Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

পাঁচ বছরে ৩০ হাজার ২৭২টি ধর্ষণ মামলা

জুলাই ১, ২০২১, ০৬:৫৫ পিএম


পাঁচ বছরে ৩০ হাজার ২৭২টি ধর্ষণ মামলা
  • টাকার বিনিময়ে ধর্ষণ মামলা নিষ্পত্তি নয়
  • নির্দেশনা বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ
  • ৬ মাসে ধর্ষিত ৭৬৭ নারী

বেড়েছে ধর্ষণের ঘটনা। ধর্ষণের মামলাও বেড়েছে উদ্বেগজনকহারে। তবে এসব মামলা আদালতে এসেই স্থবির হয়ে আছে। বিচারের অপেক্ষায় পার হচ্ছে বছরের পর বছর। ফলে অনেক সময় সমঝোতায়ও শেষ হচ্ছে মামলা। কঠোর আইন করেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি ধর্ষণের মতো ঘটনা। প্রতিনিয়তই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্ষণের খবর আসছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭৬৭ জন নারী। এর মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬১১ জন, সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৫৬ জন নারী। এ ছাড়া ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৪ জনকে এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে পাঁচজন নারী। এই ছয় মাসে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় ঘটেছে ১৬৬টি। নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছেন এক হাজার ৩৯ শিশু। ৩০ জুন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশে আসা এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে সারা দেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গত পাঁচ বছরে ৩০ হাজার ২৭২টি মামলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের পক্ষ থেকে পাঠানো ২০২০ সালের ২১ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত পাঁচ বছর সময়ের এমন তথ্য উঠে এসেছে। উচ্চ আদালতে জমা দেয়া প্রতিবেদনে টাকার বিনিময়ে কোনো ধর্ষণ মামলার মীমাংসা হয়নি উল্লেখ করে পটুয়াখালী ও পিরোজপুর জেলার (২০১৫-১৯) মামলার পরিসংখ্যান দেয়া হয়। টাকার বিনিময়ে যাতে ধর্ষণ মামলা নিষ্পত্তি না করা হয়, আদালতের রায় ও নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়ার কথা বলা রয়েছে। এ ছাড়াও আদালতের নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হচ্ছে এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নজরদারি অব্যাহত আছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় প্রশাসনে নজরদারি আরো বাড়াতে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের হওয়া মামলার বিচারের ধীরগতির জন্য পুলিশের গাফিলতি ও আদালতের কাঠামো অনেকাংশে দায়ী। বিচারক সংকট, সাক্ষী গরহাজিরসহ নানা কারণে এ সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে না। আর ধর্ষণের মামলায় সাজার নজির খুব কম তাই অপরাধীরা এসব অপরাধ করতে একটুও দ্বিধাবোধ করে না। সুতরাং বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে পারলেই এসব অপরাধ কমানো সম্ভব হবে বলে মত দেন তারা। এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আইন, বিচার ও সংসদ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং নারী ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানির নির্ধারিত দিনে গত বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চে ওই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এদিন পুলিশ মহাপরিদর্শকের পক্ষ থেকেও একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। সেই সঙ্গে আগামী ১৫ জুলাই পরবর্তী শুনানির জন্য দিন রেখেছেন আদালত।

আদালতে এদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আইনজীবী অনীক আর হক, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. শাহীনুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী। আইনজীবী অনীক আর হক বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের দাখিল করা প্রতিবেদনে এসেছে ধর্ষণের অভিযোগে গত পাঁচ বছরে ৩০ হাজার ২৭২টি মামলা আদালতে হয়েছে। পুলিশ মহাপরিদর্শকের পক্ষ থেকে দাখিল করা প্রতিবেদনে ধর্ষণের ঘটনায় সালিশ রোধে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, অপর বিবাদিদের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন এখনো আসেনি। আইন সচিব, সমাজকল্যাণ সচিব এবং নারী ও শিশু-বিষয়ক সচিবের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে ওই দিন পরবর্তী শুনানির জন্য দিন রেখেছেন আদালত। এ বিষয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আইনজীবী মো. শাহীনুজ্জামান বলেন, পুলিশ মহাপরিদর্শকের পক্ষ থেকে দাখিল করা প্রতিবেদনে জেলাভিত্তিক বর্ণনা উল্লেখ রয়েছে। খুলনা বিভাগের ১০টি জেলায় ২০১৬ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত এক হাজার ৮০২টি ধর্ষণ মামলা হয় বলে প্রতিবেদনে এসেছে। এর মধ্যে এক হাজার ৫৯৭টি বিচারাধীন, ১৮৪টি তদন্তাধীন ও ৩৬টিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। ধর্ষণের মতো শাস্তিযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা, সালিশ বা মীসাংসা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এবং ইতোপূর্বে এ বিষয়ে দেয়া তিনটি রায়ের নির্দেশনা বাস্তবায়ন চেয়ে গত বছরের ১৯ অক্টোবর আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পক্ষে একটি রিট আবেদন করা হয়। এর শুনানি নিয়ে গত বছরের ২১ অক্টোবর আদালত রুলসহ আদেশ দেন। ধর্ষণের ঘটনায় সালিশ বা মীমাংসা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়ে সেদিন হাইকোর্ট ধর্ষণের ঘটনায় গত পাঁচ বছরে সারা দেশের থানা, আদালত ও ট্রাইব্যুনালে কতগুলো মামলা হয়েছে, তা জানিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেন। এর ধারাবাহিকতায় প্রতিবেদন জমা পড়ে।

আমারসংবাদ/জেআই