Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

লন্ডনে বসে নির্বাচনের বার্তা

সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১, ০৬:১০ পিএম


লন্ডনে বসে নির্বাচনের বার্তা
  • মাঠপর্যায়ের চাহিদা ও অভিযোগও শোনা হচ্ছে সরাসরি  
  • সিরিজ বৈঠকে তারেকের মুখোমুখি নির্বাহী কমিটি
  • সাড়ে তিন বছর পর সরগরম গুলশান কার্যালয়
  • নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দলীয় বার্তা

লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির প্রধান নেতার সাথে নেতাকর্মীদের সিরিজ বৈঠক শুরু হয়েছে। মাঠপর্যায়ের চাহিদা ও অভিযোগও শুনছেন তিনি। দেয়া হচ্ছে সরাসরি বার্তাও। দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর পর ডাকা দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভার দিকে এখন নজর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের। দলীয় নেতাকর্মীদের ভাষ্য,  দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে শক্তিশালী প্রস্তুতির কর্মপরিকল্পনা ঠিক করছে বিএনপি। করোনা সংক্রমণের কারণে স্থগিত থাকা দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় দৃষ্টি দেয়া হয়েছে।

সরাসরি তারেক রহমানই নেতাকর্মীদের কথা বলছেন, তাদের মনোভাব শুনছেন। তাদের চাহিদাও তিনি নোটে নিচ্ছেন। যার আলোকে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রের ভাষ্য, দুই ইস্যু নিয়ে তৈরি হয়েছে বিএনপির কর্মপরিকল্পনা।

প্রথমত, দলীয়প্রধান খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারকে বাধ্য করতে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলা। এ জন্য সরকারবিরোধী দলগুলোতে থাকা সমমনাদের নিয়ে বৃহৎ জোট গড়ারও চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের প্রস্তুতির কর্মপরিকল্পনায় লন্ডনের কী বার্তা রয়েছে তাও জানানো হচ্ছে।
 
গতকাল বিকেল ৪টায় গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে তিন দিনব্যাপী বৈঠকের প্রথম দিনের কার্যক্রমের শুরু হয়েছে। বৈঠকে ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা কাউন্সিল ও ৩২ জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে অন্তত ৩৫ জন অংশগ্রহণ করেছেন। সভাপতিত্ব করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এসময় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠককে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য, গোয়েন্দাবাহিনীর সদস্যরা সাদা পোশাকে কার্যালয়ের আশেপাশে অবস্থান করেন।

বিএনপির দলীয় নেতারা বলছেন, অনেকদিন পর সরগরম হয়ে উঠেছে গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়। বৈঠককে কেন্দ্র করে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। পরিপাটি করে গোছানো হয়েছে পুরো কার্যালয়। ভবনের নিচতলার হলরুমে নেতাদের সাদা কাপড়ে মোড়ানো আসন দেয়া হয়েছে। ফুল দিয়ে সাজানো মঞ্চের সারিতে বসেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। স্ক্রিনে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। আসনে বসে থাকা নেতাদের বক্তব্য তিনি শুনেন এবং তার আলোকে উত্তর ও নির্দেশনা দেন।

দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর পর বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভার বিষয়ে এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, গতকাল ১৪ সেপ্টেম্বর ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর যুগ্ম মহাসচিব ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং ১৬ সেপ্টেম্বর নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন তারেক রহমান।

দলটির নেতারা জানান, সর্বশেষ খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়ার আগে ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক হয়েছিল। এ বৈঠক আরও আগেই হতো। বৈশ্বিক মহামারি করোনা এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে দেরি হয়েছে। দলের সবাই অপেক্ষায় আছে এই পুনর্মিলনের জন্য। ফোরামে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে, দিকনির্দেশনা আসবে। তবে খালেদা জিয়া অংশ নিতে না পারায় নেতাকর্মীরা অত্যন্ত ব্যথিত। বিএনপির একদফা দাবি। নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচনসহ সামগ্রিক বিষয়ে আলোচনা হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

সরকারের মেয়াদ এখনো দুই বছরের বেশি বাকি! সমপ্রতি  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের কথা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় বিএনপির ঘরেও। এ অবস্থায় আগামী বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এরই মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে চলতি বছরই প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে করণীয় ঠিক করতে দলের সবার মতামত নিতে জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনদের মতামতও নেয়া হবে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে নির্দেশনা চান নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য। অথচ নির্বাচন কমিশন গঠনে অথরিটি হলো রাষ্ট্রপতির ওপরে সংবিধান অনুযায়ী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর প্রথম চয়েস তো নূরুল হুদা। যে ব্যক্তিটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচাইতে অপরিচ্ছন্ন নির্বাচন করেছে, সে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত প্রিয়জন। এ দেশের মানুষ নূরুল হুদা কমিশন চায় না, যেখানে ভোট দেয়ার নিশ্চয়তা নেই। ’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়  বলেন, সরকার আগাম নির্বাচনের বাতাস দিয়ে দিয়েছে। পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমাদের কোনো ইন্টারেকশন নেই। মাঠের চিত্র কী, মাঠের নেতাকর্মীদের মনোভাব কী, তা জানা দরকার। এসব অবগত হয়েই তো আমাদের এগোতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপির নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতে স্থায়ী সমাধান চায়। সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে এই সমাধান হতে হবে। এ জন্য দেশের গণতান্ত্রিক সব রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট নাগরিকদের মতামত নিতে হবে। কাজটি এমনভাবে করতে হবে, যা সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়। বিগত দিনের মতো একতরফা হলে কেউ মেনে নেবে না।

এছাড়া দলীয় ফোরামে আলোচনার পর নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতে বিএনপি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব দেবে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন যতক্ষণ পর্যন্ত না হবে, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে। কারণ, দেশের জনগণ এই সরকারের অধীনে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে বলে মনে করে না।’