Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

টেকসই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চীনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ

রায়হান আহমেদ তপাদার

জুলাই ২৫, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


টেকসই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চীনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ

বিশ্বশক্তির ভরকেন্দ্র স্থানান্তরিত হচ্ছে। এক দশক ধরে এ কথা বেশ বলাবলিও হচ্ছে। কোন মাত্রায়, কীভাবে ও কোথায় এই স্থানান্তরিত শক্তি ঘনীভূত হচ্ছে- তা নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর সৃষ্টি হওয়া যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক, তথা একমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার অবসান হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন শক্তির ভরকেন্দ্র। কখনও চীনকে কেন্দ্র করে, আবার কখনও চীনের সঙ্গে রাশিয়া এই শক্তির দৌড়ে শামিল হয়েছে। তবে চীন ইতোমধ্যেই অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে চীন বিশ্ববাজার দখলে তৎপর। সময় এখন চীনের অর্থনৈতিক শক্তিকে সামরিক শক্তিতে রূপান্তরিত করার। মহাকাশ অভিযানে চীন ধারাবাহিক চমক দেখাচ্ছে। সিপিসির শতবার্ষিকীতে তা উল্লেখের আগে থেকে ফলাও করে বিশ্বের সামনে প্রকাশ করে চলেছে চীন। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় অবিশ্বাস্য সফলতার কথা বলা হয়েছে। চীনা অগ্রগতির এসব দৃষ্টান্ত উপস্থাপনের পাশাপাশি এবার জোর দিয়ে প্রকাশ করা হলো নতুন আরেক বিশ্বব্যবস্থার কথা। পুরোনো বিশ্বব্যবস্থাকে চীনারা পেছনে ফেলে নতুন এক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলছে। বৈশ্বিক নেতৃত্বের অবস্থান থেকে ঠিক এ ধরনের কথা শুধু যুক্তরাষ্ট্রকে এর আগে বলতে দেখা গেছে। অপেক্ষাকৃত লাজুক ও লুকিয়ে থাকা চীনের ঘোষণা দিয়ে বিশ্ব আসর জমানোর ইঙ্গিত অবাস্তব কিছু নয়। এর সূচনা ধরতে গেলে যুক্তরাষ্ট্রই প্রথম করেছে।  দেশটির নেতৃত্বে বৈশ্বিক রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের প্রধান টার্গেট চীন। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন ইউরোপসহ বিশ্বের বাকি ধনী দেশ ও বন্ধুদের নিয়ে এ লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছে। সম্মিলিতভাবে তারা চীনকে মোকাবিলা বা দাবিয়ে রাখতে চায়। মোট কথা, ঘোষণা দিয়েই যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বচালকের আসনে চীনকে নিয়ে এসেছে। করোনাও যেন চীনের যৌবন প্রকাশ করার জন্য আশীর্বাদ হয়ে এলো।

কিন্তু এর উৎপত্তিস্থল হিসেবে ঘৃণা-লাঞ্ছনা পাওয়ার পর দেখা গেল চীনই একমাত্র দেশ যারা সর্বোচ্চ সফলতার সাথে এর ক্ষয়ক্ষতি সীমিত রাখতে পেরেছে। করোনায় বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে তারাই সবার আগে উদ্ধার করে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নিতে পেরেছে। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালে মহামারির বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি ছয় দশমিক আট শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল। অত্যন্ত দ্রুততার সাথে পরের দুই প্রান্তিকে তারা তা রিকভারি করে এবং অর্থবছরের শেষ প্রান্তে গিয়ে তাদের অর্থনীতি করোনা-পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যায়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রক্ষেপিত হিসাবে উন্নত দেশের জিডিপি ২০২০ সালে সাড়ে পাঁচ শতাংশের বেশি সংকুচিত হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, চীন প্রায় দুই শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে বছরটি শেষ করেছে। ২০২১ সালে চীন বাকি বিশ্বকে বিশাল ব্যবধানে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে। আইএমএফের হিসাবে চলতি বছর চীনের প্রবৃদ্ধি আট দশমিক দুই শতাংশ হবে; ইউরোজোনের পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ ও যুক্তরাষ্ট্রের হবে তিন দশমিক এক শতাংশ। এর পরের বছরগুলোয় সারা বিশ্বে উৎপাদন ও উন্নয়নের যে হিসাব-নিকাশ, সেখানে সব দেশকে পেছনে ফেলে চীন প্রথম অবস্থানে থাকছে। সিপিসির শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে শি জিনপিংয়ের দেয়া বক্তৃতায় এই শক্তিমত্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। চীন তার উদ্বৃত্ত অর্থ নিয়ে যাচ্ছে গরিব দেশগুলোয়। তারা নির্মাণ করে দিচ্ছে অবকাঠামো। ‘রোড অ্যান্ড বেল্ট’ নামে তাদের বৈশ্বিক এ প্রকল্প চলমান। এই চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিশ্ব ঠেকানোর চেষ্টা করছে। এ জন্য তারা পুরোনো ভোঁতা অস্ত্র ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার’ প্রয়োগ করতে চায়। বেশ কয়েক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এগুলোর প্রয়োগ ও কার্যকারিতা দেখলে আমরা বুঝতে পারব, এগুলো সম্পূর্ণভাবে রুগ্ণ ও ভগ্ন অবস্থার মধ্যে রয়েছে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মধ্যে এখন নৈতিক শক্তি খুব কমই রয়েছে, যা তাগড়া চীনকে মোকাবিলা করতে পারে।

গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের পছন্দ অনুযায়ী সরকার পরিচালনা। অথচ এ সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে এবং জনগণ সরকার পরিবর্তনের সম্পূর্ণ অধিকার সংরক্ষণ করবে। সব মিলিয়ে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণ সার্বভৌম কর্তৃত্বের মালিক। গণতন্ত্রের মূল চেতনা হচ্ছে, সর্বজনীন মানবাধিকার। জন্মগতভাবে সবাই এ অধিকার পাবে। ধর্ম-বর্ণ, ভাষা-লিঙ্গ-জাতীয়তা অথবা অন্য কোনো পরিচয়ের কারণে এ অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা যাবে না। জীবন ধারণের অধিকার, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। এসবকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পরিচালিত বিশ্ব নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যতটা ব্যবহার করেছে, তার খুব সামান্যই তারা ব্যবহার করেছে বিশ্ব মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার এখন ক্ষয় হয়ে গেছে। এগুলোর নিবু নিবু অবস্থার কথা জানাচ্ছে তাদের নিজেদের সৃষ্ট নানা প্রতিষ্ঠান। তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, টানা ১০ বছর ধরে গণতন্ত্র ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। হিসাব করে তারা দেখাচ্ছে, ২০২০ সালে এসে গণতন্ত্র ১৯৯০ সালের জায়গায় ফিরে গেছে। অর্থাৎ, বিগত ৩০ বছরে এটি কিছুটা ওপরের দিকে উঠে আবার তলানিতে ঠেকেছে। পতনের এই রেখা আবার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার বদলে এটি সরাসরি পতনের দিকেই রয়েছে। তাদের মতে, ৮৭টি দেশে স্বৈরশাসন চলছে। এগুলোতে বিশ্বের ৬৮ শতাংশ মানুষ বাস করে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের গণতন্ত্র রূপ নিয়েছে নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্রে। গত দশকে উদার গণতান্ত্রিক দেশের সংখ্যা ছিল ৪১। বর্তমানে সেটি কমে ৩২টি হয়েছে। জনসংখ্যার মাত্র ১৪ শতাংশ এখন উদার সমাজে বসবাস করে। এসব দেশে মানবাধিকারের অবস্থা আরও করুণ। সারা বিশ্বে এখন ব্যাঙের ছাতার মতো মানবাধিকার সংস্থা গজিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউ কেউ আবার নিপীড়ক শাসকদের সহযোগী। তবে মানবাধিকারের সঠিক পরিস্থিতিও অনেক প্রতিষ্ঠান তুলে ধরে।

কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবেদন স্বৈরশাসকরা আমলে নেয় না; তারা এসবে কোনো পাত্তাই দেয় না। এ অবস্থায় চীনকে ঠেকানোর জন্য গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের উন্নত মূল্যবোধ জনগণের সামনে ‘ঠাট্টা-মশকরা’ ছাড়া অন্য কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক বিশ্ব শেষ চেষ্টা চালাচ্ছে এগুলো দিয়ে বালির বাঁধ দেয়ার জন্য। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বলতে যা বোঝায়, তার পরিপূর্ণ বিকাশ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে হয়েছে। ওইসব দেশের প্রত্যেকেই তার শতভাগ মূল্যায়ন করে। জনগণ সেখানে ক্ষমতার কেন্দ্রে রয়েছে। ক্ষমতার পালাবদলে তাদের পছন্দ সর্বোচ্চ প্রাধান্য পাচ্ছে। ব্যক্তির স্বাধীনতা মানবাধিকারের শতভাগ চর্চাও তারা করছে। তবে এ স্বাধীনতার কিছু বিকৃতিও রয়েছে। তাদের অনেক দেশ নানা ধরনের অনাচারে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়েছে। এগুলো শেষ পর্যন্ত ধ্বংসই ডেকে আনবে। গণতন্ত্র, মানবাধিকারের সুফল কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া খুব কম ক্ষেত্রে তারা বাকি বিশ্বের জন্য চেয়েছে। একই ধরনের গণতন্ত্রকে তারা এশিয়ার তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। এ দুটি দেশের জনগণ গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সুফল ইউরোপের মর্যাদায় ভোগ করে। অর্থনৈতিক বিকাশও তাদের পূর্ণমাত্রায় হয়েছে। তারাই আবার মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ‘বাদশাহী’ পছন্দ করছে। সেখানে রাজতন্ত্র তাদের শতভাগ সমর্থন পেয়ে আসছে। মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দেশগুলোর জনগণের ওপর চেপে বসে আছে নানা মাত্রার নিপীড়ক ও স্বৈরাচারী রাজা-বাদশাহ্। আবার তাদের পছন্দ না হলে সাদ্দাম বা গাদ্দাফির মতো ভয়াবহ পরিণতি! ইরাক, আফগানিস্তান ও সিরিয়া নীতি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক বিশ্বের ভণ্ডামি, কপটতা প্রমাণিত হয়ে যায়। এসব দেশে লাখ লাখ মানুষ তারা হত্যা করেছে। প্রাকৃতিক সম্পদ ও সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার ধ্বংস করে দিয়েছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের তকমাধারী ইউরোপীয় দেশগুলো এসব কাজে যুক্তরাষ্ট্রকে বাধা দেয়নি। সম্পূর্ণ অন্যায় ও অগ্রহণযোগ্য কর্মকাণ্ডকে তারা সমর্থন দিয়েছে।

এমনকি সৈন্যবাহিনী, অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে তাদের সহযোগী হয়েছে। ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের যে স্বর্গ রচনা করেছে, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জনগণ এসবের সুফল বাইরে থেকে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছে। এসবের বিকাশ এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দরিদ্র দেশগুলোয় ঘটুক, তা সচেতনভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে থাকা বিশ্ব চায়নি। নির্বাচনি সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকতা পেয়েছে ভারতের ক্ষেত্রে- এতটুকু বলা যায়। কিন্তু সেটা প্রতিবেশী দেশে রপ্তানির উদারতা তারা দেখাতে পারেনি। দরিদ্র দেশগুলোয় আঞ্চলিক আধিপত্যবাদীরা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার যখন দুমড়ে-মুচড়ে দেয়, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব তখন সুযোগ বুঝে চুপ থাকে। অন্যদিকে তারা মানবাধিকারের অস্ত্রটি সব সময় শানাতে থাকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির কার্ড হিসেবে। যেমন- তারা অপেক্ষায় থাকে উইঘুরের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি বিশ্বসম্প্রদায়ের সামনে ছুড়ে দেয়ার জন্য। জাতিগত মুসলিম সম্প্রদায়টির ওপর চীনের চালানো নিপীড়ন নিয়ে আমেরিকা যতটা চীনকে শায়েস্তার চেষ্টা করেছে, তার সামান্য চেষ্টাও তারা করেনি উইঘুরদের নিপীড়ন থেকে বাঁচাতে। যুক্তরাষ্ট্র তেমন চেষ্টা করলে এতদিনে উইঘুররা তাদের অধিকার রক্ষায় সফল হতো। উইঘুর সম্প্রদায় যদি মানবাধিকার নিয়ে শান্তিপূর্ণ জীবন ধারণের অধিকার পায়, তাহলে চীনকে মানবাধিকার ইস্যুতে চাপ দেয়ার অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অবশিষ্ট থাকে না। মানবাধিকার নিয়ে ভণ্ডামি এ অঞ্চলে রোহিঙ্গা ও কাশ্মীর ইস্যু লক্ষ করলেই বুঝা যাবে। রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সামরিক শাসক যে জাতিগত উৎখাত অভিযান চালাচ্ছে, সেটা কখনো সম্ভব হতো না যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা আন্তরিকভাবে প্রতিরোধ করলে। বিশ্বশক্তির ভরকেন্দ্র পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ গণতন্ত্রের রুগ্ণ দশা।

এ ব্যবস্থা যেসব উন্নত জনবান্ধব নীতির কথা বলে এর পৃষ্ঠপোষকরা, সেগুলো বিশ্বকে সমানভাবে দিতে পারেননি তারা। এই জোট অনেক দেশের উন্নয়নেও কোনো ভূমিকা রাখেনি। কিন্তু তারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নামে অনেক কিছু চাপিয়ে দিতে চায়। একজন বঞ্চিত সচেতন মানুষ আর কতদিন এসব সহ্য করবে? চীন তার উদ্বৃত্ত অর্থ নিয়ে যাচ্ছে গরিব দেশগুলোতে। তারা নির্মাণ করে দিচ্ছে অবকাঠামো। এতে অন্তত উন্নত জীবনযাপনের সুযোগ বাড়ছে। চীনা নীতিতে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নেই। চীনারা এটা জাহির করে না যে, আমরা ভালো। তবে ভালো নামধারীদের ভণ্ডামির অত্যাচার থেকে বাঁচতে মানুষ চীনাদের আমন্ত্রণ জানাবে অদূর ভবিষ্যতে।

ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, প্রতিটি সভ্যতারই উঠতি-পড়তি আছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ মুহূর্তে পৃথিবীর এক নম্বর অর্থনৈতিক শক্তি এবং সামরিক শক্তিও বটে। কিন্তু দেশটির গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করেন। আমরা লক্ষ করছি, অর্থনীতি, সামরিক শক্তি ও প্রযুক্তির দিক থেকে চীনও খুব দ্রুত উন্নতি অর্জন করছে। এ রকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ, চীন এমন এক সময় আধুনিকায়ন ও উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে, যখন তার পক্ষে বিশ্বের প্রযুক্তির শেল্ফ থেকে অনেক সুবিধা গ্রহণ সম্ভব। সে কারণেই বলা হয়- উন্নয়নের পথে যেসব দেশ পরে যোগ দেয়, সেসব দেশ আগের উন্নত দেশগুলোর তুলনায় দ্রুততরভাবে উন্নত হতে সক্ষম হয়। এ বাস্তবতাগুলো মাথায় রেখে বাংলাদেশকে তার বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ করতে হবে। চীনের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে গ্রাম ও শহরাঞ্চলের মধ্যে জীবনযাত্রার মানের ব্যবধান কমিয়ে আনা। চীনের ৩১টি শাসনতান্ত্রিক প্রদেশের মধ্যে বৈষম্য তীব্র। ওইসিডির (অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) হিসাব অনুসারে, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নগর ও গ্রামের বৈষম্য চীনে সবচেয়ে বেশি।

পরিশেষে বলতে হয়, আর্থসামাজিক এই বৈষম্য ছাড়াও চীনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিশাল এই জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু করা। নাগরিকদের বাক্স্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতা নিশ্চিত করা। প্রশ্ন হচ্ছে, কর্তৃত্বপরায়ণবাদী শাসন দিয়ে চীনের এই অর্থনৈতিক কাঠামো কত দিন টিকে থাকবে।

লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট

আমারসংবাদ/জেআই