Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

রাজি সমঝোতায় শর্তেও প্রস্তুত

সেপ্টেম্বর ৭, ২০২১, ০৬:৩০ পিএম


রাজি সমঝোতায় শর্তেও প্রস্তুত

বেগম খালেদা জিয়া! সাবেক সেনাপ্রধানের স্ত্রী। দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। দুর্নীতির দায়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে কারাভোগ করেন ২৫ মাস। গত বছরের ২৫ মার্চ শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের মুক্তি পান। এরপর থেকে ১৭ মাস গুলশানের বাসায় চিকিৎসাধীন। দলটির শীর্ষ নেতাদের অভিযোগ— খালেদা জিয়া গৃহবন্দি। এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৫৪ দিন হাসপাতালে লড়েছেন মৃত্যুর সঙ্গে। এখন প্রতিদিনই বাড়ছে জটিলতা।

কিডনি এবং লিভার কাজ করছে না। বারবার আসছে জ্বর। অন্যের সাহায্য ছাড়া পারছেন না চলতেও। চিন্তিত পরিবার। চিকিৎসকরাও জানিয়ে দিয়েছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। তার ভালো চিকিৎসার সুযোগ দেশের বাইরে। যেখানে তিনি নিয়মিত চিকিৎসা করাতেন, অ্যাডভান্সড টেকনোলজি আছে এমন কোনো জায়গায় তার চিকিৎসায় লিখিত পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এ নিয়ে আবারো সরকারের দরবারে গিয়েছে খালেদা জিয়ার পরিবার। পর্দার আড়ালে সমঝোতা করছে বিএনপির হাইকমান্ড। খালেদা জিয়ার রাজনীতি ও সম্মান রক্ষাই দলে এখন বড় অগ্রাধিকার। চেষ্টা চলছে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সিদ্ধান্ত পাওয়ার। সমঝোতায়ও রাজি দলটি। শর্তও গ্রহণ করতে প্রস্তুত। যেকোনো মূল্যে শেষ সময়ে হলেও চিকিৎসা নিশ্চিতের ভূমিকা দলে নিতে চাচ্ছে তারা। দলের একটি অংশ বলছে সরকারও খালেদা জিয়ার দুর্ঘটনার দায় নিতে চাচ্ছে না। অবস্থা যদি খুবই খারাপ হয়ে যায় তখন সরকার নিজ ইচ্ছা থেকেই চিকিৎসা নিশ্চিতে সুযোগ দেবে।

এ নিয়ে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছে তার পরিবার। গত সপ্তাহে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর এ আবেদন করেন। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মতামতের জন্য আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের লিখিত পরামর্শ সরকারকে জানায় পরিবার। মুক্তি চেয়ে করা পরিবারের আবেদনে গতকাল মতামত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। এ মতামত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এসেছিল, আমরা মতামত দিয়ে গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে এটি আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

মতামতে কী বলা হয়েছে জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, ‘এটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে, তারপর চূড়ান্ত হবে। এর আগে তো আমি কিছু বলতে পারবো না।’ আগামী শুক্রবার জার্মান থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশে এলে এ নিয়ে তিনি বিস্তারিত জানাবেন বলে জানা গেছে নির্ভরযোগ্য সূত্রে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা ও চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ডের দেয়া লিখিত পরামর্শগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়া হয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে চাওয়া হয়েছে নিঃশর্ত মুক্তি।

গত ১৫ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে খালেদা জিয়ার কারাভোগের মেয়াদ ছয় মাস স্থগিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর সেই মেয়াদ শেষ হচ্ছে। মেয়াদ শেষের কয়েক দিন আগে খালেদার ভাই শামীম এস্কান্দার আবেদন করলেন।

এদিকে দল ও রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিদের কাছ থেকে অভিযোগ উঠেছে, খালেদা জিয়া এ অবস্থায় চিকিৎসার অভাবে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়ার পেছনে বিএনপিরই বড় ভূমিকা রয়েছে। দলীয় প্রধানের মৃত কফিনেও চেয়ার ও ক্ষমতার হিসাব চলছে। দলীয় ষড়যন্ত্র এগিয়ে গেছে বহুদূর।

তারেক রহমান লন্ডনে বসে নির্দেশনা দিচ্ছেন এ জন্য অন্য সিনিয়র নেতারাও কিছু বলছেন না। শেষ সময়ের রাজনীতিতে সম্মান বাঁচাতে অভিজ্ঞরাও চুপ হয়ে গেছেন। দলের ভেতরের বড় একটি অংশ মনে করছে, খালেদা জিয়া মরলেই খুশি। তাদের ভবিষ্যতে চেয়ার নির্দিষ্ট হবে। এ জন্যই তারা খালেদা জিয়ার জন্য কিছুই করছেন না। দলীয় নীরবতায় মৃত্যুর পথে খালেদা জিয়া। বারবার সিনিয়র নেতারা আন্দোলনের কথা বললেও কর্মীরাও এখন আর বিশ্বাস করছেন না। এখনো বড় অংশ আন্দোলনের আড়ালে সমঝোতাকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এখনই খালেদা জিয়া ইস্যু বা জাতীয় স্বার্থে সরকারকে রাজপথমুখী চাপে আপাতত আগ্রহ নেই বিএনপির। খালেদা জিয়ার সম্মান রক্ষায় কৌশলগত ভূমিকা পালন ও সমঝোতা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক দৃষ্টিতেই প্রধান নজর।

এ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান আমার সংবাদকে বলেন, পরিবারের পাশাপাশি দলের পক্ষ থেকে সরকারকে আহ্বান জানানো হবে। আমরা তো সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে উদ্যোগ নিয়েছি। এখন তাদের পক্ষ থেকে সময় পাওয়া গেলেই হবে। খালেদা জিয়া পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সাজা স্থগিত করে তাকে মুক্তি দিয়েছিল। করোনায় আক্রান্ত হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিতে সরকারের কাছে আবেদন করে পরিবার। কিন্তু সরকার অনুমতি দেয়নি।

এখন আমরা আবারো চেষ্টা করছি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু আমার সংবাদকে বলেন, ‘স্থায়ী কমিটির প্রতিটি বৈঠকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। গত সপ্তাহের বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে দলীয়ভাবে চেষ্টা করার বিষয়টি লিখিত এজেন্ডা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমরা বারবার তার মুক্তি ও চিকিৎসার বিষয়ে অনুমতির জন্য সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি। কিন্তু সরকার প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে অনুমতি দিচ্ছে না।’

বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, এ দেশে সর্দি-কাশি হলেও অনেক লোক দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যান। সে ক্ষেত্রে একজন সেনাপ্রধানের স্ত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশের বাইরে চিকিৎসা করতে দেয়া উচিত। খালেদা জিয়া বর্তমানে শেষ সময়ে রয়েছে। খুব খারাপ সময়ে রয়েছে। মুক্তি পাওয়া তার আইনগত অধিকার, মানবিক অধিকার। আসলে খালেদা জিয়াকে নিয়ে এখন দলের মধ্যেই ষড়যন্ত্র চলছে। তারেক রহমান লন্ডনে বসে নির্দেশনা দিচ্ছেন এ জন্য অন্য সিনিয়র নেতারাও কিছু বলছেন না। তারা মনে হয় মনে করছেন খালেদা জিয়া মরলেই খুশি। তাদের ভবিষ্যতে চেয়ার নির্দিষ্ট হবে। এ জন্য খালেদা জিয়ার জন্য কিছুই করা হচ্ছে না।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট দরকার, তার অসুখগুলো নিয়ে অ্যাডভান্স সেন্টারে যাওয়া জরুরি। তার হার্ট ও কিডনির সমস্যা আছে। ফান্ডামেন্টাল কিছু সমস্যা রয়েছে যে সমস্যাগুলো উদ্বেগজনক।’