Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

উৎসবের টিকায় বিশৃঙ্খলা

মাহমুদুল হাসান

আগস্ট ৭, ২০২১, ০৬:০৫ পিএম


উৎসবের টিকায় বিশৃঙ্খলা
  • জটলা-ভিড়ে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি
  • টিকাকেন্দ্রে লাঞ্ছিত চেয়ারম্যান
  • চাহিদার চেয়ে সরবরাহ ছিলো কম
  • দুই ডোজ টিকাও প্রয়োগ হয়েছে
  • ক্যাম্পেইন চলবে ১২ আগস্ট পর্যন্ত

গত ৭ ফেব্রুয়ারি ৫৪তম দেশ হিসেবে শুরু হয় টিকাদান। ভারত থেকে চুক্তির আলোকে টিকা সরবরাহ না হওয়ার ফলে ভেস্তে যায় পরিকল্পনা। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে টিকাদান। সম্প্রতি চলছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। সংক্রমণ ও মৃত্যু এখন ঊর্ধ্বমুখী। মৃত্যু যেনো দুইশর ঘর থেকে নামছেই না। এদিকে সরকার এখন বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে দফায় দফায় কমিয়ে আনা হয়েছে টিকা গ্রহণের বয়স। আগ্রহও বেড়েছে অতীতের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। প্রায় সোয়া দুই কোটি মানুষ টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। সক্ষমতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে সরকার ফের গণটিকার ঘোষণা দেয়। এ লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের সম্প্রসারিত টিকাদান কেন্দ্রকে (ইপিআই) প্রস্তুত করা হয়। প্রায় ১৫ হাজারেরও বেশি কেন্দ্রে পৌনে ৩৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী ও সাড়ে ৪৮ হাজার প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকের সমন্বয়ে গতকাল শুরু হয় টিকাদান। ভীতি কাটিয়ে মানুষ ভিড় করেন টিকা কেন্দ্রে। প্রথম দিনেই দেশের অধিকাংশ কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা লক্ষ্য করা গেছে। গ্রহীতাদের উপচেপড়া ভিড় আর দীর্ঘ সারি ছিলো অধিকাংশ কেন্দ্রের বাইরে। জটলাও ছিলো অনেক ক্ষেত্রে।

কোথাও ছিলো না স্বাস্থ্যবিধির ন্যূনতম উপস্থিতি। অনেকের মুখেই ছিলো না মাস্কের বালাই। গতকাল রাজবাড়ীতে এক গৃহবধূকে এক সাথে দুই ডোজ টিকা প্রদানেরও অভিযোগ উঠেছে। টিকাদান কেন্দ্রে শৃঙ্খলা ফেরাতে নেমে হবিগঞ্জের একটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উল্টো লাঞ্ছিত হয়েছেন। স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করায় টিকাকেন্দ্র থেকেই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। হযবরল পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে দেশের চার হাজার ৬০০টি ইউনিয়ন, এক হাজার ৫৪টি পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের ৪৩৩টি ওয়ার্ডে শুরু হয়েছে করোনা প্রতিষেধক গণটিকাদান। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলেছেন, এভাবে গণটিকাদান চললে ৫০ বছর তদূর্ধ্ব, নারী ও প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার। প্রত্যন্ত অঞ্চল-প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং ২৫ বছর, তদূর্ধ্বদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে চালু করা গণটিকার উৎসব মুখথুবড়ে পড়বে। এদিকে গণটিকাদানে কিছু ভুল হতে পারে বলে আগেই জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। তিনি বলেছিলেন, যেকোনো ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম সুনির্দিষ্টভাবে প্রদানে পরিকল্পনা করা সম্ভব হয় না। আমরা আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী পরিকল্পনা তৈরি করেছি। এটা আমাদের কাছে একটি পাইলট প্রজেক্ট। এ থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করবো।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগের তথ্যমতে, ১২ আগস্ট পর্যন্ত দেশে গণটিকাদান ক্যাম্পেইন চলবে। সারা দেশের চার হাজার ৬০০টি ইউনিয়ন, এক হাজার ৫৪টি পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের ৪৩৩টি ওয়ার্ডে এক যোগে টিকা উৎসব শুরু হবে। কোথাও টিকা কার্যক্রম বাদ পড়লে সেখানে আট ও ৯ আগস্ট টিকাদান কার্যক্রম চালু হবে। আট থেকে ৯ আগস্ট দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলবে টিকাদান। একই সাথে ১০ থেকে ১২ আগস্ট ৫৫ বছর বয়সি এবং তদূর্ধ্ব রোহিঙ্গা নাগরিকদেরও টিকার আওতায় আনা হবে। এক্ষেত্রে ৩২ হাজার ৭০৬ জন টিকাদানকারী ও ৪৮ হাজার ৪৫৯ জন স্বেচ্ছাসেবী নিবিড়ভাবে এই টিকাদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবেন। টিকা উৎসবে পঞ্চাশোর্ধ্ব জনগোষ্ঠী, নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে। দিনের শুরুতে দুই ঘণ্টা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের টিকা দেয়া হবে। একই সাথে ২৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠী, দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, গত শুক্রবার বেলা আড়াইটা পর্যন্ত দুই কোটি ১৭ লাখ আট হাজার ৭৬৮ জন। তার মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে নিবন্ধন করেছে দুই কোটি ১৪ লাখ আট হাজার ৩৭১ জন। আর পাসপোর্ট ব্যবহার করে নিবন্ধন করেছেন তিন লাখ ৩৯৭ জন। এদের মধ্যে এক কোটি দুই লাখ ৮৯ হাজার ৭৯৭ জন প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন। তার মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকা-কোভিশিল্ড গ্রহণ করেছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ৬৩ জন, সিনোফার্ম ৩৩ লাখ ১৭ হাজার ৫৮২ জন, ফাইজার ৫০ হাজার ২৫৫ জন এবং মডার্না ১১ লাখ এক হাজার ৮৯৭ জন। এদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৭ জন। সে হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা-কোভিশিল্ড গ্রহণ করেছেন ৪৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৩১ জন, সিনোফার্ম নিয়েছেন ৯২ হাজার ২৪৮ জন এবং ফাইজার নিয়েছেন সাত হাজার ৩৮ জন। সম্প্রতি মডার্না টিকা প্রদান শুরু হওয়ায় এখনো কেউ দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেননি।

স্বাস্থ্যকর্মীর ভুলে দুই ডোজ টিকা দিলেন : রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের পাটকিয়াবাড়ী দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে গতকাল শনিবার গণটিকাদানের প্রথমদিন বেলা ১১টার দিকে ইসমত আরা (৩১) নামের এক নারীকে একই সময়ে করোনার দুই ডোজ টিকা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তিনি বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা নাহিদুল হক স্বপনের স্ত্রী। টিকা গ্রহণকারীর স্বামী নাহিদুল হক স্বপন জানান, শনিবার থেকে ইউনিয়নপর্যায়ে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হওয়ায় তার স্ত্রী টিকা নিতে সকালে পাটকিয়াবাড়ী দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান। এ সময় টিকা কেন্দ্রে অনেক ভিড় থাকায় তিনি সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার টিকা নেয়ার সিরিয়াল নাম এলে তিনি টিকা কেন্দ্রের ভেতরে ঢোকেন। এ সময় টিকা কেন্দ্রে কোনো স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই একসঙ্গে অনেক জনকে ঢুকিয়ে টিকা দেয়া হচ্ছিল। তার স্ত্রী টিকা নিতে গেলে টিকা দেয়া কাজে নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী তার বাঁ হাতে টিকা দেন। টিকা দেয়া শেষে তার স্ত্রী ইনজেকশন পুশ করার স্থানে ডান হাত দিয়ে চাপ দিয়ে ধরে রাখেন। সে সময় আরেক স্বাস্থ্যকর্মী এসে তাড়াহুড়ো করে আবার তার স্ত্রীর ডান হাতে টিকা দেন। বিষয়টি স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাও স্বীকার করেছেন।

ভিড় সামলাতে গিয়ে মার খেলেন ইউপি চেয়ারম্যান : হবিগঞ্জের বাহুবলে করোনা ভাইরাসের গণটিকা দান কর্মসূচিতে উপচেপড়া মানুষের ভিড় সামাল দিতে গিয়ে উপজেলার স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলম লাঞ্ছিত হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার স্নানঘাট ইউপি কমপ্লেক্সে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সারা দেশের ন্যায় বাহুবল উপজেলার ১নং স্নানঘাট ইউপি কমপ্লেক্সে ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের ৬০০ লোককে করোনা ভাইরাসের গণটিকাদান শুরু হয় গতকাল সকাল ৯টায়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে টিকা গ্রহণে আগ্রহীদের লাইন লম্বা হতে থাকে। অনেক লম্বা লাইনে বয়স্ক ও অসুস্থ লোকজন কষ্ট করে দাঁড়িয়ে আছেন দেখে তাদের অগ্রাধিকার দেয়ার চেষ্টা চালান ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলম। এতে প্রতিবাদী হয়ে উঠেন ইউনিয়নের বাগদাইর গ্রামের বাসিন্দা মৌলদ হোসেনের পুত্র আব্দুল খালেক (৪০)। একপর্যায়ে উভয়ের মাঝে বাগবিতণ্ডার ঘটনা শুরু হয়। বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে আব্দুল খালেক ও তার সহযোগীরা ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলমকে লাঞ্ছিত করেন।

আমারসংবাদ/জেআই