Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

সেই চেনা রূপে রাজধানী

আগস্ট ১১, ২০২১, ০৬:৪০ পিএম


সেই চেনা রূপে রাজধানী
  • কর্মমুখর সব অফিস-আদালত
  • ফের ঢাকায় যানজট, আসন পূর্ণ গাড়িতেও উঠার অপেক্ষা
  • শপিংমল এখনো জমে উঠেনি 
  • ভরা যাত্রী নিয়ে ছাড়ছে ট্রেন আকাশপথে চাপ নেই
  • শিমুলিয়া, পাটুরিয়ায় গাড়ির চাপ আরিচা ঘাট ফাঁকা

চেনা রূপে ফিরেছে ঢাকা! ২১ দিন কঠোর বিধিনিষেধ কাটিয়ে। ব্যবসায়ী-কর্মচারীরা কর্মস্থলে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে যানবাহন, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, বিনোদন কেন্দ্রসহ খুলে দেয়া হয়েছে সবকিছু। কর্মমুখর সরকারি-বেসরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সব অফিস-আদালত। ঢাকার পথে পথে যানজট। রাস্তার মোড়ে মোড়ে গাড়িতে উঠার জন্য যাত্রীদের অপেক্ষা। গাড়ির আসন ভর্তি। আগের মতো অনেকে দাঁড়িয়েও যাচ্ছেন। তবে অভিযোগ নেই কারো। চালক-যাত্রী সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন। গতকাল রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকায় বলাকা পরিবহনের স্টেশন। সকালে দেখা গেছে, চাকরিজীবী ও প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষজন লাইনে দাঁড়িয়ে গাড়িতে উঠছেন। ৮-১০ মিনিটের মধ্যে গাড়ি পুরো পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। কয়েকজন দাঁড়িয়েও যাচ্ছেন। উঠার সময় অনেকে বলছেন, আমি অল্প একটুই যাবো— মানিকগর, কমলাপুর, মালিবাগ নেমে যাবো। অফিসের তাড়া থাকায় বসে থাকা যাত্রীরাও আর অতিরিক্ত যাত্রীদের নিয়ে আপত্তি করেননি। যাত্রী আসাদুল হক বলেন, ‘অনেকদিন পর বাসে উঠলাম। আগের ভাড়াই নিচ্ছে, অতিরিক্ত নেয়া হচ্ছে না। এ কয়দিন বাস বন্ধ থাকায় বেতনের বড় অংশ রিকশা ভাড়ার পেছনেই চলে গেছে।’ তাই বাস খুলে দেয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেন তিনি। পরিবহনের সহকারী আরিফ বলেন, ‘আগের বাড়াই নিচ্ছি। যাত্রীদের কারো কাছ থেকে অতিরিক্ত বাড়া নিচ্ছি না।’ এদিকে ফার্মগেটে দেখা গেছে, কোনো কোনো বাসে অতিরিক্ত যাত্রী ছিলো। আবার কোনোটির আসন ফাঁকা। শিকড় পরিবহনে দেখা গেছে অতিরিক্ত যাত্রী। ভাড়াও আগের মতো। বিহঙ্গ পরিবহনে দেখা গেছে আসনের অতিরিক্ত যাত্রী। শাহবাগেও একই রকম চিত্র দেখা গেছে। তবে নীলক্ষেত মোড় হয়ে মিরপুর রোডে চলা ঠিকানা পরিবহনে দেখা গেছে যাত্রী আগের তুলনায় একটু কম। অনেক আসনই ফাঁকা। জানতে চাইলে ঠিকানা পরিবহনের সহকারী রাজিবুল হক বলেন, ‘আমাদের গাড়িতে শিক্ষার্থীদের চলাচলই বেশি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, সিটি কলেজ, সাইন্সল্যাব, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, গভনমেন্ট ল্যাবরেটরি কলেজসহ বহু সবপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমরা বড় সংখ্যক যাত্রী সঙ্কটে রয়েছি।’

হাতে টাকা কম শপিংমলে ক্রেতা নেই : গতকাল রাজধানীসহ সারা দেশে সব ধরনের দোকানপাট ও বিপণি-বিতান খুলেছে। বৃষ্টি হওয়ায় প্রথম দিনে দোকানপাটে ক্রেতার উপস্থিতি একেবারে কম ছিলো। সরেজমিন মৌচাক মার্কেট ও এর আশপাশের বেশ কয়েকটি শপিংমল এবং বেইলি রোডের বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘসময় পরে সবকিছু একসাথে খুলে দেয়ায় মানুষ নানা ধরনের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া সাধারণ মানুষের হাতে টাকা-পয়সা নেই। পাশাপাশি কেনাকাটার জন্য এ সময়টা তেমন কোনো উপলক্ষও নেই। সব মিলিয়ে মার্কেট-বিপণি বিতানে ক্রেতার আনাগোনা নেই।’

ভরা যাত্রী নিয়ে ছাড়ছে ট্রেন : কঠোর বিধিনিষেধ শেষে গতকাল বুধবার সকাল থেকে সারা দেশে ফের ট্রেন চলাচলও শুরু হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল আলম জানান, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বলাকা এক্সপ্রেস, তুরাগ এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার, পারাবত এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, তিস্তা এক্সপ্রেস ও মহানগর প্রভাতী ছেড়ে গেছে।

পাটুরিয়ায় গাড়ির চাপ আরিচা ঘাট ফাঁকা : গতকাল বুধবার পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে গাড়ির কিছুটা চাপ থাকলেও, আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে নেই যাত্রী বা গাড়ির চাপ। দুপুরে সরেজমিন পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় দেখা গেছে, রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ফেরিতে পদ্মা পাড়ি দিয়ে পাটুরিয়া ঘাটে আসা গাড়ি ও যাত্রী তেমন কোনো ভোগান্তি ছাড়াই ঢাকার দিকে যেতে পারছেন। তবে ঘাটে অন্তত ৫০টি বাস, ৭০টি ছোট গাড়ির পাশাপাশি দুই শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক ফেরি পারের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। অন্যদিকে, পাবনার কাজিরহাট থেকে ফেরিতে যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে আরিচা ঘাটে আসা যাত্রী ও যানবাহন নির্বিঘ্নে ঢাকার দিকে যেতে পারছে। বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জিল্লুর রহমান জানান, গণপরিবহনের চাপ কিছুটা কমে গেলে, আটকে পড়া ট্রাকগুলো ছাড়া হবে। তিনি বলেন, ‘শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ভারী যানবাহন পারাপার বন্ধ থাকায় ওই রুটের পণ্যবাহী ট্রাকগুলো পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া হয়ে ঢাকায় ঢুকছে। এতে  সকাল থেকে পাটুরিয়া ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাকের চাপ বেড়ে গেছে। এ কারণে, ঘাট এলাকায় দুই শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে।’ তবে ছোট-বড় ১৪টি ফেরি সচল থাকায় ফেরি পারাপারে কোনো সমস্যা হচ্ছে না’ যোগ করেন তিনি।

যাত্রীর চাপ শিমুলিয়া লঞ্চঘাটে : কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করায় শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে বড় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় লঞ্চে যাত্রীর চাপ রয়েছে। চলাচল করছে ৮৭টি লঞ্চ। এদিকে, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে বড় কোনো ফেরি চলাচল করছে না। এ রুটে পাঁচটি ছোট ফেরি চলাচল করছে। ওই সমস্ত ফেরি দিয়ে ভারী কোনো যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে না। শুধু ছোট পণ্যবাহী যান ও ব্যক্তিগত গাড়ি পারাপার করা হচ্ছে। শিমুলিয়া ঘাটের নদীবন্দর কর্মকর্তা মো. সোলাইমান বলেন, ‘ঘাটে ৮৭টি লঞ্চ চলছে। যাত্রীরা লঞ্চযোগে পদ্মা নদী পারাপার হচ্ছেন।’ শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক বাণিজ্য ফয়সাল আহামেদ বলেন, ‘ঘাটে পাঁচটি ফেরি চলছে। ঘাটে ফেরি কম চলায় যানবাহনের চাপ রয়েছে। ফেরি দিয়ে ঘাট থেকে এখনো কোনো ভারী যানবাহন পারাপার করা হয়নি।’

বনপাড়া-পাবনা মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট : নাটোরের বনপাড়া হাটিকুমরুল ও বনপাড়া-পাবনা মহাসড়কে তীব্র যানজট হয়েছে গতকাল। একদিকে যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা, অন্যদিকে ছিলো ভ্যাপসা গরম। আটকে থাকে শত শত পরিবহন। পরিবহনচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ যানজটে বনপাড়া-হাটিকুমরুল ও বনপাড়া-পাবনা মহাসড়কের যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। পুলিশি কার্যক্রম সন্তোষজনক নয় বলেও অভিযোগ করেন তারা। যাত্রীবাহী কোচের পাশাপাশি কাঁচামালবাহী ট্রাকগুলো আটকে পড়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকায় ট্রাকে থাকা কাঁচা তরকারি নষ্ট হওয়ার উপক্রম। বনপাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে মুলাডুলি রেলগেট এলাকায় রেললাইন সংস্কারকাজ করার জন্য নাটোর-পাবনা মহাসড়ক বন্ধ ছিলো। কিন্তু বুধবার সকাল থেকেই গণপরিবহন খুলে দেয়ায় পরিবহনের চাপ বৃদ্ধি পায় মহাসড়কে। এতে জ্যামে আটকা পড়ে শত শত পরিবহন। সৃষ্টি হয় প্রায় ২০ কিলোমিটারব্যাপী যানজট।’

আকাশপথে যাত্রীর চাপ কম : লকডাউন উঠে যাওয়ার পর প্রথমদিন দেশের ভেতরে আকাশপথে যাত্রীদের তেমন চাপ নেই বলে জানায় দেশের দুই বেসরকারি এয়ারলাইন্স। ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফ্লাইট চালুর পর থেকে যাত্রীরা দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে নিয়মিত যাতায়াত করছেন। তবে গতকাল যাত্রীদের বাড়তি কোনো চাপ ছিলো না। আগের মতোই তারা চলাচল করছে।’ নভোএয়ারের মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগের ব্যবস্থাপক মাহফুজুল আলম অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীদের বাড়তি চাপ না থাকার কথা জানিয়ে বলেন, ‘আমরা আশা করছি সামনে যে টানা তিনদিন ছুটি রয়েছে তারপর হয়তো চাপ বাড়বে।’ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, মানুষের জীবন ও জীবিকার স্বার্থে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় আবারো কঠোর লকডাউন দেয়া হতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং জনস্বার্থে সব স্টেকহোল্ডার ও মালিক-শ্রমিকের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। সড়কে চলাচলের আগে গাড়ি জীবাণুমুক্ত ও পরিষ্কার করতে হবে, যাত্রীদের শতভাগ মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে, যেকোনো মূল্যে সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে বলেও এ সময় তিনি জানান। মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, অনন্তকাল লকডাউন চলতে পারে না। জীবন ও জীবিকার কথা বিবেচনা করে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। এ সময় সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এর ব্যত্যয় হতে দেয়া যাবে না। দেশের সর্বত্র টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

আমারসংবাদ/জেআই