত করা হয়েছে।

লিখিত বক্তৃতায় এ ক্ষেত্রে পঁচিশ মন্ত্রণালয়ের বাজেট কাঠামোতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং ক্লাইমেট ফিসক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক ২০২০ সালে হালনাগাদ করে এর পরিধিকে বিস্তৃত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে আর কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। অথচ এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত পানি, নদী, বন, জ্বালানি, পরিবহন, কৃষি অবকাঠামো, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক জাতীয় নীতিমালার পুনর্মূল্যায়ন এবং সে অনুযায়ী অগ্রাধিকারভিত্তিতে কার্যক্রম গ্রহণ। ছিটেফোঁটা অপরিকল্পিত প্রকল্প দিয়ে শুধু অর্থেরই অপচয় হবে বলে আমাদের ধারণা। তাই এ ক্ষেত্রে একটি কার্যকরী কাঠামোগত ব্যবস্থাপনা (ফ্রেমওয়ার্ক) নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলেই আমরা মনে করি।

আমরা বলতে চাই, পরিবেশ সুরক্ষা একটা বহুমাত্রিক বিষয়। ফলে পরিবেশকে বাজেটে শুধু গুরুত্ব দিলেই হবে না। পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টিও সামগ্রিকভাবে অগ্রাধিকার নিরূপণের ক্ষেত্রে স্পষ্ট করে তোলার প্রয়োজন আছে এবং সেখানে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণকেও অগ্রাধিকার দিতে হবে।

আরেকটি বিষয়, বাজেট বক্তৃতায় কখনো বলা হয় না— এই বাজেটটি কিভাবে তৈরি করা হলো, কখন, কীভাবে কার কার সাথে কথা বলা হলো। আমরা মনে করি, জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন বাজেটে তখনই হবে যখন বাজেটে চাহিদা ও দাবিগুলোর সন্নিবেশন ঘটবে। বাংলাদেশের বাজেট যেভাবে তৈরি করা হয়, তাতে এই সুযোগ কখনোই ছিলো না, এখনো নেই। নাগরিকের চাহিদাগুলোকে, পরিবেশের প্রকৃত সমস্যাকে কি প্রক্রিয়ায় তুলে আনা হবে তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন নেই।

পরিশেষে, দেড়শ বছর আগে বলা ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস কিংবা একশ বছর আগে রবীন্দ্রনাথের বলা প্রকৃতির প্রতিশোধের কথাটা ইতিহাসে যেনো বারবারই সত্যি হয়েছে। আর সেই ধরনের সত্যি আমরা চাই না। আসুন এবার আমরা কোভিড-১৯ থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে প্রকৃত অর্থেই সুন্দর এক মৈত্রীর বন্ধন রচনা করি। তাই এবারের বাজেটটি পরিবেশ দৃষ্টিকোণ থেকে আবারো পুনর্মুল্যায়ন করে, পরিবেশ রক্ষার ওপর জোর দিয়ে এবং প্রতিবেশ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করার ওপর গুরুত্ব দিতে আমরা সরকারের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, এখানে বরাদ্দের বিষয়টি বিবেচনার পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া দরকার পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনার দিকে।

লেখক : কলামিস্ট

আমারসংবাদ/জেআই