Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নিরলস জয়িতা ফাউন্ডেশন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেপ্টেম্বর ৮, ২০২১, ০৭:০৫ পিএম


নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নিরলস জয়িতা ফাউন্ডেশন

জাতীয় উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নারীকে সম্পৃক্তকরণ ও নারীর সার্বিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা সুষম উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। এ উপলব্ধি থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করেন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে নির্যাতনের শিকার ও ক্ষতিগ্রস্ত নারীসমাজের পুনর্বাসনের জন্য ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ড গঠন করেন।

পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে জাতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে নারী মুক্তির অগ্রযাত্রা শুরু হয়। পিতার দর্শন বাস্তবায়নে নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন নারীবান্ধব পদক্ষেপ ইতোমধ্যে সারাবিশ্বেই রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

তারই ধারাবাহিকতায় বিগত ২০১১ সালে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধায়নে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর তিন বছর মেয়াদি জয়িতা শীর্ষক কর্মসূচি চালু করে। তৃণমূলের নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শন ও বিপণনের জন্য ধানমন্ডির রাপা প্লাজার দুটি ফ্লোরে জয়িতা বিপণন কেন্দ্র চালু করা হয়।

এই প্ল্যাটফর্মে ৬৪ জেলার ১৪০ জন নারী উদ্যোক্তা পণ্য বিপণনে সুযোগ পান। একই বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জয়িতা কার্যক্রমের উদ্বোধন করে জয়িতার ফলক উন্মোচন করেন। ক্রমবর্ধমান শিক্ষিত নারী জনগোষ্ঠীর সম্মানজনক বিকল্প কর্মসংস্থান ও জীবিকা অর্জনের সুযোগকে অবারিত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী
স্বতস্ফূর্ত ঘোষণা করেন যে, জয়িতা আজ ঢাকায় চালু করলাম, পর্যায়ক্রমিকভাবে জেলা-উপজেলায় এবং ডিভিশনাল হেডকোয়ার্টারও আমরা করতে যাচ্ছি। এ লক্ষ্য অর্জনেও নিরলস কাজ করে যাচ্ছে জয়িতা ফাউন্ডেশন।  

জানা গেছে, ভবিষ্যতে জয়িতা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর করারও পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির। যেখানে সারা দেশের নারী উদ্যোক্তারাই শুধু এই স্টোরের পণ্য জোগান দেবেন। উদ্যোক্তাদের যার যে ধরনের পণ্য আছে, তারা সেগুলো জয়িতা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে সরবরাহ করবেন এবং জয়িতা সেসব বিক্রির দায়িত্ব নেবে। তবে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে জয়িতার চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা এবং সে চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে জয়িতা ফাউন্ডেশন। ডিপার্টমেন্টাল স্টোরটি খুব শিগগির চালু করারও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে অসংখ্য পণ্যের সমাহার নিয়ে চালু করা হয়েছে নারী উদ্যোক্তাদের ভার্চুয়াল শপ ই-জয়িতা। যেকোনো নারী উদ্যোক্তাই তাদের পণ্য ই-জয়িতার মাধ্যমে বিক্রি করতে পারবেন খুব সহজেই।

জয়িতা ফাউন্ডেশন সংশ্লিষ্টরা জানান, শতভাগ নিরাপদ লেনদেনের সুবিধাসহ অনলাইনে নারী উদ্যোক্তারা পণ্য বিক্রিতে সরাসরি ট্র্যাকিং সুবিধাও পাবেন মার্কেটপ্লেস ই-জয়িতায়।

এদিকে নারীদের দক্ষ করে গড়ে তোলার লক্ষে জয়িতা ফাউন্ডেশন দিচ্ছে কার ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ। সংশ্লিষ্টরা জানান, জয়িতা ফাউন্ডেশনের সক্ষমতা বিনির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নারীদের কার ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। গত ২৫ আগস্ট থেকে এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানা গেছে।

এছাড়াও জয়িতা নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রোডাক্টিভ ডেভেলপমেন্ট ইভালুয়েশন ওয়ার্কশপেরও আয়োজন করা হয়েছে। এর আগে গত ১৯ আগস্ট থেকে ফাউন্ডেশনের সক্ষমতা বিনির্মাণ প্রকল্পের আওতায় শুরু হয় ১০ দিনব্যাপী ফ্যাশন ডিজাইনিং প্রশিক্ষণ।

গত জুলাই মাসে রাজধানীর ধানমন্ডির রাপা প্লাজার পঞ্চম তলায় জয়িতা ফুড কোর্টের উদ্বোধন করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। সে সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, জয়িতা ফুড কোর্ট রাজধানীবাসীর জন্য গুণগত মানসম্পন্ন, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করবে।

এর মাধ্যমে নারীর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও বেশি প্রসারিত হবে। অন্য দশটা শিল্পের মতো রান্নাও একটি শিল্প। এর পেছনে রয়েছে নিরলস পরিশ্রম, মেধা, মমতা ও নান্দনিক উপস্থাপনা। মমতার এ শিল্পই হয়ে উঠতে পারে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের একটি বড় হাতিয়ার।

এছাড়াও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই ধারাবাহিকতায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণের জন্য করোনাকালে প্রণোদনার ৫০ কোটি টাকা জয়িতা ফাউন্ডেশনের অনুকূলে বরাদ্দ দেয় সরকার। প্রকৃত নারী কৃষকদের কাছেই যেনো এ ঋণ পৌঁছায় এবং ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তারা যেনো অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়, সে লক্ষ্যে ঋণের সুষম বিতরণও করে জয়িতা ফাউন্ডেশন। আর এরই মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যও বাস্তবায়িত হবে— এমনটাই আশা সংশ্লিষ্টদের।