Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

‘সকালে ঘুমের বদঅভ্যাস চলে গেলো’

সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১, ০৬:১৫ পিএম


‘সকালে ঘুমের বদঅভ্যাস চলে গেলো’

রাফসান চৌধুরী। ঢাকা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। ৫৪৪ দিন প্রতিষ্ঠান বন্ধে নিয়ম করেই সকালে ঘুমাতেন। গতকাল আর তার ঘুম হয়নি। নামাজ পড়েই পড়ার টেবিলে বসতে হয়েছে। নিতে হয়েছে ক্যাম্পাসে আসার প্রস্তুতি। সকালে ঢাকা কলেজের গেটে প্রবেশপথে কথা হয় তার সঙ্গে।

রাফসান বলেন, ‘আজ (রোববার) আর সকাল বেলায় ঘুমাতে পারিনি, সকাল ৬টা থেকে আম্মু-আব্বুর হাঁকডাক শুরু হয়ে যায় ক্যাম্পাসে আসার জন্য। প্রস্তুতি নেয়ার জন্য। তখনো আমার চোখে-মুখে ঘুম। তাকাতেই যেন কষ্ট হচ্ছিলো। সেই ঘুম-চোখেই প্রস্তুত হয়ে নাস্তা খেয়ে রওনা দিলাম। একটু কষ্ট হলেও বন্ধুদের দেখবো, সারিবদ্ধভাবে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করবো, আগের মতো কোলাহলে ফিরে যাবো বলে খুব খারাপ লাগেনি। ক্যাম্পাসে সাজসাজ রব দেখে খুবই ভালো লাগলো। আমাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হচ্ছে, গেট সাজানো হয়েছে বেলুন দিয়ে।

 প্রবেশের পরই ‘‘well come to College’’ লেখা প্ল্যাকার্ড, স্যানিটাইজার বুথ, কোভিড সচেতনতামূলক বার্তা লেখা ব্যানার, তাপমাত্রা মেপে বেসিনে হাত ধুয়ে ভেতরে ঢোকানো এবং ক্লাসরুমে-বেঞ্চে মার্ক করে বসানো হচ্ছে। এসব দৃশ্য দেখে আমার কাছে ঈদের আনন্দই যেন মনে হলো!

অবশ্য আমাদের ক্যাম্পাস সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাসকে সে আগেই মতোই সুন্দর দেখাচ্ছিলো। বাগানসহ ক্যাম্পাসের গাছপালাও যেন নতুন রূপে দেখা যাচ্ছে। আনন্দের ভাষাটা প্রকাশ করার মতো নয়।

এছাড়াও সকাল থেকে ঢাকা কলেজে দেখা গেছে উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রতীক্ষার সমাপ্তিতে সশরীরের ক্লাসে ঢুকছে শিক্ষার্থীরা। সকাল ৯টা থেকে ঢাকা কলেজ গেটে গোলাপ হাতে স্কাউটস, রোভার, বিএনসিসি। সঙ্গে দাঁড়িয়ে শিক্ষক প্রতিনিধি। শিক্ষার্থীদের গোলাপ দিয়ে বরণ করে নিচ্ছেন। সুশৃঙ্খলভাবে সারিবদ্ধভাবে গোলাপ নিয়ে হাসিমুখে ক্লাসে প্রবেশ করছেন শিক্ষার্থীরাও।

৫৪৪ দিন বন্ধের পর সকাল থেকে ছাত্র-শিক্ষকদের এমন দৃশ্য দেখা গেছে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আনা হয়েছে আবাসিক চিকিৎসক, করা হয়েছে আইসোলেশন কক্ষ, শ্রেণিকক্ষের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাত্র ৫০ জন করে বসানো হয়েছে। প্রথম দিনই ঢাকা কলেজে উপস্থিত ছিলেন ৯২ ভাগ শিক্ষার্থী।

দেখা গেছে স্কাউট সদস্য আলমগীর হোসেনকে সকাল থেকেই গোলাপ দিয়ে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেড় বছর পর এ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের পদচারণা দেখে খুবই ভালো লাগছে। ক্যাম্পাস যেন তার আপন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এজন্য শিক্ষকদের নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নিচ্ছি।

একাদশ শ্রেণির ছাত্র সজীব আহমেদ বলেন, ভর্তির পর আজই প্রথম সশরীরে কলেজে উপস্থিত হলাম। এতদিন অনলাইনে ক্লাস করেছি। কলেজে আসতে পেরে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে। দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবিদ হাসান বলেন, দীর্ঘদিন পর আজ কলেজে আসতে পেরে খুব আনন্দ হচ্ছে। অনেক দিন পর প্রিয় ক্যাম্পাসে প্রিয় শিক্ষকদের, বন্ধুদের দেখছি। এ অনুভূতি বলে শেষ করা যাবে না।

শ্রেণিকক্ষ ঘুরে দেখা যায়, প্রতি বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থী বসানো হয়েছে। তাদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ক্লাস শুরুর আগে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শিক্ষকরা করোনা সচেতনতামূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। এরপর কলেজের কেন্দ্রীয় সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাস শুরু হয়।  

অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখরিত হচ্ছে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণিকক্ষে বসানো হচ্ছে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ঝুঁকি এড়াতে আমরা কলেজে আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন করেছি। সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই আমরা সশরীরে ক্লাস শুরু করছি।

ঢাকা কলেজের পাঠ পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক পুরঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, দীর্ঘদিন পর কলেজে শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস শুরু হয়েছে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে ক্যাম্পাসজুড়েই শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কোনো কক্ষে আমরা ৫০ জনের অধিক শিক্ষার্থী বসাইনি। প্রথম দিনে ৯২ ভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে।