Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

প্রবাসবন্ধু কলসেন্টারে ২৪ ঘণ্টা সেবা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ২০, ২০২১, ০৬:৪৫ পিএম


প্রবাসবন্ধু কলসেন্টারে ২৪ ঘণ্টা সেবা

প্রবাসী ও পরিবারের কল্যাণে কাজ করছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। প্রবাসে বাংলাদেশিদের এবং বাংলাদেশে তাদের পরিবারের সুরক্ষায় কল্যাণমূলক নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রবাসী কর্মীদের সেবা প্রদান করে আসছে। গত বছর শুরু হওয়া করোনা সংকটেও প্রবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের জন্য অর্থবহ ও টেকসই কল্যাণ নিশ্চিত করাই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান লক্ষ্য। প্রবাসী কর্মীদের আইনগত সহায়তাসহ সার্বিক কল্যাণ সাধন, প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী কর্মীর পরিবারের জীবনমানের উন্নয়ন সাধন করা, প্রবাসী কর্মীর সন্তানের শিক্ষা অর্জনে আর্থিক সহায়তা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বোর্ড।

জীবিকার প্রয়োজনে বিশ্বের ১৬০টি দেশে প্রায় এক কোটির বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করছেন। করোনা সংকটে প্রবাসীদের জন্য বেশকিছু কল্যাণমুখী উদ্যোগ নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। এমনই এক উদ্যোগ করোনা সংক্রমণ এড়াতে সৌদি আরবে যেসব প্রবাসী কর্মীকে বাধ্যতামূলক হোটেল কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে, তাদের আর্থিক সহায়তা দেবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। ইতোমধ্যে বিষয়টি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছে। এতে বলা হয়, মহামারি করোনা সংকটে সৌদি আরব সরকার কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী চলতি বছরের ২০ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত প্রবাসীরা বাংলাদেশে ছুটি শেষে নিজ খরচে বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন পালন করেছেন বা করবেন, তাদের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে কর্মী প্রতি ২৫ হাজার টাকা করে ভর্তুকি দেয়া হবে। কর্মী বা তার মনোনীত প্রার্থীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি অর্থ প্রেরণ করা হবে। এই অর্থ পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মীকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট www.probashi.gov.bd অথবা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ওয়েবসাইট www.wewb.gov.bd অথবা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ওয়েবসাইট www.bmet.gov.bd থেকে আবেদনপত্র ডাউনলোড করে অথবা দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থিত প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক থেকে সংগ্রহ করে তা পূরণ করে ৭ জুন থেকে ফ্লাইটের দিন বহির্গমনের আগে বিমানবন্দরে প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কে জমা দিতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হবে। সেগুলো হলো— জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) দেয়া স্মার্টকার্ড বা ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ডের ফটোকপি, পাসপোর্টের প্রথম চার পৃষ্ঠার ফটোকপি, পাসপোর্টের সঙ্গে সংযুক্ত ভিসার ফটোকপি, টিকিটের ফটোকপি এবং হোটেল বুকিংয়ের ডকুমেন্টের ফটোকপি। সৌদিপ্রবাসী যেসব কর্মী ইতোমধ্যে দেশটিতে গিয়ে নিজ খরচে কোয়ারেন্টাইন শেষ করেছেন বা করছেন, তাদের একই নিয়মে সংশ্লিষ্ট আবেদনপত্র পূরণ করে ৩০ জুনের মধ্যে সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস, রিয়াদ অথবা বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল, জেদ্দায় ডাক মারফত জমা দিতে হবে।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড সূত্র মতে, শুধু সৌদি আরব নয়, করোনা ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি দেশের বাংলাদেশি প্রবাসীদের পাশে রয়েছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসফেরত কর্মীদের জন্য সহজ শর্তে ৭০০ কোটি টাকার বিশেষ পুনর্বাসন ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০ কোটি টাকা বিনা সুদে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে দিচ্ছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। ইতোমধ্যে ৬০ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে, অবশিষ্ট ১৪০ কোটি টাকাও প্রদান করা হবে। এছাড়া করোনাকালে বিদেশ গমনেচ্ছু, কর্মরত ও প্রত্যাগত কর্মীদের সেবায় নানা ধরনের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের বর্তমান মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. হামিদুর রহমান যোগদান করার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটির কাজে নতুন গতি এসেছে। মাঠপ্রশাসনের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছেন তিনি। নানা উদ্যোগ এবং কঠোর নির্দেশনায় করোনা সংকটেও ঝুঁকি নিয়েই মাঠে কাজ করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে প্রবাসীদের কল্যাণে নানা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন তিনি। সময়ে সময়ে নেয়া পদক্ষেপের কারণে করোনা সংক্রমণ রোধে তার ভূমিকা প্রশংসা পেয়েছে। যার কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার অর্জন করেছেন মো. হামিদুর রহমান।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড সূত্র জানায়, বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের জন্য প্রাক বহির্গমন ব্রিফিং প্রদান, বিমা সুবিধা নিশ্চিত, মৃত প্রবাসী কর্মী ও তার পরিবারের জন্য আর্থিক অনুদান, মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ, মৃতদেহ দেশে আনয়ন, মৃতদেহ পরিবহন ও দাফন খরচ, অসুস্থ প্রবাসী কর্মীদের জন্য আহত বা অসুস্থ কর্মীদের আর্থিক সাহায্য, অ্যাম্বুলেন্স সাহায্য, দেশে প্রবাসী কর্মীদের পরিবারের জন্য শিক্ষাবৃত্তি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির নিমিত্ত প্রত্যয়নপত্র, প্রবাসী কর্মীদের সম্পদ রক্ষা, প্রবাসী কর্মীদের জন্য সেইফ হোম,  আইনগত সহায়তা, প্রবাসে কর্মীর সন্তানদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, প্রবাসবন্ধু কল সেন্টার, নারী কর্মী দেশে ফেরত আনয়ন, সদস্যপদ নিবন্ধন, মিশনের মাধ্যমে সহায়তা, ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, দেশে ও বিদেশে অন্যান্য সেবা, বিপদগ্রস্ত কর্মী ফেরত আনয়ন, সচেতনতা প্রচারণা, বিদেশে আটক কর্মীদের মুক্তকরণ, আইটি সেবা, আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসসহ নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে বোর্ড। অর্থাৎ প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের জন্য অর্থবহ ও টেকসই কল্যাণ নিশ্চিত করাই বোর্ডের প্রধান কাজ।  প্রবাসীদের যেকোনো সমস্যায় বা প্রয়োজনে প্রবাসবন্ধু কল সেন্টার পরিচালনা করে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। প্রবাসী কর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা কল সেন্টারের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা নানা সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন। কল সেন্টারের যোগাযোগ নম্বর হলো— +৮৮০১৭৮৪ ৩৩৩ ৩৩৩, +৮৮০১৭৯৪ ৩৩৩ ৩৩৩, +৮৮০২-৪৮ ৩১৪ ৮৮৮। দেশে-বিদেশে কর্মীদের পরিবার-পরিজনকে সহযোগিতা কিংবা উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে ১৯৯০ সালে ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল’ গঠন করে। পরে ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড আইন, ২০১৮’ এর মাধ্যমে ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড’ একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

আমারসংবাদ/জেআই