Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

আপসহীন নেতৃত্বে স্বাস্থ্যসেবায় আস্থা

মাহমুদুল হাসান

সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১, ০৫:১৫ পিএম


আপসহীন নেতৃত্বে স্বাস্থ্যসেবায় আস্থা
  • অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধেও আপসহীন
  • টিকা পেতে চালাচ্ছেন জোর তৎপরতা
  • প্রধানমন্ত্রী অর্পিত দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর

কোভিড-১৯ সংক্রমণ গোটা বিশ্বকে বিপর্যস্ত করেছে। বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম নয়। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা এখনো ভালো রয়েছে। শুরুতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নেতৃত্বে থাকা তৎকালীন ব্যক্তিদের কর্মকাণ্ডে সমালোচিত হলেও নেতৃত্বের পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলেছে চেহারা। প্রায় দেড় বছরে কোভিড হাসপাতালের সাধারণ বেড, আইসিইউ বেড, সেন্ট্রাল অক্সিজেন থেকে শুরু করে সব ধরনের সুযোগ বহুগুণে বেড়েছে।

রোগীর চাহিদার অনুপাতে অত্যাধুনিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ভয়াবহ প্রকোপ থাকা সত্ত্বেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শনাক্ত-মৃত্যু কম ঘটেছে। এসবের নেপথ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মেধাবী ও পরিশ্রমী মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ও তার বাস্তবায়ন। তার নেতৃত্বে প্রথম ঢেউ মোকাবিলায় সক্ষমতার পরিচয় দিয়ে উঠে এসেছে বৈশ্বিক জরিপে। ব্লুমবার্গের তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে বাংলাদেশ।

সেই অভিজ্ঞতার আলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা ও স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের নেতৃত্বে একদল নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বাস্থ্যসেবা প্রশাসনের কর্মীরা করোনার দ্বিতীয় ঢেউও সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছেন। সংক্রমণ শনাক্তের হার ৩১ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ শতাংশের ঘরে। বৈশ্বিক নানা রাজনীতি থাকা সত্ত্বেও তার যুগান্তকারী পদক্ষেপ ও নানা তৎপরতার ফলে টিকাদানে কেটেছে সংকট। বাংলাদেশ এখন কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় টিকাদান, রোগী শনাক্তকরণ, আধুনিক চিকিৎসা সবক্ষেত্রেই সফল।

করোনা সংক্রমণের শুরুতে গত বছর স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বেশকিছু অসঙ্গতি উঠে আসায় সরে দাঁড়ায় সাবেক মহাপরিচালক। তখন পদটি বাগিয়ে নিতে অনেকেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। কিন্তু গত বছর ২৩ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদায়ন করেন। এরপর থেকেই তিনি আপন আলোয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চেহারা পাল্টে দেয়ার সংগ্রাম শুরু করেন। করোনা সংকট মোকাবিলায় জীবনের মায়া ত্যাগ করে কাজে নেমে পড়েন।

গত মার্চের মাঝামাঝি তিনি কয়েকজন কর্মকর্তাসহ করোনা আক্রান্ত হন। বাসায় আইসোলেশনে থেকেও তিনি নিয়মিত ভার্চুয়ালি দায়িত্ব পালন করেছেন। খোঁজ নিয়েছেন সারা দেশের কর্মকাণ্ডের। সুস্থ হয়ে কালবিলম্ব না করে ফের কাজে নেমে পড়েন। তার মেধা, মনন একদল পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর অক্লান্ত শ্রমে স্বাস্থ্যসেবা খাত এখন সাধারণ মানুষের আস্থার ঠিকানায় পরিণত হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় বিশ্বে অনন্য নজির স্থাপন করে বাংলাদেশ। ব্লুমবার্গের তালিকায় শীর্ষে উঠে আসার নেপথ্যেও তার বিভিন্ন বহুমাত্রিক ভূমিকা রয়েছে। গেলো বছরের শেষদিকে চাকরি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী তাকে অবসরে যাওয়ার সুযোগ দেননি। তাকে স্বপদে আরও দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হয়। তদবির সিন্ডিকেটের বাইরে থাকা এ মানুষটি দায়িত্বগ্রহণের পর আর বিলম্ব করেননি। এক্ষেত্রে তিনি সফলও বটে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়ে এখন নেই কোনো আলোচনা কিংবা সমালোচনা। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ থেকে টিকাদান সামগ্রিকভাবে প্রতিশ্রুতি ও কাজে সাদৃশ্যতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।

সম্প্রতি দৈনিক আমার সংবাদের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি তার কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলেছিলেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন সমালোচনাকে এড়িয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে এগিয়ে যাও। সফলতা আসবে। তাই আমরা প্রধানমন্ত্রীর কথামতো অতিমারি করোনাসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, ভাইরাসের সংক্রমণ নতুন হওয়ায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদেরও তেমন অভিজ্ঞতা ছিলো না। তাই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পারসোনাল প্রটেকশন ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) ছিলো না। সুরক্ষিত মাস্কও পর্যাপ্ত ছিলো না। তারপরও প্রথম থেকেই আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় কাজ করছেন। করোনার শুরুতে দেশে খুবই কঠিন তাপমাত্রা ছিলো। গরমে সেদ্ধ হয়ে পিপিই পড়ে কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেবার মান উন্নয়নে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখনো করে যাচ্ছে। এর মধ্যে কিছু যোদ্ধা আমাদের থেকে চলে গেছেন। কিছু কোভিড আক্রান্ত আছেন। বাকিরা এখনো যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে মাঠ থেকে তুলে এনে মানুষের সেবা করার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাই আমি নিজের জীবনের কথা চিন্তা না করে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন আমি সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্বে ৫৪তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে করোনা মোকাবিলায় টিকাদান শুরু হয়। এরপর চাহিদা অনুপাতে প্রতিনিয়ত টিকাদান কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। টিকায় মানুষের আস্থাও ফিরেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, টিকা পাওয়া সাপেক্ষে আমরা দ্রুততম সময়ে দেশের সবাইকে টিকার আওতায় আনবো।

দুর্নীতি সমূলে উৎপাটনের ঘোষণা দিয়ে বলেন, এগুলো খতিয়ে দেখে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। করোনা ভবিষ্যতে কোন পর্যায়ে যাবে তা কেউ না জানলেও স্বাস্থ্যকর্মীরা আগেও রোগীদের পাশে ছিলেন আর ভবিষ্যতেও থাকবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

সংক্রমণ কোন পর্যায়ে রয়েছে সেটি নির্ধারণের জন্য প্রয়োজন বেশি বেশি নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা। একটি ল্যাব থেকে এখন করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা হচ্ছে ৮০২টি ল্যাবে। মাত্র ২০ দিনে রাজধানীর মহাখালীস্থ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বহুতল মার্কেটে স্থাপন করা হয়েছে এক হাজার বেডের সবচেয়ে বড় কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল।

সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ১৫ হাজার ৮৯৭টি সাধারণ বেড, এক হাজার ২৯৪টি আইসিইউ বেড, ১১৩টি হাসপাতালে স্থাপন করা হয়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন। আরও অন্তত কয়েক ডজন হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। জেলা সদর জেনারেল হাসপাতালেও আইসিইউ স্থাপনের কাজ চলছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জিনোমসিকোয়েন্সিংয়ে জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শুধু আমদানিকৃত টিকায় ভরসা না রেখে দেশেই টিকা উৎপাদনে প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়েছেন। সে বিষয়টি নিয়েও কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সম্প্রতি দেশের একটি বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান চীনা টিকা উৎপাদক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করেছে। শিগগিরই তারা টিকা উৎপাদন শুরু করবে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ডা. খুরশীদ আলম ফের ভার্চুয়াল বুলেটিন চালু করেন।

দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হন : গেলো মার্চের মাঝামাঝি সময়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি করোনা আক্রান্ত হন। গত ২০ মার্চ মহাখালী শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে ভর্তি হন। তার সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা আক্রান্ত হন অদৃশ্য এ ভাইরাসে। কিছুদিন পর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানাও করোনা আক্রান্ত হোন। করোনা নেগেটিভ হওয়ার পর মহাপরিচালক আর ঘরে বসে থাকেননি। করোনা সংক্রমিত হওয়ার আগে যেমন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহামারি নিয়ন্ত্রণে দিনরাত কাজ করেছেন, তেমনিভাবে আক্রান্ত হওয়ার পর বিশ্রামে না গিয়ে ফের জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে এগিয়ে যাচ্ছেন।

হাসপাতাল পরির্দশন তার রুটিন ওয়ার্ক : সম্প্রতি তিনি কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। সেই সাথে চিকিৎসক, রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। গত ৫ এপ্রিল ছুটে গেছেন মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল পরিদর্শনে। এর আগে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ রাজধানী ও দেশের অন্যান্য জেলা হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরির্দশন এবং মতবিনিময় সভা করেন। যেকোনো মূল্যে তিনি দেশের মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করছেন।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, স্বাস্থ্য খাতের পরিবর্তন ধরে রাখতে দক্ষ নেতৃত্ব ধরে রাখতে হবে। কর্মঠ মানুষকে মূল্যায়িত করতে হবে। কাজের বিবেচনায় পুরস্কৃত করতে হবে। নয়তো ইতিবাচক পরিবর্তন ধরে রাখা কঠিন হবে।