Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

এলাকামুখী সাবেকরা, গা-জ্বালা এমপিদের

রফিকুল ইসলাম

আগস্ট ২৩, ২০২১, ০৬:২০ পিএম


এলাকামুখী সাবেকরা, গা-জ্বালা এমপিদের
  • সাংসদদের সাথে দূরত্ব বাড়ছে নেতাকর্মীদের
  • জনপ্রিয়তায় ফিরতে এলাকায় সরব সাবেক সাংসদরা

অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দ্বন্দ্ব, রেষারেষি, ভাই লীগ-এমপি লীগ ও বিরোধী দলের নেতাদের গুরুত্ব দেয়ায় দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে চলছে লালপুর-বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি। দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সাথে দূরত্ব বেড়েছে নাটোর-১ আসনের বর্তমান সাংসদ শহিদুল ইসলামের। সাংসদ বা সাংসদপন্থিদের থেকে বঞ্চিত নেতাকর্মীরাও ভিড়তে শুরু করেছে সাবেক সাংসদ আবুল কালাম আজাদের কাছে। মূলত রাজনীতির মাঠে ব্যাপক সক্রিয় আবুল কালাম আজাদ। বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালেও দলীয় নেতাকর্মী ও নিজ নির্বাচনি এলাকায় ব্যাপক সময় দিচ্ছেন তিনি। অসহায়, দুস্থ, দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছেন। প্রতিদিন যোগ দিচ্ছেন সাংগঠনিক কার্যক্রমে।

জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ আমার সংবাদকে বলেন, দলের মধ্যে ব্যাপক কোন্দলের সৃষ্টি হয়েছে। গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে জামায়াত-বিএনপিসহ ভিন্নপন্থিদের। ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে দল ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পদপদবিতে বঞ্চিত করা হচ্ছে দুর্দিনের ত্যাগী ও পরিশ্রমী নেতাকর্মীদের। ফলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে লালপুর-বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি।

তিনি আরও বলেন, গত নির্বাচনে আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়নি। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও আমার কোনো ক্ষোভ নেই। কিন্তু দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী ভালো নেই। তাই আমি দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় করোনায় অসহায় ও দুস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সাংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকন্যা তার ওপর আবার আস্থা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাংসদ। 

আ.লীগ সূত্রে যায়, ক্ষমতার দাপট, দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিভেদ তৈরি, বলয়ভিত্তিক রাজনীতি, বউ, ছেলে-মেয়ে, ভাইদের অধিক গুরুত্ব, বিএনপি-জামায়াতসহ ভিন্নপন্থিদের দলে অনুপ্রবেশের সুযোগ তৈরি করে দেয়াসহ নানামুখী অভিযোগে গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার মনোনয়ন বঞ্চিত হন প্রায় অর্ধশত সংসদ সদস্য। এসব স্থানে উঠে আসে নতুন মুখ। আর সাংসদ পরিবর্তনের সাথে সাথে পাল্টে যায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রেক্ষাপট। দলের দায়িত্বশীল নেতা ও সাধারণ কর্মীরাও ভিড়তে শুরু করে নতুন সাংসদের কাছে। অভিমানে নিজ নির্বাচনি এলাকা ছাড়েন নৌকাবঞ্চিতরা। তবে দিন যতই গড়াচ্ছে ততই বর্তমান সাংসদের সাথে দূরত্ব বাড়ছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। ফলে তারা সাবেক সাংসদের ওপর আস্থা রাখতে শুরু করেছেন। আর বর্তমান এমপিদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজ নির্বাচনি এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন সাবেক সংসদ সদস্যরা।

তারা বলছেন, দলের মধ্যে ব্যাপক কোন্দলের সৃষ্টি হয়েছে। গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে জামায়াত-বিএনপিসহ ভিন্নপন্থিদের। ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে দল ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পদপদবিতে বঞ্চিত করা হচ্ছে দুর্দিনের ত্যাগী ও পরিশ্রমী নেতাকর্মীদের। ফলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি।

খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, অধিকাংশ স্থানে সাবেক এমপিদের পাত্তাই দিচ্ছেন না বর্তমান সাংসদ ও সাংসদপন্থিরা। সাবেক সাংসদরা এলাকামুখী হওয়ায় বর্তমান সাংসদের গা-জ্বালা শুরু হয়েছে। বর্তমান সাংসদ ও তার অনুসারীরা সাবেকদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বাধা দিচ্ছেন। দলীয় কর্মসূচিতে রাখা হচ্ছে না সাবেক এমপিদের নাম। কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছেন এমন সাবেক সাংসদদের এলাকায় আমন্ত্রণ জানানো হয় না বলে জানা গেছে। মূলত সাবেক সাংসদদের রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করে ক্ষমতার বৃত্ত ধরে রাখতেই এমন অবস্থান নিয়েছেন স্থানীয় সাংসদরা। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ দলটির নেতাকর্মীরা।

তারা বলছেন, সাবেক সাংসদের দেখানো পথেই হাঁটছেন বর্তমান সাংসদরা। তাদের একক পক্ষপাতিত্ব, ক্ষমতার অপব্যবহার, সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ, হাইব্রিড মূল্যায়ন এবং এমপি পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে বিভেদের সৃষ্টি হচ্ছে। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিটে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের। শুধু তাই নয়, অনেক সংসদীয় আসনের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় সাংসদের ভাই, ভাগ্নে, বউ, মেয়ে ও আত্মীয় স্বজনরা। ফলে পুরো সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের রাজনীতি সাংসদ পরিবারের হাতে বন্ধি।

জানা যায়, একাদশ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন-বঞ্চিত হলেও নিয়মিত নিজ নির্বাচনি এলাকার নেতাকর্মীদের সময় দিচ্ছেন এবং দলকে সুসংগঠিত করতে কাজ করছেন কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাবেক সাংসদ আবদুর রউফ। বর্তমান সাংসদ সেলিম আলতাফ জর্জের সাথে দলীয় নেতাকর্মীদের দূরত্ব বেড়েছে। মূলত তিনি কখনো স্থানীয় আওয়ামী লীগ বা দলটির সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সাথে যুক্ত না থাকায় দলের ত্যাগী, পরিশ্রমী ও পরীক্ষিত নেতারা সাংসদ বিমুখ। তারা সাবেক সাংসদে ওপরই আস্থা রাখছেন।

জানতে চাইলে আবদুর রউফ আমার সংবাদকে বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। এটাই জীবনে বড় পাওয়া। একবার এমপি হওয়া, আর তিনবার এমপি হওয়া একই কথা। নেত্রী যাকে মনোনয়ন দিবেন, তার হয়ে আমি কাজ করবো।

তিনি আরও বলেন, নেতাকর্মীরা ভালোবাসেন, নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এটাই আমার বড় পাওয়া।

অভ্যন্তরীণ কোন্দলে স্থানীয় এমপির সাথে দূরত্ব হলেও নিজ নির্বাচনি এলাকায় সময় দিচ্ছেন রাজশাহী-৫ আসনের সাবেক সাংসদ আবদুল ওয়াদুদ। তিনি আমার সংবাদকে জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছেন তিনি। প্রতিদিন যোগ দিচ্ছেন দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে। এছাড়া পার্টি অফিস, নিজ বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠক করছেন নিয়মিত।

জানতে চাইলে আবদুল ওয়াদুদ বলেন, রাজনৈতিকভাবে কারো সাথে আমার দূরত্ব নেই। দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও আমায় অনেক ভালোবাসেন এবং আমার ওপর আস্থা রাখেন।

আগামী নির্বাচনি ফের নৌকার মনোনয়ন চাইবেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, নৌকার মনোনয়ন যে কেউ চাইতে পারেন। দল যাকে মনোনয়ন দিবেন তার হয়ে আমাদের সকলের কাজ করতে হবে। দল চাইলে আমিও প্রস্তুত আছি।

গত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক। মনোনয়ন-বঞ্চিত হলেও এই চার নেতা দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালন করে আসছেন। তাদের কঠোর পরিশ্রম ও সঠিক সিদ্ধান্তের কারণে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন, শূন্য সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও পৌরসভা নির্বাচনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তারা। একই সাথে সময় দিচ্ছেন নিজ নির্বাচনীয় এলাকায়। নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে। বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালেও সুরক্ষাসামগ্রী, ত্রাণসামগ্রী ও নগদ অর্থ বিতরণ করছেন নিজ নির্বাচনি এলাকায়। 

একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সাংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়া অধিকাংশ সাংসদ করোনাকালে নিজ নির্বাচনি এলাকার অসহায়, দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তালিকা তৈরি করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন খাদ্যসামগ্রী। সময় দিচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীদের। মূলত আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই তারা নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। তাদের টার্গেট নৌকার মনোনয়ন নিশ্চিত করা।

আমারসংবাদ/জেআই