Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

নীলক্ষেত-বাংলাবাজার বইয়ের দোকান: করোনায় ক্ষতি ৪০ কোটি টাকা

সেপ্টেম্বর ১, ২০২১, ০৭:৪৫ পিএম


নীলক্ষেত-বাংলাবাজার বইয়ের দোকান: করোনায় ক্ষতি ৪০ কোটি টাকা
  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি বিক্রেতাদের
  • দেড় বছরে দোকানপ্রতি লোকসান তিন-চার লাখ টাকা
  • ব্যক্তিগত উদ্যোগ নেই দোকান মালিক সমিতির

দীর্ঘ দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে আর্থিকভাবে কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে শিক্ষা সরঞ্জাম বিক্রির পেশায় নিয়োজিত ব্যবসায়ীদের। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে বড় বই মার্কেট নীলক্ষেত ও বাংলাবাজার বই মার্কেটের বই বিক্রেতাদের। দফায় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় বাড়ার কারণে বই-খাতা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করার পেশা যাদের তাদের মধ্যে বিরাজ করেছে এক চাপা কান্না।

করোনায় দোকান বন্ধ থাকলেও দিতে হচ্ছে দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিলসহ নানা আনুষঙ্গিক খরচ। যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সাথে বইয়ের দোকানগুলোও বন্ধ ছিলো তাই আর্থিকভাবে রীতিমতো নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে বিক্রেতাদের। দোকান ভাড়া ও আনুষঙ্গিক খরচ নিয়ে দোকান মালিক সমিতির সাথে কয়েক দফায় সভা করলেও তেমন একটা সুফল পাচ্ছেন না বিক্রেতারা। যার ফলে অধিকাংশ দোকানদারকেই ব্যবসা গুটিয়ে চলে যেতে হচ্ছে।

ইসলামি মার্কেট বণিক বহুমুখী সমবায় সমিতি বলছে, তারা যতটুকু পেরেছে ততটুকু ছাড় দিয়েছে। নীলক্ষেত ইসলামিয়া মার্কেট বণিক বহুমুখী সমবায় সমিতির তথ্যমতে, নীলক্ষেতে প্রায় ৫৩০টি বইয়ের দোকান আছে তাদের এই মার্কেটে।

বই বিক্রেতাদের মতে, প্রতি দোকানে করোনাকালীন দেড় বছরের প্রায় তিন-চার লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। ৫৩০টি দোকানে গড়ে প্রায় ১৫-২০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে করোনায় দেড় বছরে। দেশের বৃহত্তম বই মার্কেট বাংলাবাজার। বাংলাবাজার বই মার্কেট মালিক সমিতির তথ্যমতে, তাদের আওতাধীন কয়েকটি মার্কেট মিলে দোকান আছে প্রায় হাজার খানেক। প্রকাশনী ও বিক্রিতাদের তথ্যমতে করোনায় দেড় বছরে ছোট-বড় দোকান মিলিয়ে ক্ষতি হয়েছে দোকান প্রতি চার-পাঁচ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে আনুমানিক ২০-৩০ কোটি টাকা। করোনায় এত বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে বিক্রেতাদের। যেহেতু গত বছর শুরুর দিকেই হুট করেই করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। তাই লোকসান হয়েছে বেশি। কারণ বছরের শুরুতেই জানুয়ারি মাসেই একাডেমিক বই ও সহায়িকা বই ছাপা হয়ে যায় এবং প্রকাশনী থেকে অগ্রিম টাকা দিয়ে বই দোকানে তুলতে হয়। তাছাড়া ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষার্থীসহ ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও অটোপাস দিয়ে পরবর্তী বর্ষে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে, তাই গত বছরের অধিকাংশ বই রয়ে গেছে অবিক্রিত।

নীলক্ষেত বই মার্কেটের ভাই ভাই বুক হাউসের কর্ণধার নুরুল আমিন আমার সংবাদকে বলেন, ‘গত বছর ডিসেম্বর প্রায় পাঁচ লাখ টাকার বই অর্ডার করছিলাম। প্রকাশনীকে কয়েক ধাপে দুই-তিন লাখ টাকাও অগ্রিম দিয়েছি। জানুয়ারি মাসেই বই চলে আসে কিন্তু মার্চ থেকেই করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়; সাথে সাথে আমাদের দোকানও বন্ধ হয়। স্কুল-কলেজ আর খোলার নাম নেই। এ দিকে বছর শেষ ২ শতাংশ বইও বিক্রি হয়নি। খাতা-কলম সব আগের মতোই স্টক আছে। দোকানপাট বন্ধ, বিক্রি না হলেও মাস শেষে দোকান ভাড়া দিতে হচ্ছে। দোকান ভাড়া লাখ টাকা জমে আছে দিতে পারছি না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুললে তো আমরা আর্থিকভাবে একেবারে বিলীন হয়ে যাবো, এমনিতেও তিন-চার লাখ টাকা ক্ষতি হইছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রেতা আমার সংবাদকে বলেন, ‘দেড় বছর ধরে করোনায় বেচাবিক্রি নেই। মাস শেষে ভাড়া দিতে হচ্ছে। দেড় বছরে ভাড়া জমছে দুই লাখ। এখনো এক টাকাও দিতে পারিনি। বিদ্যুৎ বিলের টাকাই বিক্রি করে উঠে না। মালিক সমিতিকে আমাদের খারাপ অবস্থার কথা বলা হলেও তেমন একটা উদ্যোগ নিচ্ছে না। ভাড়ার টাকাও কমাচ্ছে না। এই টাকা উঠাবো কবে আর দেবো কবে? আমাদের একটাই দাবি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হোক। লাখ টাকা লোকসান করে বই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন ফজল বুক ডিপুর ফজল মিয়া। তিনি বলেন, ৩০ বছর ধরে নীলক্ষেতে বইয়ের ব্যবসা করি। এতটা ক্ষতি কখনো হয়নি। দেড় বছরের দোকান ভাড়া বকেয়া আছে লাখ টাকা। এদিকে সংসারে টানাটানি। বাধ্য হয়ে ছেড়ে দিতে হচ্ছে। উপায় নেই। এখন কী করব তাও ভেবে পাচ্ছি না।’

দোকানদারদের পাশে সমিতির ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোনো পদক্ষেপ বা কোনো সুবিধা দিয়েছেন কি-না সে সম্পর্কে নীলক্ষেত ইসলামিয়া মার্কেট বণিক বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মাহমুদ (সেলিম) আমার সংবাদকে বলেন, ‘করোনায় আমাদের সব কিছু শেষ করে দিয়েছে। দোকানদারদের কোটি কোটি টাকা লস হইছে। আমাদের ভাড়ার এক বছর ধরে আটকে আছে। সিটি কর্পোরেশনের ফিসহ অন্যান্য খরচ কিন্তু বহন করতেই হচ্ছে আমাদের। দোকান ভাড়া মওকুফ করেছেন কি-না সে সম্পর্কে তিনি বলেন, করোনায় সবার অবস্থাই খারাপ। আমাদের অনেকেই সংসার চলে দোকানের ভাড়া তুলে চাইলেও সম্ভব না অনেক সময়। তবুও আমরা যতটুকু পেরেছি দোকানদারদের থেকে কম নিচ্ছি। না নেয়া ছাড়া তো উপায় নেই। আমাদেরও সংসার আছে। শিক্ষা খাতের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোকে তো সরকার প্রণোদনা দিচ্ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে আমরা আশাবাদী যে, ক্ষতি একদিন পুষিয়ে নিতে পারব। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিন দ্রুত।’ বাংলাবাজার বই মার্কেট সমিতির একাধিক সদস্যের সাথে কথা হলে তারা জানান, যেহেতু করোনায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে তাই তারা বিক্রেতা ও প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা করে ভাড়া ও অন্যান্য বিষয়গুলো সমাধানে আসছেন। তবে বিক্রেতা ও দোকানদারদের দাবি তাদের দোকান ভাড়া অন্তত কিছুটা মওকুফ করা হোক।

আমারসংবাদ/জেআই