Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

৫ বছরে হবে আধুনিক ও বিশ্বমানের

আগস্ট ১১, ২০২১, ০৬:৪০ পিএম


৫ বছরে হবে আধুনিক ও বিশ্বমানের
  • প্রত্যেক উপজেলায় হবে একটি করে ফায়ার স্টেশন, যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের জন্য আধুনিক করে গড়ে তোলা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফায়ার একাডেমি এবং বিশ্বের উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফায়ার সার্ভিসে যুক্ত হচ্ছে আধুনিক সরঞ্জাম

বর্তমান সরকারের নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার রূপকল্পের সঙ্গে সমানতালে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে সরকারের সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। অসংখ্য সীমাবদ্ধতা নিয়েও দুর্জয় সাহস আর দৃঢ়প্রত্যয়ে গতি, সেবা ও ত্যাগের মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে ফায়ার সার্ভিসের প্রতিটি কর্মী সর্বদাই মানবসেবায় নিয়োজিত থেকে দেশজুড়ে সুনামের সাথে সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট সকল দুর্যোগে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই দুর্ঘটনাস্থলের উদ্দেশে গমন করা এবং প্রথম সাড়াদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স যেকোনো বিচারেই প্রশংসারযোগ্য বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যেকোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে সেবা ও জনগণের জানমাল হেফাজতে অঙ্গীকারাবদ্ধ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীবাহিনী নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি অংশ নিচ্ছে জঙ্গিবিরোধী যৌথ অভিযানেও। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বর্তমান সরকারও বাস্তবমুখী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করায় একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠানটির সেবার গুণগত মান উন্নীত হয়েছে, তেমনি সেবামূলক কার্যক্রমও সম্প্রসারিত হচ্ছে। বর্তমান ফায়ার সার্ভিসকে ভবিষ্যতে আরও আধুনিক ও বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েও সার্বিক কার্যক্রমে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার।

জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন আমার সংবাদকে বলেন, বর্তমান ফায়ার সার্ভিস যেভাবে আছে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সরকারের রূপকল্প ২০৪১ এবং বাংলাদেশ ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়েই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে ঢেলে সাজাতে হবে। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে ইউএনডিপির সাথেও আমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। আমরা যেটা চেয়েছি যে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ থেকে ১৮ কোটি। পক্ষান্তরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী সংখ্যা ১৩ হাজার। জনসংখ্যার তুলনায় যা খুবই অপ্রতুল। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নয়নের কথা যদি আমরা মাথায় রাখি তাহলে এ হিসাবে বাংলাদেশের ফায়ার সার্ভিস আসলেই একটু দুর্বল। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন যে, প্রত্যেক উপজেলায় একটা করে ফায়ার স্টেশন হবে। এটা মাথায় রেখেই আমরা পুনঃসংস্করণ করছি। পুনঃসংস্করণ হচ্ছে, একদম স্ট্র্যাটেজিক বিবেচনা করেই আমরা পুনঃসংস্করণ করছি। যেমন জনবলের পাশাপাশি ভবিষ্যতে কী ধরনের অগ্নিকাণ্ড হতে পারে, সেগুলো মিলিয়েই আমরা কাজ করছি। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফায়ার একাডেমি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফায়ার একাডেমিকে আমরা একটি আধুনিক ফায়ার একাডেমি হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। যাতে ফায়ার সার্ভিসকে যুগোপযোগী করে প্রশিক্ষণ দেয়া যায়। সুতরাং এটা হবে আধুনিক এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ একাডেমি, সেভাবেই আমরা গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। এছাড়া অন্যান্য যে সমস্ত সরঞ্জামাদি আছে এবং বিশ্বের উন্নত দেশগুলো ব্যবহার করে, সে সমস্ত সরঞ্জামাদি আমরাও সংগ্রহ করছি এবং সরঞ্জাম সংগ্রহের ধারা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের অন্যান্য সংস্থা বিশেষ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও কিছু এনজিও সরঞ্জাম দিচ্ছে। এগুলো সংগ্রহের কার্যক্রমও চালু আছে।

তিনি বলেন, আগের ১০ বছরের তুলনায় বর্তমান ফায়ার সার্ভিস এখন অনেক উন্নত। এরপরও আমরা আশা করছি, আগামী পাঁচ বছর পর ইনশাআল্লাহ আরও উন্নত, আধুনিক এবং বিশ্বমানের ফায়ার সার্ভিসে উন্নীত হবে। একই সময়ে আমরা চাচ্ছি, বিশ্বের যত উন্নত দেশ আছে আর সেসব দেশগুলোতে যেভাবে ফায়ার ফাইটিং করে এবং যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে, আমাদের ফায়ার সার্ভিসেও যেন ঠিক একই মানের সুযোগ-সুবিধা থাকে।  

ফায়ার সার্ভিসের প্রতিটি কর্মীই দুর্যোগ-দুর্ঘটনাকবলিত হতাহতের পাশাপাশি পশু-পাখি-প্রাণী উদ্ধার, অসুস্থ-বৃদ্ধ-প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর চলাচলে সহায়তাসহ ইত্যাদি কার্যক্রমও বাস্তবায়ন করছে। ঈদ ও নানা অনুষ্ঠান-উৎসবে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তায় লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে ইউনিট মোতায়েন, ঝড়ে বিপর্যস্ত রাস্তায় যান চলাচলের উপযোগীকরণ ইত্যাদি বহুমাত্রিক সেবার কাজেও নতুন করে যুক্ত হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। বহুমুখী পেশাগত দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এখন গণমানুষের আস্থা আর নির্ভরতার প্রতীকেও পরিণত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনা প্রতিরোধে এবং করোনা সংক্রমণ থেকে দেশের মানুষকে নিরাপদ রাখতে সারা দেশে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সহযোগী হিসেবে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, ত্রাণ বিতরণ, সচেতনতা বৃদ্ধি ইত্যাদি কার্যক্রমেও অংশগ্রহণ করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। সদর দপ্তরের পাশাপাশি সারা দেশে ফায়ার স্টেশন এবং বিভাগীয় ও জেলা সদরের স্টেশনগুলোর মাধ্যমেও এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।   বর্তমান সময়ে ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকার বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক বলেন, করোনায় খুব বেশি ভূমিকা রেখেছে ফায়ার সার্ভিস- এটা আমি বলবো না। কারণ করোনায় কাজ করতে হলে আমাদের কার্যক্রমে একটু বেগই পেতে হয়। কেননা আমাদের লোকবলের সংকট রয়েছে এবং প্রত্যেকটা কর্মীই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় যায়। ইতোমধ্যে ৩০০-র বেশি কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন মারাও গেছেন। এরপরও আমরা মাঝেমধ্যে কিছু কিছু কাজে অংশগ্রহণ করেছি। যেমন- বিভিন্ন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কাজে বা জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানোতে বা সচেতনতামূলক কাজেও আমরা নিজেদের নিয়োজিত করেছি বিভিন্নভাবে। তিনি বলেন, আমরা কিছু অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসও দিয়েছি। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যে সার্ভিস ছিলো, সেটি এখন বন্ধ আছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমাদের একই চালক অ্যাম্বুলেন্স চালায়, পিপিএলের গাড়ি চালায়। আর আমাদের চালকের বিকল্পও খুব কম, চালকের সংখ্যাও খুব কম। কোনো চালক যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে দেখা যাবে দুর্যোগের সময় স্টেশনের একটা গাড়ি নিয়ে বের হতে পারছে না। সেক্ষেত্রে আমরা খুব সীমিত আকারে এই সার্ভিসটা দিয়েছি। আপাতত পানি ছিটানো বা এ ধরনের কার্যক্রমও এখন নেই। কিন্তু এতদিন যখন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কার্যক্রম আমাদের চলছিল সচলভাবে তখন আমরা সমস্ত কার্যক্রমেই অংশগ্রহণ করেছি।

আমারসংবাদ/জেআই