Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪,

রাজধানীতে নেই জনসমাগম

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই ১, ২০২১, ০৬:৫৫ পিএম


রাজধানীতে নেই জনসমাগম
  • যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারায় আটক চার শতাধিক
  • কঠোর অবস্থানে র্যাব-পুলিশ  সেনাবাহিনী, বিজিবি ও ম্যাজিস্ট্রেট
  • রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে কাঁটাতারের ব্যারিকেড
  • ফাঁকা প্রধান সড়ক, পাড়া-মহল্লায় আড্ডা-গেদারিং

সাতদিনের সরকারি বিধিনিষেধ বা কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন গতকাল বৃহস্পতিবার ফাঁকা ছিলো রাজধানীর প্রধান প্রধন সড়ক। অপ্রয়োজনে বের হওয়া মানুষের অবাধ চলাফেরা ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে ছিলো র্যাব-পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি সদস্য ও ম্যাজিস্ট্রেটরা। রাজধানীর প্রতিটি মোড়ে চেকপোস্ট ও কাঁটাতারের ব্যারিকেড বসিয়ে ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। শুধু সরকারি ও বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের গাড়ি, পণ্যবাহী বাহন ও রিকশা-ভ্যান চলেছে বিভিন্ন রাস্তায়। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে রাস্তায় নামতে দেয়া হয়নি।

লকডাউনের প্রথম দিনে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় রাজধানীতে ৪৯৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

এ ছাড়া বিধিনিষেধ অমান্য করায় আরও ২৫৮ জনকে নিয়মিত মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। সাজা দেয়া হয়েছে ৮ ব্যক্তিকে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ৪ লাখ ৯২ হাজার ৫০৭ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ২৭৪টি গাড়িকে মামলা দেয়া হয়েছে। আটক করা হয়েছে ৬টি গাড়ি। রেকারিং করা হয়েছে মোট ৭৭টি গাড়ি। ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক জরিমানা করা হয়েছে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০ টাকা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, যৌক্তিক কারণ ছাড়া যারাই বের হবে তাদেরকেই মামলার মুখোমুখি হতে হবে। গ্রেফতারকৃতদের বাইরে যারা আটক হয়েছেন তারা যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারলে তাদের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হবে। আর যদি যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারে সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যতদিন লকডাউন চলবে ততদিন পুলিশের এ তৎপরতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। পুলিশ সদস্যরা বলছেন, যারা বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে বের হয়েছেন, তাদের কেউ যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারেননি। আটককৃতরা লকডাউনের পরিস্থিতি দেখতেই রাস্তায় বের হয়েছিলেন। কঠোর লকডাউনের এমন পরিস্থিতির মাঝেও রাজধানীর গলিতে লোকজনের সমাগম ছিলো চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়াও দোকানের শাটার ওঠা-নামার খেলা চলতে দেখা গেছে।

দিন দিন ঊর্ধ্বমুখী বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংক্রমণের সংখ্যা। থেমে নেই মৃত্যুর মিছিল। সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা  প্রতিদিন রেকর্ড ছাড়াচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। এ অবস্থায় সাতদিনের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সাতদিনের সরকারের ওই বিধিনিষেধ বা কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন গতকাল ছিলো গতকাল বৃহস্পতিবার। লকডাউন চলবে আগামী ৭ জুলাই পর্যন্ত। তবে এই সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে বিধিনিষেধের পরিসীমা আরও বাড়তে পারে। কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন রাজধানীসহ সারা দেশের বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, উপজেলা শহর ছিলো র্যাব-পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি সদস্যদের দখলে। তারা অপ্রয়োজনীয় রাস্তায় বের হওয়া মানুষের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে আনতে কঠোর অবস্থানে ছিলেন। রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, মতিঝিল, ফার্মগেট, শাহবাগ, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর, কাকরাইল, নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, বিজয়নগর, মীরপুর, আজিমপুর, বাড্ডা, রামপুরা, শাহবাগ, ধানমন্ডি, হাতিরপুল, মোহাম্মদপুর, শংকর, জিগাতলা, সিটি কলেজ মোড়, রাসেল স্কয়ার, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে, শ্যামলী, কল্যাণপুর ও গাবতলী ঘুরে  দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি রাস্তার প্রবেশমুখে চেকপোস্ট ও কাঁটাতারের ব্যারিকেড বসিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। যারা কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে বিধিনিষেধ না মেনে রাস্তায় বের হয়েছেন, তাদের নানামুখী প্রশ্নের মুখোমুখি করেছেন এবং অপ্রয়োজনে রাস্তার বের হওয়ার যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারায় আটক, গ্রেপ্তার, জরিমানা এবং শাস্তি স্বরূপ দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রেখেছেন। একই শাস্তি দেয়া হয়েছে প্রয়োজনে রাস্তায় নামা মানুষের মুখে মাস্ক না থাকায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, সরকার আরোপিত বিধিনিষেধ ভঙ্গ করায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ৪৯৭ জনকে আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি, জরিমানা করা হয়েছে ২৯ লাখ সাত হাজার ১০০ টাকা। লকডাউনের প্রথম দিনে রমনা এলাকায় যানবাহন ও দোকানের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা দায়ের এবং ৫৮ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ এলাকায় দুজনকে আটক এবং ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লালবাগ এলাকায় বিভিন্ন যানবাহন ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে ২৫টি মামলা ও জরিমানা করা হয় ও গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে। মতিঝিলে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা করা হয়। জরিমানা করা হয় ৪৫ হাজার ২০০ টাকা। এ এলাকায় বিনা কারণে ঘোরাঘুরির অপরাধে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওয়ারি এলাকায় দায়ের করা হয় ১৫টি মামলা। জরিমানা করা হয় ৭০ হাজার টাকা। এ এলাকাতেও তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তেজগাঁওয়ে আটক করা হয় ১৬৭ জনকে। মিরপুরে মামলা করা হয় ৯৮টি। বিনা কারণে ঘোরাঘুরি করায় বিভিন্ন জনকে জরিমানা করা হয় ২৫ হাজার টাকা। পুলিশ আটক করে ৭৫ জনকে। গুলশানে ২১টি মামলা দায়ের করে পুলিশ। জরিমানা করা হয় ৬১ হাজার টাকা। গুলশানের বিভিন্ন এলাকায় বিনা কারণে রাস্তায় বের হওয়ায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে বিধিনিষেধ না মেনে রাস্তায় বের হওয়ায় আটককৃত ব্যক্তিরা বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে বের হওয়ার কেউ যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারেননি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে রাজধানীতে লকডাউন কার্যকর করতে পাড়া-মহল্লাসহ প্রধান সড়কে টহল জোরদার করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও রাস্তার ওপর বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। এসব চেকপোস্টে পথচারী বা যানবাহনে তল্লাশি করেছে পুলিশ। মানুষ যেন অযথা ঘোরাফেরা করতে না পারে, সে জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেয়। বিকেল ৫টার পর আরও বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। মূলত সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী কেনাকাটার জন্য চলাচলের অনুমতি ছিলো। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর এই কঠোর নজরদারি আগামী ৭ জুলাই পর্যন্ত চলবে।

সাতদিনের সরকারি বিনিষেধ বা কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে গতকাল রাজধানীর রাস্তাঘাট ছিলো একেবারেই ফাঁকা। শুধু সরকারি ও বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের গাড়ি, পণ্যবাহী বাহন ও রিকশা-ভ্যান চলছে বিভিন্ন রাস্তায়। অধিকাংশ স্থানে আধিক্য ছিল রিকশা-ভ্যানের।  বন্ধ ছিলো ব্যক্তিগত মাইক্রোবাস। তবে অতি জরুরি প্রয়োজনে, কেউ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে রাস্তায় নামলেও তাকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। কঠোর বিধিনিষেধে বের হয়ে যৌক্তিক উত্তর দিতে না পারায় অনেককে গুনতে হয়েছে জরিমানা। সরকার ঘোষিত লকডাউনে রাজধানীর প্রধান প্রধন সড়কে এমন চিত্র থাকলেও উল্টো চিত্র ছিলো রাজধানীর অলিগলিতে। কেউ কেউ কঠোর লকডাউন পরিস্থিতি দেখতে বাসা থেকে বেরিয়েছেন। কেউ আবার চা, বিড়ি ও সিগারেট খাওয়াসহ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেন। এদের অধিকাংশ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানছে না। পুলিশের সাথে লুকোচুরি খেলেছেন পাড়া-মহল্লার ছোট-বড় দোকানদাররা। তাদের পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দোকানের শাটার ওঠা-নামার খেলায় মত্ত থাকতে দেখা গেছে।  রাজধানীর বিভিন্ন মহল্লায় ঘুরে এসব দৃশ্য দেখা  যায়। এ ছাড়া রাস্তাঘাটে তিন চাকার ভ্যানে করে সবজিসহ নানা রকম জিনিসপত্র বিক্রি করতে দেখা যায়। সেখানেও লোকজনের ভিড় দেখা যায়। যদিও বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন খাবারের দোকান খোলা থাকলেও সেখানে বসার ব্যবস্থা বন্ধ করেই খাবার-বিক্রি করেছেন তারা।   

রাজধানী ছাড়াও সারা দেশের বিভাগীয় শহর, জেলা শহর ও উপজেলা শহরে সাতদিনের সরকারি বিধিনিষেধ বা কঠোর ‘লকডাউন’ শুরু প্রথম দিনে রাস্তাঘাট একেবারেই ফাঁকা ছিলো। অপ্রয়োজনে সাধারণ মানুষকে রাস্তায় দেখা যায়নি। যদিও বেশ কিছু বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরে বিধিনিষেধ না মেনে যারা রাস্তায় বের হয়েছেন তাদের নানামুখী প্রশ্ন করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় তারা যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারায় অনেককে আটক করা হয়েছে।

আমারসংবাদ/জেআই