Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শন বাস্তবায়নেই নিহিত মানব উন্নয়ন

প্রকৌশলী মো. শামসুর রহমান

আগস্ট ২৫, ২০২১, ০৭:০৫ পিএম


বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শন বাস্তবায়নেই নিহিত মানব উন্নয়ন

উন্নয়ন ও দক্ষতা পরস্পরের হাত ধরে চলে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যেই পরিসরে বলা হোক না কেন— উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় বা টেকসইয়ের স্বার্থে দক্ষতা অপরিহার্য। তবে, মানব উন্নয়নের সকল সূচকের গুণগত মানোন্নয়ন ছাড়া পরিপূর্ণ দক্ষতা অর্জন সম্ভব নয়। বিষয়টি বিবেচনায় বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়নে অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কেননা, আজ যে জনসম্পদের কর্মবিচক্ষণতায় বা কর্মপ্রচেষ্টায় একটি দেশ বা সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে, ভবিষ্যতে দক্ষ মানবসম্পদের অপ্রতুলতায় সেটি ধরে রাখা সম্ভব নাও হতে পারে। আসলে টেকসই উন্নয়নটা কি, তা আমাদের বুঝতে হবে। টেকসই উন্নয়নের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে— ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিজস্ব চাহিদা মেটানোর ক্ষমতাকে বজায় রেখে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা মেটানোকে টেকসই বা স্থিতিশীল উন্নয়ন বলে। যার মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো— ১. পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নমূলক কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে সাহায্য করা; ২. প্রাকৃতিক সম্পদ ও ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশের গুণগতমান বজায় রেখে মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা করা; ৩. প্রাকৃতিক সম্পদ ও সাংস্কৃতিক সম্পদ হ্রাস বা ধ্বংস না করে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। এসব বিবেচনায় রেখে ব্রুন্ডল্যান্ড কমিশন তাদের প্রতিবেদনে স্থিতিশীল উন্নয়ন অর্জনে স্থিতিশীল পরিবেশ, স্থিতিশীল পৃথিবী, স্থিতিশীল মানব উন্নয়ন, স্থায়ী শান্তি ও বিকাশ, স্বল্প অপচয়, টেকসই প্রযুক্তির উপর অধিকতর গুরুত্বারোপ করেছে। এ ছাড়াও স্থিতিশীল উন্নয়নে জীববৈচিত্র্য, গ্রিন হাউস গ্যাস, ক্ষতিকারক ও বিষাক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শিল্পাঞ্চল দূষণ হ্রাস, নিরাপদ বাস্তুসংস্থানের ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। স্থিতিশীল উন্নয়নের উদ্দেশ্য হলো— বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সম্পদের ব্যবহার, জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ, এমনভাবে সম্পদের ব্যবহার করা, যাতে সামাজিক ন্যায়বিচার বজায় থাকে, সম্পদের পুনর্ব্যবহার, মানুষের গুণগত মানের বিকাশ, ভালো স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও উচ্চ মাথাপিছু আয়, পরিবেশ সম্পর্কিত বিষয়গুলো বিশ্বের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা, মানুষকে বিশ্ব সম্পদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে বোঝানো এবং স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য সকলের অংশগ্রহণ আবশ্যক ইত্যাদি। এ সকল বিষয়ে সম্যক ধারণা লাভের জন্য মানুষকে অবশ্যই বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্পকলা, জীবনবোধ, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞানচর্চা করতে হবে। তাই, শিক্ষাব্যবস্থার মৌলিক উন্নয়ন ও বাস্তবমুখী করা ব্যতীত স্থিতিশীল উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

নানান প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। উন্নয়নের এ সুফল ধরে রেখে আগামী প্রজন্মের জন্য স্থিতিশীল উন্নয়ন ধারাবাহিকতা রক্ষায় মানবসম্পদ উন্নয়নে আমাদের এখনই মনোযোগী হতে হবে। বর্তমান প্রজন্ম যা অর্জন করছে, সেটি ধরে রেখে আগামী প্রজন্মের নিশ্চিত জীবনমান সুরক্ষিত করার জন্য শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়ন অপরিহার্য। তবে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে— আমরা এখনো মৌলিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে অবহেলা করছি। আবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে অধিকতর গুরুত্ব দিতে গিয়ে মৌলিক শিক্ষাকে অবহেলা করা হচ্ছে। ফলে শিক্ষার মাধ্যমে কখনো পরিপূর্ণ মানবসম্পদ গড়ে উঠছে না। পারস্পরিক জ্ঞান ও জীবনবোধের অভাবের কারণেই আমাদের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী এখনো শতভাগ সুনাগরিক হয়ে উঠতে পারে নাই। সেই কারণে জাতীয় দায়বোধের চেয়ে মানুষের মাঝে ব্যক্তি প্রাপ্তি আকাঙ্ক্ষা চরম আকার ধারণ করছে। যা সুশাসন ও উন্নয়নের পথে অন্যতম অন্তরায়। সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন প্রশাখায় শিক্ষার্থী আকৃষ্ট করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার উপর গুরুত্ব দিতে হবে।

দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থায় প্রজন্মের ধারাবাহিকতায় আমরা যে শিক্ষাব্যবস্থায় অভ্যস্থ, সেখানে পরিপূর্ণ দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এ শিক্ষাব্যবস্থায় যে মৌলিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না, কেবল তা নয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিজ্ঞানকেও চরমভাবে অবহেলা করা হচ্ছে। কার্যত, এর মধ্য দিয়ে এক ধরনের পরনির্ভরশীল শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে। যাদের কাজ হচ্ছে— অপরের উপর খবরদারি করা, কর্ম ফাঁকি দিয়ে সহজলভ্য পন্থায় ভোগবিলাস ও সম্পদ অর্জন করা। এ ধরনের জনগোষ্ঠী দিয়ে একটি জাতিকে বেশি দূর এগিয়ে নেয়া যেমন সম্ভব নয়, তেমনি লব্ধ উন্নয়ন প্রক্রিয়া ধরে রাখা যাবে না। বিষয়টি উপলব্ধি করে ১৯৭৩ সালের ২০ মার্চ, বাংলাদেশ প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু স্নাতকধারীদের উদ্দেশে বলেছিলেন— ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের দুইশ বছর ও পাকিস্তানের ২৫ বছরে গড়ে ওঠা শিক্ষাব্যবস্থা শুধু কেরানি তৈরি করেছে, মানুষ তৈরি করেনি। এ জন্য বঙ্গবন্ধু শিক্ষাব্যবস্থায় আদর্শ দক্ষ নাগরিক গড়ে তোলার বিষয়ে অধিকতর গুরুত্ব দেন। মূলত তিনি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে দক্ষ মানবসম্পদ উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন। তিনি পরনির্ভরশীল মানসিকতাকে টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পথে অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করেন। সঙ্গত কারণে তিনি মৌলিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের ওপর জোর দেন। বঙ্গবন্ধু এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, যার মাধ্যমে মানুষ সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী হয়ে উঠবেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে গঠিত প্রথম শিক্ষা কমিশনের প্রতিবেদনে মেধাবীদের শিক্ষকতায় আকৃষ্টকরণ ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ, সম্মানজনক পারিশ্রমিক, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার উন্নয়ন ও বিস্তার, শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়ন সহায়ক উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থা চালু, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে গবেষণার পরিবেশ তেরি করা, সবার জন্য শিক্ষার সমান সুযোগ সৃষ্টি ও শিক্ষাকে একটি বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনার জোর দেন। এই কমিশন শিক্ষার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে জিডিপির ৫ থেকে ৭ ভাগ বরাদ্দের সুপারিশ করেন। কমিশনের সুপারিশের আলোকে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণও করেছিলেন।

কিন্তু ১৯৭৫ সালের মর্মান্তিক ঘটনার পর সেই উদ্যোগ থেমে যায়। উল্টোপথে চলতে থাকে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা। ফলে শিক্ষার মাধ্যমে যেমন সুনাগরিক তৈরি হয়নি, তেমনি জাতি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমনস্ক হয়ে উঠতে পারেনি। বরং, পরনির্ভরশীল মানসিকতাসম্পন্ন শিক্ষিত জনগোষ্ঠী চাকরি নির্ভর হয়ে পড়ে। বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণা কার্যক্রমের পরিবর্তে আমাদের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কেরাণী তৈরির প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়ে। ফলে দুর্ভাগ্যজনকভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে— বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে গবেষণার চেয়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। এই প্রতিযোগিতা যে শুধু জীবন ও জীবিকার জন্য সেটি নয়, বরং এখানে ক্ষমতা দেখানোর একটি স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে। ফলে দেশের প্রথম সারির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখনো গবেষণা ও উদ্যোক্তা উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ ছাড়া, দেশে উচ্চতর গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি না হওয়ায় অপেক্ষাকৃত মেধাবীরা বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে। অথচ, এ ধরনের মেধাবী তৈরিতে জাতিকে অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। এ বিদেশ পাড়ি দেয়া পেশাজীবী গোষ্ঠী বিদেশে স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন গড়ে তুললেও দেশের উন্নয়নে তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখছে না। এটি মেধা অপচয়ের নামান্তর।

বর্তমানে বিশ্ব জনমিতির অত্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৭০ ভাগের বয়স এখন ৩২ বছরের নিচে। যাদের রয়েছে অদম্য কর্মক্ষমতা। এই জনগোষ্ঠীকে মৌলিক ও প্রযুক্তিমুখী শিক্ষাব্যবস্থার আওতায় এনে দক্ষ করে তোলার উপর নির্ভর করছে আগামীর বাংলাদেশের ভবিষ্যত। বর্তমানে দক্ষ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশের যে অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি লক্ষ করা যাচ্ছে, সেটির স্থায়িত্ব ধরে রাখার স্বার্থেই আমাদের মানবসম্পদ উন্নয়নে অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে, পরিবর্তন হচ্ছে  বৈশ্বিক কর্মধরন। তার সাথে তাল মেলাতে ব্যর্থ হলে আমাদের আগামী প্রজন্মকে চরম মাশুল দিতে হবে। বিষয়টি অনুধাবনে নিয়ে শুধু নামমাত্র কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সম্প্রসারণ নয়, প্রশিক্ষিত জনবল দিয়ে প্রাথমিক পর্যায় থেকে মৌলিক ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি শিক্ষাবিস্তারে কাজ করতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শনকে সামনে রেখে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার উন্নয়নের পাশাপাশি ইতিহাস ঐতিহ্যনির্ভর মৌলিক শিক্ষাবিস্তারে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে গড়ে উঠছে দর্শনীয় শিক্ষা অবকাঠামো। আমাদের বুঝতে হবে শুধু নান্দনিক শিক্ষা অবকাঠামো দিয়েই সুশিক্ষা বা মানসম্পন্ন শিক্ষার প্রসার ঘটানো সম্ভব নয়। মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক প্রয়োজন হলেও প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের আকৃষ্ট করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তন আনতে হলে শিক্ষার সকল স্তরে শিক্ষকদের জন্য সম্মানজনক পারিশ্রমিক নিশ্চিত করতে হবে। শিশু শ্রেণি থেকে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনষ্ক করে তুলতে হবে। এর জন্য বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গঠিত শিক্ষা কমিশনের সুপারিশের আলোকে শিক্ষা খাতে জাতীয় আয়ের ৭ ভাগ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

বিভিন্নভাবে পিছিয়ে পড়া কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার উন্নয়নে বর্তমান সরকার নানান পরিকল্পনা নিয়েছে। মূলত কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে শিক্ষার মূলধারায় নিয়ে আসতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার কাজ করছে। তবে, অপ্রত্যাশিতভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে— প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে গতিতে দক্ষ জনশক্তি উন্নয়নের চিন্তা করছেন, তার সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সেভাবে চিন্তা ও কাজের সমন্বয় করতে পারছে বলে মনে হয় না। দেশের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা আজ সংকটে বিপর্যস্ত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আজ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাসহ ঞঠঊঞ সেক্টর অস্তিত্ব সংকটে নিপতিত। দেশের সরকারি ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং ৬৪টি সরকারি টিএসসিতে ভয়াবহ ক্লাসরুম সংকট, ল্যাব, ওয়ার্কসপ সংকট, ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি, শিক্ষা উপকরণের অভাব, চরম শিক্ষক সংকট, শিক্ষকদের ২০-২২ বছরেও পদোন্নতি না দেয়া, স্টেপ প্রকল্পে কর্মরত ৭৭৭ জন শিক্ষককে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন দেয়ার পরও নিয়মিত না করা এবং বিগত ১০ মাস যাবত তাদের বেতন ভাতা বন্ধ করে দিয়ে ওই পরিবারগুলোকে বিপর্যস্ত করে তোলা, ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি ও ট্রেনিং ভাতা বৃদ্ধি না করা, সংযুক্ত ও স্বতন্ত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কারিগরি (ট্রেড ইনস্ট্রাক্টর) শিক্ষকদের পেশাগত কোনো সমস্যারই সমাধান না করা, ব্যবহারিক ক্লাসের কোনো সুযোগ না দিয়ে কারিগরি শিক্ষার নামে প্রহসন চলছে। চালু ২৯টি ইমার্জিং টেকনোলজি থেকে পাস করা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের পদসৃষ্টি বা নিয়োগ দেয়ার কার্যকর উদ্যোগ নেই। এমন বাস্তবতায় দীর্ঘদিনের মীমাংসিত চার বছরের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা কোর্সের মেয়াদ হ্রাস করে তিন বছরে নামিয়ে আনার আত্মঘাতী উদ্যোগ জাতিকে উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছে। বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে ঞঠঊঞ সেক্টরের ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার পেশাজীবীরা।

দেশ বিদেশে যখন মধ্যম স্তরের প্রকৌশলী হিসেবে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের হটকারি সিদ্ধান্ত সরকারের দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিকল্পনাকে বাধাগ্রস্ত করবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে— এ শিক্ষার প্রতি মেধাবী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কর্মক্ষেত্রে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা অবমূল্যায়িত হবেন। দেশ বিদেশের কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি বাধাগ্রস্ত হবে। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের যোগ্যতা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের সাথে এডুকেশনের পার্থক্য তিন বছর হওয়ায় চাকরির একধাপ নিচে বেতন ও মর্যাদা নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হবে, মর্যাদা হারাবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের চেয়ে নিম্নমানের হয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক জব মার্কেটে পূর্বের ন্যায় বেতন ও মর্যাদা হারাবেন, এতে দেশ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রধানমন্ত্রীর আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী গণপ্রকৌশলীখ্যাত এই প্রকৌশলীরা আধুনিক প্রযুক্তির এই বিশ্বে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। বাধাগ্রস্ত হবে দেশের উন্নয়ন উৎপাদন। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তি আত্মস্থ করতে ব্যর্থ হবে। ফলে উন্নত প্রযুক্তির সুফল গ্রহণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যর্থ হবে জাতি। তাই, জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শনকে কাজে লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানব উন্নয়নে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, সেটি বাস্তবায়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কার্যকর উদ্যোগ নেবেন— বঙ্গবন্ধুর ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকীতে জাতি সেটাই প্রত্যাশা করে।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, আইডিইবি ও চেয়ারম্যান, ট্রাস্টি বোর্ড, এনপিআই ইউনির্ভাসিটি অব বাংলাদেশ

আমারসংবাদ/জেআই