Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

অপরাধ দমন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জে সফল র‍্যাব

জুলাই ১৩, ২০২১, ০৭:১০ পিএম


অপরাধ দমন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জে সফল র‍্যাব

প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যাবধি জঙ্গি, জলদস্যু বা চরমপন্থিদের মূলোৎপাটন থেকে শুরু করে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান অথবা গুরুতর অপরাধীদের গ্রেপ্তার, অবৈধ অস্ত্র এবং বিস্ফোরক উদ্ধারসহ প্রতিটি পদক্ষেপেই ইতোমধ্যে অভাবনীয় সাফল্য ও সুনাম অর্জন করেছে পুলিশের এলিট ফোর্স র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‍্যাব)। সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব আর দায়িত্ববোধেরও এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে র‍্যাব ফোর্সেসের সদস্যরা। নানামুখী ঈর্ষণীয় সাফল্যে ইতোমধ্যেই র‍্যাব অর্জন করেছে দেশের মানুষের আস্থা, হয়ে উঠেছে নির্ভরতার প্রতীকও।

বর্তমান করোনাকালীন সময়েও ঘরবন্দি তথা অবরুদ্ধতায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে সামাজিক সচেতনতাসহ বহুবিধ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনেও নিরবচ্ছিন্ন কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটির প্রতিটি সদস্যই। এতেও মিলছে সাফল্য। যে সাফল্য জাতিকে করেছে আশান্বিত। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক জীবনধারা থমকে যাওয়ার মুহূর্তেও অ্যাম্বুলেন্স, নিত্যপণ্য পরিবহনের গাড়িতে করে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন নিয়ে মাদককারবারিদের চলা কৌশলী বাণিজ্যের লাগাম টেনে ধরতেও সক্ষম হয়েছে র‍্যাব। ইতোমধ্যে ১২ হাজারেরও অধিক মাদককারবারিকে আনা হয়েছে আইনের আওতায়। এছাড়া নারী ও শিশু অধিকার রক্ষা, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেজাল খাদ্যদ্রব্য এবং মানহীন, নকল ও অবৈধ ওষুধের অপবাণিজ্য, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধসহ সমসাময়িক বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধেও নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে সার্বিক অপরাধ দমনে র‍্যাব সদস্যদের ভূমিকা সংস্থাটির ইমেজকে দাঁড় করিয়েছে এক অনন্য উচ্চতায়।  চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই গত বছর পুলিশের বিশেষায়িত এই ফোর্সের মহাপরিচালকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। প্রাণঘাতী চলমান মহামারিতে বাহিনীর সদস্যদের সংক্রমণরোধ থেকে শুরু করে সরকার ঘোষিত লকডাউন নিশ্চিত এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েও মেধা আর দক্ষতার বলে ইতোমধ্যেই নেতৃত্বের সেই অগ্নিপরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

সংস্থাটির সদর দপ্তর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন র‍্যাব ডিজির নেতৃত্বে আসার পর গত এক বছরে তিন শতাধিক জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি সাইবার ওয়ার্ল্ডেও নিয়মিত পেট্রোলিং অব্যাহত রেখেছে র‍্যাব। যার সুফল হিসেবে জঙ্গিরা আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতেই পারেনি। যা দেশের সকল স্তরের মানুষের কাছে ব্যাপক প্রশংসাও কুড়িয়েছে ইতোমধ্যে। করোনাকালীন গুজব রটনার অভিযোগেও ২১ জনকে আনা হয়েছে আইনের আওতায়। কক্সবাজারের গভীর সমুদ্র থেকে উদ্ধার করা হয় ১৩ লাখ পিস ইয়াবা। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভামঞ্চে গ্রেনেড নিক্ষেপকারী সাজাপ্রাপ্ত আসামি ইকবাল হোসেন ওরফে জাহাঙ্গীর ওরফে সেলিমকে গ্রেপ্তার করাও ছিলো চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের নেতৃত্বাধীন র‍্যাবের অন্যতম সাফল্য। 

চলতি বছরের জানুয়ারিতে কুর্মিটোলায় র‍্যাব সদর দপ্তরে ‘নব দিগন্তের পথে’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৯ জঙ্গি সদস্য ‘আত্মসমর্পণ’ করে। আত্মসমর্পণকৃত ওই ৯ জঙ্গিকে ‘ডি-রেডিক্যালাইজেশন’ অ্যান্ড ‘রিহ্যাবিলিটেশন’-এর মাধ্যমে সন্ত্রাস ও চরমপন্থার জীবন পরিত্যাগ করে শান্তি ও আলোর পথে ফিরিয়ে আনে র‍্যাব। র‍্যাব ডিজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের নেতৃত্বের ৯ মাসের মাথায় যুগান্তকারী এ উদ্যোগের বাস্তবায়ন হয়। আর এই উদ্যোগের মাধ্যমেই র‍্যাব ঘটাতে চায় জঙ্গিদের মানসিকতার পরিবর্তন। তাই র‍্যাব সদর দপ্তর মনে করে, কেবলমাত্র আইনের আওতায় এনেই জঙ্গিবাদ নির্মূল করা সম্ভব নয়। এ জন্যই ‘ডি-রেডিক্যালাইজেশন’ অ্যান্ড ‘রিহ্যাবিলিটেশন’ থিউরি প্রয়োগ করছে র‍্যাব। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতেই জঙ্গি সংশ্লিষ্ট এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। যেটি একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ।

এদিকে প্রতিষ্ঠার পর গত ১৭ বছরে সার্বিকভাবে অনেকাংশেই সক্ষমতা বেড়েছে র‍্যাবের। উগ্র জঙ্গিবাদ দমন ছাড়াও দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে পুলিশের এই সংস্থাটি। অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের অপতৎপরতা, চোরাচালান, জাল মুদ্রা ও পাসপোর্ট প্রস্তুত এবং অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা রোধেও র‍্যাবের ফলপ্রসূ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টকারী চরমপন্থি এবং বনদস্যু দমনেও সফল র‍্যাব। সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করার সাফল্য ধরে রেখে জলদস্যু আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া অন্যান্য উপকূলীয় অঞ্চলেও সমপ্রসারিত করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম উপকূলীয় অঞ্চলে গত বছরের ১২ নভেম্বর চট্টগ্রামের বাঁশখালী, মহেশখালী এবং কুতুবদিয়ায় ১২টি দস্যু বাহিনীর ৩৪ জন দস্যু, ৯৪টি অস্ত্র এবং দুই সহস্রাধিক রাউন্ড গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করে। মানব পাচাররোধ, সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী ভূমিকা পালনেও র‍্যাব সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ও আস্থার মূল্যায়ন করেই দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে র‍্যাব। 

এছাড়াও চলমান করোনা মহামারিতেও স্বাস্থ্য খাতে নজিরবিহীন অনিয়ম-দুর্নীতি বিশেষ করে করোনা পরীক্ষা নিয়ে ভয়ানক জালিয়াতি ও প্রতারণার ঘটনায় সক্রিয় তৎপরতার অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য খাতের অপরাধীদের দুর্গে হানা দেয় র‍্যাব। মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স, করোনা পরীক্ষায় ভুয়া সনদ প্রদান, অর্থের বিনিময়ে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা এবং করোনা চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদকে গ্রেপ্তার ছিলো করোনাকালীন সময়ে র‍্যাবের গুরুত্বপূর্ণ এক অর্জন। এরপর করোনাসহ বিভিন্ন রোগের টেস্টিং কিট ও রি-এজেন্ট জব্দ ও প্রতারক চক্রের মূলহোতাদের গ্রেপ্তারও করে র‍্যাব। গত এক বছরে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, অবৈধ কিট, ভুয়া রিপোর্ট, লকডাউন অমান্য এবং মাস্ক ব্যবহার না করার ঘটনায় প্রায় তিন কোটি টাকা জরিমানা এবং ২৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডও দেয়া হয়েছে। এসব কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে দেশজুড়ে আলোচনা আর প্রশংসার তরী বেয়েই চলেছে র‍্যাব। 

২০০৪ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের প্যারেডে অংশ নেয়ার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করা এই সংস্থাকে সত্যিকারের ‘এলিট ফোর্স’ হিসেবে গড়ে তুলতে বর্তমান সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসহ প্রযুক্তির সব সুবিধার আওতায় এনে আরও শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে ওআইভিএস প্রযুক্তিও চলে এসেছে র‍্যাবের হাতে। যার মাধ্যমে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীকে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। র‍্যাবকে আরও আধুনিক ও শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলতে দীর্ঘ সময় যাবত একাগ্রচিত্তেই কাজ করেছেন পুলিশের বর্তমান আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। র‍্যাবের বহুমুখী অর্জনের এই সফল কারিগরেরই উত্তরসূরি বর্তমান সফল মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

আমারসংবাদ/জেআই