Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

ঘরের রাজনীতিতে চোখ আওয়ামী লীগের

রফিকুল ইসলাম

সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১, ০৬:৩৫ পিএম


ঘরের রাজনীতিতে চোখ আওয়ামী লীগের

ঘরের রাজনীতিতে চোখ আওয়ামী লীগের। তৃণমূলের সৃষ্ট কোন্দল ও দ্বন্দ্ব নিরসনের মধ্য দিয়ে দলকে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করতে জোর দিচ্ছে দলটি। এ জন্য তৃণমূলে দ্বন্দ্ব সৃষ্টিকারী সাংসদ ও জেলা-উপজেলার দায়িত্বশীল নেতাদের নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন ক্ষমতাসীন দলটির বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। মূলত তৃণমূলে কোন্দল নিরসন এবং মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

আ.লীগ সূত্রে জানা যায়, সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করতে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। বিশেষ করে তৃণমূলে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও কোন্দল নিরসনের পাশাপাশি মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করছেন তিনি। চলতি বছরের ২০ ও ২১ নভেম্বর যথাক্রমে পাবনা ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

এছাড়া ২৪ সেপ্টেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর পৌরসভা, ২৫ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর, ২৯ সেপ্টেম্বর পাবনার ঈশ্বরদী, ৩০ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত। এর বাইরে পাবনার নতুন দুই সাংগঠনিক থানায় সম্মেলন প্রস্তুতির আহ্বায়ক কমিটি এবং ১৬ ও ১৭ অক্টোবর নওগাঁর দুই উপজেলার সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়।

এ নিয়ে গত মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে পাবনা জেলাসহ সকল উপজেলা শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় এমপিদের সাথে বৈঠক করেন।

ওই বৈঠকে জেলার কোন্দল নিরসনসহ মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটগুলোর সম্মেলন তারিখ নির্ধারণ করা হয়। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, বেশকিছু স্থানে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হযেছে।     

আশা করি সম্মেলনের মধ্যদিয়ে দল সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী হবে। খুলনা বিভাগে আওয়ামী লীগের মোট ৯১টি সাংগঠনিক উপজেলা রয়েছে। এর মধ্যে ৬৪টি উপজেলার সম্মেলন শেষ করেছেন আওয়ামী লীগের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক। বাকি ২৭ উপজেলা ও চারটি জেলার সম্মেলনের জন্য সকল প্রস্তুতি শেষের দিকে। স্থানীয় নেতাদের সাথে আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

এছাড়া সিলেট, চট্টগ্রাম, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন ও দলীয় কোন্দল নিরসনে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন। মূলত তৃণমূলের মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটের সম্মেলন ও স্থানীয় এমপি এবং দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে চলমান অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করতে চান দলটির সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বশেষ দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডসভায় বিভাগীয় দায়িত্বশীল নেতাদের এমন নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

তথ্যমতে, দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে নিজ নিজ বিভাগের সাংগঠনিক রিপোর্ট তুলে ধরেন দলের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা। তাদের রিপোর্টে উঠে আসে তৃণমূল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বিষয়টি। বিশেষ করে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের একক কর্তৃত্বের কথা। বিদ্রোহীদের ইন্ধন দেয়া, দলের শীর্ষ পদে নিজ পরিবার ও আস্থাভাজনদের নিয়ে আসা, ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতি করা ইত্যাদি। তৃণমূলপর্যায়ে এমপিদের এমন অবস্থানে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এসময় তিনি দলীয় সংসদ সদস্যদের কঠোর হুঁশিয়ারি দেন এবং কোন্দল নিরসনের জন্য দায়িত্বশীল নেতাদের কঠোর নির্দেশনা দেন। নেত্রীর নির্দেশনার পর দ্বন্দ্ব ও কোন্দল নিরসনে কঠোর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা অভিযুক্ত সাংসদ ও দলীয় নেতাকর্মীদের কোন্দল নিরসনে কাজ করছেন।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, বর্তমানে রাজনীতির মাঠে নিষ্ক্রিয় বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। সরকারবিরোধী মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশ ও আন্দোলন-সংগ্রাম নেই। ক্ষমতাসীন দলটি মনে করছে, দ্বাদশ জাতীয় সাংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী বছরের শুরু থেকেই বড় পরিসরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যেতে পারে বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। তারা সরকার পতনের দাবিতে জ্বালাও-পোড়াও, মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশসহ নানামুখী আন্দোলন-সংগ্রামের পথ বেছে নিতে পারে।

ভোট কিংবা মাঠের রাজনীতিতে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এমন পরিকল্পনা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে চান আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এ জন্য দলের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব, কোন্দল ও বিভাজন কমাতে চান তারা। একই সাথে হাইব্রিড, অনুপ্রবেশকারী, সুবিধাভোগী, স্বাধীনতাবিরোধীদের চিহ্নিত করে দল থেকে বের করে দেয়ার পাশাপাশি দলের ত্যাগী, পরীক্ষিত, নিবেদিত এবং দুঃসময়ে মাঠের আন্দোলন-সংগ্রামের সক্রিয় নেতাদের মূল্যায়ন করতে চান।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমার সংবাদকে বলেন, ‘এমপিরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তারা সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সবসময় দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করবেন। কিন্তু অনেকেই এমপি হয়ে নিজ বলয় ভারী করতে দল ও দলীয় নেতাদের ওপর কর্তৃত্ব দেখান। নিজেদের প্রভাব ও বলয়কে শক্তিশালী করার জন্য দলের নিবেদিতপ্রাণ ও ত্যাগীদের মাঝে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেন। বিভেদ সৃষ্টিকারীরা (এমপি) আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শে বিশ্বাসী নন। এদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের অবস্থান পরিষ্কার। যার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠবে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, ‘তৃণমূলের সকল মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটের সম্মেলন শেষ করা হবে। চলমান কোন্দল ও দ্বন্দ্ব নিরসন করা হবে। মূলত তৃণমূল আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত ও সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নেত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আওয়ামী লীগ যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।’