Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

‘মুক্তিযুদ্ধের কাজে অন্যরকম অনুভূতি’

জুন ১৯, ২০২১, ০৬:৩০ পিএম


‘মুক্তিযুদ্ধের কাজে অন্যরকম অনুভূতি’
  • অভিনয় নিয়ে নিজের ভাবনা আগের চেয়ে বদলেছেন গুণী অভিনেত্রী তানভীন সুইটি। অন্য কাজের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের গল্প তাকে আলোড়িত করে ভিন্নভাবে। টিভি নাটকের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীকে রাজনীতির মাঠেও সরব দেখা যায়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রকিব হোসেন

অনেক বছর ধরে কাজ করছেন। ক্যারিয়ারের এই সময়ে এসে একটি স্ক্রিপ্টে কী খোঁজেন? এখনকার কাজ নিয়েই বা আপনার ভাবনা কেমন?

এখনো দর্শক চায় যে, আমরা স্ক্রিনে থাকি। কিন্তু আমার ভাবনা হলো, অনেক বছর ধরেই তো আমরা কাজ করছি, এখন কাজ করতে গেলে ভাবি ভালো একটা স্ক্রিপ্ট হবে, গল্পটা ভালো হবে, আমার চরিত্রটাও ভালো হতে হবে। এখানে যেন আমার অভিনয় করার সুযোগ থাকে। আসলে যে কাজটিই করি না কেনো, সেটা যেন ভালো হয়, পরিচালক যেন ভালো হয়, সহশিল্পীদেরও ভালো চাই।

এখন আপনার যে চাওয়া—প্রত্যাশা মতো কী সব পাচ্ছেন?

এটা খুবই কম পেয়ে থাকি। কিছুদিন আগে একটা কাজ করেছি পরিচালক আকরাম খানের। খুবই ভালো একটা কাজ। মুক্তিযুদ্ধের ওপর নাটকটা। স্ক্রিপ্ট খুব ভালো। আসলে আমরা জীবনে এত স্ক্রিপ্ট পড়েছি, একটা স্ক্রিপ্ট পড়ার পরই বুঝে যাই চরিত্রটি কেমন হবে, কাজটা কেমন হবে। এই নাটকের স্ক্রিপ্ট পড়ার সময়ও আমার তেমনটি হয়েছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে ডিরেক্টরের ওপর বিশ্বাস থাকা। এটা ছিল, তাই ভেবেই নিয়েছি কাজটি ভালো হবে।

অন্য দশটা কাজের চেয়ে যখন মুক্তিযুদ্ধের কোনো কাজ করেন, তখনকার অনুভূতিটা কেমন হয়?

ওটা তো অন্যরকম একটা অনুভূতি। আমরা তো মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। আমরা ছোটবেলায় বই পড়ে, বাবা-চাচাদের এমনকি বোনদের স্বামীদের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনেছি। যেমন মুক্তিযুদ্ধ যেদিন শুরু হলো, আমার বাবা  সেদিন বসিলা একটা জায়গা রয়েছে, সেটা পার হয়ে আমাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন গোপালগঞ্জে। এই যে মুখে মুখে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনা, এ থেকেই বিষয়টি আমাদের ভেতরে আছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের অনেক কাজ করেছি। একটি চরিত্র যখন প্লে করতে যাই, তখন আমাদের অনেক পড়াশোনা করতে হয়। চরিত্রটি সম্পর্কে ভালো করে জানতে হয়। তখনকার কস্টিউম কী ছিল সে বিষয়েও ভাবতে হয়। যখন করোনা প্রথম শুরু হলো-পাঁচমাস আমি ঘর থেকে একেবারেই বের হইনি। এর মাঝেই হঠাৎ করে ‘উনিশশো পঁচাত্তর’ শিরোনামের একটা ফিল্মের অফার আসলো। এদিকে আমি তো ঘর থেকে বের হই না, কিন্তু আবার ক্যারেক্টারটাও মিস করতে চাই না। তখন অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই কাজটি করেছি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরের দুইদিন মানুষ কী করেছিল, সেটার ওপরই ফিল্মের গল্পটি ছিল। এই ছবিতে আমি আমাদের তাজউদ্দিন আহমেদের ওয়াইফ জোহরা তাজউদ্দিনের চরিত্রটা করেছি। এই চরিত্রটি করতে গিয়ে আমাকে একটু গবেষণা করতে হয়েছে। আমি ওনাদের সম্পর্কে যতটুকু জানি, আরও বেশি জানার চেষ্টা করেছি। এরপর তো কাজটা করলাম। মুক্তিযুদ্ধের কাজ করতে গেলে একটা অন্যধরনের অনুভূতি কাজ করে।

অনেক সময়ই আমরা আক্ষেপ করি, যে উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে—এর বাস্তবায়ন হয়নি। একজন অভিনেত্রী ও সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনার বক্তব্য শুনতে চাই।

আসলে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করার পর খুব একটা সময় পাননি দেশ গড়ার। পঁচাত্তরে তো তাকে হত্যা করা হলো। অনেকে বলেন স্বাধীনতার উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল হয়নি। কিন্তু যে দলটি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে, পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে অনেক বছর তারা ক্ষমতায় ছিল না। বঙ্গবন্ধু চৌদ্দ বছর জেলই খেটেছেন। তিনি দেশের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। বঙ্গবন্ধুর পর যারা দেশ শাসন করেছেন, তারা জাতির পিতার ইতিহাস মুছে দিয়েছিলেন বা মুছে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। যারা রাজাকার ছিল, তাদেরই দেশের ভালো ভালো জায়গায় বসানো হয়েছিল। এখন যদি বলি, আমরা স্বাধীন করে কী পেয়েছি? প্রশ্নটা অবান্তর। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ তো অনেকটা সময় ক্ষমতায় ছিল না। এখন তো প্রধানমন্ত্রী দেশটা গড়ছেন। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তো আরেকটু সময় দিতে হবে। তিনি দেশের যে উন্নয়ন করেছেন, শুধু শহরগুলোতেই নয়  গ্রামে-গঞ্জে গেলেই তা চোখে পড়ে।

সেলিব্রিটিদের রাজনীতিতে আসা দর্শকদের অনেকেই পছন্দ করেন না। আপনি তো এমনিতেই জনপ্রিয়, কোন ভাবনা থেকে রাজনীতিতে এলেন?

আসলে ব্রিটিশ আমল থেকেই শিল্পীরা দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে আসছেন। আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কথা বললেও দেখবো- শিল্পীরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে জাগরণমূলক গান করে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন। নব্বইয়ের গণআন্দোলনসহ দেশের যে কোনো সংকটে শিল্পীরা রাজপথে দাঁড়িয়ে গেছে। আমার মনে পড়ে, নাইনটি ফাইভে আমি যখন থিয়েটার করি, যে কোনো রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে আমরা রাজপথে পথনাটক করতাম। এটা ভেতর থেকেই আসে। ম্যাক্সিমাম শিল্পীরাই কিন্তু স্বাধীনতার পক্ষের। আমরা যখন স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলি, অনেকে কটূকথা বলে। আবার অনেকে এপ্রিশিয়েটও করে। সবারই তো রাজনীতি করার স্বাধীনতা রয়েছে। আমি এ দেশের একজন নাগরিক। আমার কী রাজনীতি করার স্বাধীনতা নেই?   

আমারসংবাদ/জেআই