Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

শক্তিশালী তৃণমূল গঠনে বার্তা আসছে

রফিকুল ইসলাম

সেপ্টেম্বর ৫, ২০২১, ০৬:৩৫ পিএম


শক্তিশালী তৃণমূল গঠনে বার্তা আসছে

দ্বাদশ জাতীয় সাংসদ নির্বাচন এবং দলের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে শক্তিশালী তৃণমূলে গঠনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বসবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সীমিত পরিসরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে দীর্ঘ এক বছর পর কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠককে বেশ গুরুত্বের সাথেই দেখছে ক্ষমতাসীন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।

তারা বলছেন, দলের ভাবমূর্তি ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করা এবং নানামুখী সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করতে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বসবে। ওই বৈঠক থেকে দলে দায়িত্বশীল নেতাদের কর্মপরিকল্পার নানা বিষয়ে পরামর্শ দেবেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আ.লীগ সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের শূন্য পদ পূরণ, দ্বাদশ জাতীয় সাংসদ ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা, দলের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি হিসেবে মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটির সম্মেলন ও তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও কোন্দল নিরসন এবং মাঠের রাজনীতিতে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের গতি ফেরাতে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়নসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক থেকে। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি এবং দেশে চলমান রাজনীতি ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ও আলোচনায় আসবে।

যেহেতু করোনার কারণে সর্বশেষ গত বছরের ৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক। সে সময় দলের সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ৩২ জন নেতাকে উপস্থিত থাকার বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে আসন্ন বৈঠকে কার্যনির্বাহী সংসদের অধিকাংশ নেতাকেই ডাকা হবে বলে জানা গেছে। মূলত করোনার বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে দলকে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করতে কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যদের উপস্থিত রাখা হবে।

জানা যায়, আওয়ামী লীগের গত ২১তম জাতীয় সম্মেলনর পর বেশ কিছু মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে অধিকাংশ ইউনিটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে রয়েছে নানামুখী জটিলতা। প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে বিতর্কিত সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে স্থানীয় সাংসদের ক্ষমতার অপব্যবহার, অনুপ্রবেশ, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সিন্ডিকেট ধরে রাখা, ত্যাগীদের বাদ দিয়ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারীদের ঠাঁই দেয়ার মতো অভিযোগও রয়েছে প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে।

যা নিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলার শীর্ষ নেতাদের ঢাকায় ডেকেও সমাধান দিতে পারেনি আওয়ামী লীগের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ নেতারা। সমস্যা সৃষ্টি হওয়া সেই ইউনিটির সাংগঠনিক রিপোর্ট হস্তান্তর করা হবে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে তৃণমূলে মুখোমুখি অবস্থানে আওয়ামী লীগ। জেলা-উপজেলার শীর্ষ নেতাদের সাথে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছেন দলটির স্থানীয় সাংসদ ও সাংসদপন্থিরা। তারা ক্ষমতার অপব্যবহার, পরিবার বলয় সৃষ্টি, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পক্ষপাতিত্ব, বিদ্রোহীদের ইন্ধন দেয়া, ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন ও বিভেদের রাজনীতির মধ্য দিয়ে দল ও সহযোগী সংগঠনের মাঝে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও কোন্দল সৃষ্টি করছেন। বিশেষ করে আসন্ন  ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের এসব দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হতে পারে।

সাংসদরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নিজ বলয়ের প্রার্থীদের নৌকার মনোনয়ন নিয়ে দিতে তোড়জোড় শুরু করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসাবাড়িতেও ধরনা দিতে শুরু করেছেন। নির্বাচন কেন্দ্রীক মাঠের রাজনীতির এসব চিত্র তুলে ধরা হবে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে। যে সকল সাংসদ ও জেলা-উপজেলার শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে, তাদের তালিকা সভানেত্রীর হাতে তুলে দেবেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। মূলত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের চাওয়া-তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও কোন্দল নিরসনের মধ্য দিয়ে বিগত জাতীয় সংসদ এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মতোই আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটের মাঠে নামানো।

তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকারের যেকোনো নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগের পক্ষে থেকে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং নির্বাচনে নেতাকর্মীদের প্রচারমুখী করা। এছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনিবাহী সংসদের বেশ কিছু নেতা মৃত্যুবরণ করেছেন। বর্তমানে ওই সকল পদ ফাঁকা রয়েছে।  দীর্ঘ এক বছর পর হতে যাওয়া এ বৈঠকে শূন্যপদগুলো পূরণ করে দিতে পারেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

কারণ আগামী বছর অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন। সেই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই বড় পরিসর এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করবে আওয়ামী লীগ। যদিও এসব বিষয়ে চূড়ান্ত গাইডলাইন দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছেন।  

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম আমার সংবাদকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকারের যেকোনো নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগের পক্ষে থেকে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কারণ নির্বাচনে জনগণের সমর্থনই আওয়ামী লীগের শক্তি, জননেত্রী শেখ হাসিনার শক্তি।

তিনি আরও বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন শেষ করা, শেষ হওয়া সম্মেলনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঠপর্যায়ে আরও যুক্ত করা, দলের ভাবমূর্তি ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করা এবং নানামুখী সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করতে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বসা হবে। ওই বৈঠক থেকে দলীয় নেতাদের নানা বিষয়ে পরামর্শ দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’

আমারসংবাদ/এআই