Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনা: একটি পর্যালোচনা প্রফেসর

ড. প্রিয় ব্রত পাল

আগস্ট ৫, ২০২১, ০৬:৪০ পিএম


বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনা: একটি পর্যালোচনা প্রফেসর

বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারণে সারাবিশ্ব তথা বাংলাদেশের অর্থনীতি করুণ অবস্থায় পতিত। এই দুঃসময়ে উল্লিখিত বঙ্গবন্ধুর উপদেশ-কৌশলে পালন করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কাজ শুরু করতে হবে। প্রয়োজনে রাশিয়া, কিউবা ও চীনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শুদ্ধি অভিযানে নামতে হবে। দেশীয় অভিজ্ঞ ও সক্রিয় গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগাতে হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের জন্য অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ সৎ ও যোগ্যকে নিয়ে ৩-৫ জনের মনিটরিং কমিটি করতে হবে। তাহলেই প্রধানমন্ত্রীর কাজের চাপ অনেকাংশ কমে যাবে।

বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দকে ‘বিনিয়োগ’ নামে অভিহিত করেছিলেন। সমবায় সমিতি গঠন করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। চার মূলনীতির মাধ্যমে তিনি দেশের দুঃখী, বঞ্চিত, শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষের মৌলিক মানবাধিকার এবং তাদের সমষ্টিগত প্রকৃত ‘গণতান্ত্রিক একনায়কতান্ত্রিক’ শাসন প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেছেন। আরও উল্লেখ করেছেন- প্রচলিত গণতন্ত্রের বদৌলতে সমাজের মাত্র ২৫ ভাগ লোকের বা প্রভাবশালী ধনিক শ্রেণির স্বৈরাচারী শাসন আর বল্গাহীন শোষণকার্য পরিচালনার পথই প্রশস্ত। তাই সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে ‘সমাজতন্ত্র ও শোষণমুক্তি’ কথাটি রয়েছে। সংকীর্ণ ব্যক্তিস্বার্থ বাদ দিয়ে সমষ্টিগত মানবগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার চিন্তা তিনি করেছিলেন। সমাজের প্রত্যেক মানুষকে এক পরিবারভুক্ত করতে চেয়েছিলেন। এ ছাড়া প্রশাসনকেও জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক করার ব্যবস্থা করেছিলেন এবং সেনাবাহিনীকে দেশের দৈনন্দিন কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন।

তিনি সব মানুষের একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ‘বাকশাল’ গঠন করেছিলেন। কিন্তু কাজ শুরু করতে পারেননি। বাকশাল গঠন হওয়ার পর ধনী ও প্রভাবশালী মহলগুলো শত্রুতা শুরু করে। তারা মনে করেছিল, তাদের হাত থেকে সম্পদ চলে যাবে কৃষক-শ্রমিকের হাতে। আবার প্রশাসনের আমলারাও চিন্তা করেন, তাদের হাত থেকে ক্ষমতা চলে যাবে জনপ্রতিনিধিদের কাছে; কিংবা জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। একইভাবে সামরিক বাহিনীতেও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছিল। তাই সব বিশ্বাসঘাতক, সুবিধাবাদী, সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদীর সম্মিলিত চেষ্টায় বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে ১৫ আগস্টে নৃশংসভাবে হত্যা করে এবং ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় জঘন্যভাবে হত্যা করে। তবে বাকশালের উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করে আমরা বুঝতে পারি, বাকশালের সব ধারা বাস্তবায়ন হলে এতদিনে বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্রে পরিণত হতো।

অতি দুঃখের বিষয় হলেও সত্য এবং দৃশ্যমান, বর্তমানে রাশিয়ার মানবিক মূল্যবোধের সমাজতন্ত্র, মাউ সে তুং-এর চীনসহ অনেক সমাজতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক দেশে ক্ষমতালিপ্সু, কোটিপতি ধনিক শ্রেণির আধিপত্য, অসাম্য অর্থনীতি সৃষ্টিতে সাম্রাজ্যবাদ গোষ্ঠী আত্মতৃপ্তি লাভ করছে।

বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর হামলার তাণ্ডবে স্বাধীন দেশে শিক্ষাব্যবস্থা হয়ে পড়েছিল বিপর্যস্ত। বিধ্বস্ত অবস্থা কাটিয়ে পাকিস্তানি ধারা পরিত্যাগ করে বাঙালি জাতির বিকাশের উপযোগী একটি সুস্থধারার শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন ছিলো একটি ব্যাপকভিত্তিক প্রশাসনিক উদ্যোগের। বঙ্গবন্ধুর সরকার সীমিত সাধ্যের মধ্যেও এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রয়াস চালায় সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে।

১৯৭২ সালের ১৫ জানুয়ারি শিক্ষা বিভাগের এক ঘোষণায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে (১৯৭১-এর মার্চ থেকে ডিসেম্বর) ছাত্র বেতন মওকুফ করা হয়। তবে শিক্ষক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন দেয়ার বিষয়টি বিবেচনাধীন বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে দেশের শতকরা ৬০ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংসপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এ সময়ে অনেক ছাত্র-শিক্ষক শহীদ হন বা অনেক ছাত্রের অভিভাবক শহীদ হন। সব মিলিয়ে শিক্ষা পুনর্গঠনের প্রশ্নটি সামনে চলে আসে। ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ জাতীয়করণ নীতি ঘোষণা উপলক্ষে বেতার-টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় বিপ্লব সাধনের উদ্দেশ্যে একটি পরিকল্পনা তৈরির জন্য ‘শিক্ষা কমিশন’ গঠন করতে বলেন এবং কমিশন শুধু শিক্ষার ভবিষ্যৎ কাঠামো ও কারিকুলামই চিহ্নিত করে দেবে না- শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবেশ-পরিস্থিতির নিরিখে জীবনঘনিষ্ঠ, উৎপাদনমুখী ও পেশাসংশ্লিষ্ট মানব উন্নয়নমূলক বিষয়গুলোকেও সম্পৃক্ত করে দেবে। এত অল্প সময়ের মধ্যে এরকম ব্যাপক রিপোর্ট দেয়া সম্ভব ছিলো না; তাই শিক্ষা কমিশন একটি অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্ট জমা দেয়। তাতে বলা হয়, শিক্ষাকে অবশ্যই সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রয়োজনের আলোকে ঢেলে সাজাতে হবে এবং তা কোনো অবস্থায়ই নতুন সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় অতীতের মতো এলিট শ্রেণি সৃষ্টির শিক্ষাব্যবস্থায় পরিণত হবে না। এ দর্শনের ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা কমিশন প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় শিক্ষা কর্মসূচি প্রণয়ন করে। সংবিধানে বর্ণিত গণমুখী, সর্বজনীন, বৈষম্যহীন একই ধরনের অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাব্যবস্থা সব শিশুর জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। কর্মকৌশলের দিক থেকে কমিশন মনে করে, শিক্ষাকে কার্যকর করতে হলে তার গুণগত মান বৃদ্ধি করতে হবে এবং তার জন্য চাই সুযোগ-সুবিধা ও বেশি মাত্রায় প্রশিক্ষিত শিক্ষক। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে তার দরকার বেশি। শিক্ষা উপকরণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ, নারী শিক্ষা ও বিজ্ঞান শিক্ষাকে গুরুত্ব প্রদান, ভোকেশনাল ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থাকরণ, খুব মেধাবীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ প্রদান, বয়স্ক শিক্ষার প্রবর্তন, খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ সৃষ্টি প্রভৃতিকে বিবেচনায় রেখে কমিশন তাদের কর্মকৌশল নির্ধারণ করে পাঁচ বছরমেয়াদি পরিকল্পনা ঘোষণা করে।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে গণশিক্ষার আবশ্যকতার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছিলেন, গণশিক্ষা ছাড়া অর্থনৈতিক সমস্যার কার্যকর সমাধান সম্ভব নয়, সম্ভব নয় সমাজতন্ত্রের বাস্তবায়নও। শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করে তার সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করেন। গণমুখী শিক্ষাব্যবস্থার আবশ্যকতা সম্পর্কে কোনো মতবিরোধের অবকাশই থাকতে পারে না বলে তিনি মতপ্রকাশ করে বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এ যাবৎ শুধু আমলা সৃষ্টি করেছে, মানুষ সৃষ্টি করেনি। জনগণের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি শিক্ষক ও ছাত্রদের প্রতি বছরই কিছু সময়ের জন্য গ্রামে থাকতে হবে এবং পল্লী অঞ্চলের জনগণের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের জন্য কাজ করার তাগিদ দেন। কমিশন শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করে। মোট জাতীয় আয়ের শতকরা পাঁচ ভাগ এবং দ্রুত শতকরা ৭ ভাগ শিক্ষা খাতে ব্যয় করার প্রস্তাব করা হয়। এ প্রস্তাব জাতিসংঘ প্রস্তাবের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

বিজ্ঞান, কৃষি, চিকিৎসা, বাণিজ্য, আইন, ললিতকলা প্রভৃতি শিক্ষার জন্য আলাদা আলাদাভাবে বিস্তৃত পরিকল্পনা উপস্থিত করেছিলেন কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন। বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি প্রভৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেন বাঙালি জাতির শিক্ষাব্যবস্থা অগ্রসর হতে পারে- সে বিষয়ে কমিশন বিশেষভাবে সচেতন ছিলো। কমিশন বিশেষভাবে প্রস্তাব করেছিলো নারী শিক্ষার প্রসারে। জনসংখ্যার অর্ধেক নারী সমাজের অন্যান্য অনেক বিষয়ের মতো শিক্ষাক্ষেত্রেও যে পশ্চাৎপদতা- তা কমিশনের বিবেচনায় ছিলো। এই পশ্চাৎপদতা ঘুচানোর লক্ষ্যে কমিশন বিস্তারিত প্রস্তাব রাখে। সাংবিধানিক অধিকারকে বাস্তবে রূপায়ণের লক্ষ্যে শিক্ষা কমিশন সব নাগরিকের জন্য শিক্ষাক্ষেত্রে সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করে। কমিশনের রিপোর্টের শেষ পর্যায়ে অগ্রাধিকার প্রদানকারী বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিদ্যমান জটিল সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে জাতীয় চার মূলনীতিতে। প্রতিফলন নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার সর্বস্তরে বাংলা মাধ্যম প্রবর্তন, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করা, বৃত্তিমূলক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, শিক্ষা প্রশাসন পুনর্বিন্যাস, যুবশক্তিকে জাতীয় সেবাকর্মে উদ্বুদ্ধকরণ প্রভৃতি বিষয় রিপোর্টের শেষে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংবিধান নির্দেশিত পথে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার দ্বারা গঠিত ড. কুদরত-ই-খুদা কমিশন যেসব প্রস্তাব সংবলিত শিক্ষা-প্রতিবেদন পেশ করে, তা ছিলো আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষার ধারায় রচিত। কমিশনের প্রতিবেদন বঙ্গবন্ধু সরকার কর্তৃক গ্রহণ করা হলেও এর বাস্তবায়ন বিঘ্নিত হয় ১৯৭৫ সালের বিশ্বের জঘন্যতম ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। তারপরও শিক্ষা কমিশন কর্তৃক প্রণীত দলিলটি একটি মাইলফলক হিসেবে রয়েছে আমাদের জাতীয় জীবনে। এর ওপর ভিত্তি করে বাঙালি জাতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন হবে। এ রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা নির্ধারিত হলে তা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নেরই বাস্তবায়ন বলে স্বীকৃত হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শহীদ হবার পর পর্যায়ক্রমিকভাবে যারা ক্ষমতায় আসে, তারা এ বিষয়ে আর কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করেনি। অথচ সেই গুরুত্বপূর্ণ দলিল থেকে এখনও আমরা অনেক বিষয়ে দিকনির্দেশনা পেতে পারি। শিক্ষা খাতে উন্নত বিশ্বের মতো কমপক্ষে জিডিপির ৬ শতাংশ বিনিয়োগ করতে হবে, গবেষণার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। দেশীয় অর্থনীতির চাহিদা অনুযায়ী মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। একদিকে শিক্ষিত বেকার থাকবে, অন্যদিকে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের জন্য বিশাল অর্থের ব্যয় অনাকাঙ্ক্ষিত। বঙ্গবন্ধুর চমৎকার পরিকল্পনা অনুযায়ী তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নসহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চুক্তি অনুযায়ী আমাদের শিক্ষিত বেকারদের স্কলারশিপের মাধ্যমে পাঠিয়ে যুগোপযোগী করতে হবে। প্রয়োজনে দেশীয় চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। কৃষি-শিল্পসহ বিভিন্ন খাতের সঙ্গে উন্নত বিশ্বের মতো ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে কার্যকর উদ্যোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও কুটিরশিল্প বিভাগকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া সময়ের দাবি। বাংলা, ইংরেজি ও মাদ্রাসা শিক্ষার অসামঞ্জস্যতা দূর করতে হবে। ছাত্রসমাজকে সচেতন করতে যুগোপযোগী, গুরুত্বপূর্ণ আর্থসামাজিক বিষয়, দেশের সঠিক ইতিহাস চর্চার পাশাপাশি গণিত, বিজ্ঞানবিষয়ক জ্ঞান বিতরণের লক্ষ্যে সিলেবাসের ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন। বাংলা, ইংরেজি মাধ্যম ও মাদ্রাসা শিক্ষার ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞান আহরণে সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সবাইকে যোগ্য মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রাথমিক স্তর ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে মৌলিক শিক্ষার ভিত্তি হিসেবে। দেশের অল্পশিক্ষিত/অশিক্ষিত বেকারদের প্রয়োজনীয় কারিগরি শিক্ষা ও ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে কিংবা ট্রেনিংপ্রাপ্ত মানবসম্পদ রপ্তানি করে তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করতে হবে। একইভাবে বঙ্গবন্ধুর বাকশাল সময়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের প্রত্যেকটি সেক্টরে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

তাই বঙ্গবন্ধুকন্যা জাতির পিতার অসমাপ্ত দ্বিতীয় বিপ্লবের কাজের শুরুতেই দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, কৃষক-শ্রমিকরা দুর্নীতিবাজ না, তারা আমাদের আহার ও বেতন জোগান দেয়। তাদের যেন সম্মান করি; চোরেরা না শোনে ধর্মের কাহিনি, ইত্যাদি।

বর্তমানে করোনার কারণে সারা বিশ্ব তথা বাংলাদেশের অর্থনীতি করুণ অবস্থায় পতিত। এ দুঃসময়ে বঙ্গবন্ধুর উপদেশগুলো কৌশলে পালন করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কাজ শুরু করতে হবে। দেশীয় অভিজ্ঞ ও সক্রিয় গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগাতে হবে। অবসরপ্রাপ্ত, প্রবীণ ও সৎ ব্যক্তিদের নিয়ে মনিটরিং কমিটি করতে হবে। তাহলেই প্রধানমন্ত্রীর কাজের চাপ অনেকাংশ কমে যাবে। ভেজাল খাদ্য, ভেজাল ওষুধসামগ্রী উৎপাদন ও বিক্রি এবং ধর্ষণের মতো ঘৃণিত কাজ বন্ধে এদের দ্রুত বিচার আইনে প্রয়োজনীয় শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

লেখক : প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আমারসংবাদ/জেআই