Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

১৮ লাখে চতুর্থ শ্রেণির ৩ পদ!

নূর মোহাম্মদ মিঠু

সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২১, ০৬:৪৫ পিএম


১৮ লাখে চতুর্থ শ্রেণির ৩ পদ!

নিয়োগের বিনিময়ে চাকরিপ্রার্থীদের সাথে ১৮ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের তথ্য জেনে যাওয়ায় আমার সংবাদের সাংবাদিক মিরাজ আহমেদকে বেধড়ক মারধর করেছে মাগুরার শালিখা উপজেলার কাতোলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা।

গত শুক্রবার কাতোলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী, অফিস সহায়ক ও আয়া পদে তিনটি নিয়োগ পরীক্ষা হয়। পরীক্ষার আগেই নৈশপ্রহরী ও অফিস সহায়ক পদের জন্য সাত লাখ করে ১৪ লাখ এবং আয়া পদে চার লাখ টাকা নেয় ব্যবস্থাপনা কমিটি। যাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়, তারাই পরীক্ষাই উত্তীর্ণ হওয়ায় তথ্যের সত্যতা মেলে এবং বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষার পরপরই কমিটির সদস্যদের মুখোমুখি হন মিরাজ। আর এ সময়ই হামলার ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শালিখা থানায় অভিযোগ করেছেন ভুক্তোভোগী সাংবাদিক মিরাজের পরিবার। পুলিশও জড়িতদের বিরুদ্ধে দু-দুবার অভিযান পরিচালনা করেছেন বলে আমার সংবাদকে জানিয়েছেন শালিখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারেক বিশ্বাস। মারধরের সময় সাংবাদিক মিরাজের মুঠোফোন, ক্যামেরা, আইডি কার্ড ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, মুঠোফোনসহ ছিনিয়ে নেয়া মালামাল উদ্ধারে কাজ চলছে।

জানা গেছে, গত শুক্রবার দিনভর পরীক্ষা গ্রহণ শেষে বিকেল ৪টার দিকে শালিখা উপজেলার সিমাখালী বাজারে মিরাজের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলা ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে মিরাজের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা। যদিও ঘটনার পর থেকেই হামলার ঘটনায় জড়িতরা এখনো পলাতক রয়েছেন।

দৈনিক আমার সংবাদ পত্রিকার মাগুরা জেলা প্রতিনিধি মিরাজের ওপর হামলার পর গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে শালিখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এহসানুল হক মাসুম বলেন, আহত ওই ব্যক্তিকে রাত ৮টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করা হয়েছে।     

চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিক মিরাজের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার কাতোলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী, অফিস সহায়ক ও আয়া পদে তিনটি নিয়োগ পরীক্ষা হয়। মাগুরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ওই পরীক্ষা শেষে একটি মাইক্রোবাসে করে শালিখা হয়ে যশোর ফিরছিলেন নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির কয়েকজন সদস্য। এসময় মুন্না হাসান নামে এক ব্যক্তিকে নিয়ে ওই গাড়ির পিছু নেন সাংবাদিক মিরাজ আহম্মেদ। সিমাখালী বাজারে পৌঁছলে গাড়িতে থাকা ব্যক্তিদের কাছে তথ্য চাইতে যান মিরাজ। এসময় ওই গাড়িতে থাকা বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির ছয়-সাতজন সদস্য সাংবাদিক মিরাজ আহম্মেদের ওপর চড়াও হন। কিল লাথি ঘুষির পাশাপাশি কাঠ দিয়ে বেদম মারধর করা হয় মিরাজকে। এরপর স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শালিখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

মিরাজ আহম্মেদ বলেন, ‘নৈশপ্রহরী ও অফিস সহায়ক পদে সাত লাখ করে ১৪ লাখ এবং আয়া পদে চার লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ ছিলো আমাদের কাছে। যে সকল প্রার্থী অর্থ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ছিলো তারাই নিয়োগ পরীক্ষায় পাস করেন। তাই সন্দেহটা বাড়ে। পরীক্ষা শেষে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির কয়েকজন সদস্য, নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা ও নিয়োগ কমিটির সদস্য শালিখা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম একই গাড়িতে করে শালিখায় ফিরছিলেন। সিমাখালী বাজারে গাড়িটি দাঁড়ালে আর্থিক লেনদেনের তথ্য জানতে চেয়ে এগিয়ে যেতেই তারা হামলা চালায়।’ মিরাজের অভিযোগ, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আকবর আলীসহ কয়েকজন তাকে বেদম মারধর করে। এসময় তার কাছে থাকা দুটি মুঠোফোন, ক্যামেরা ও আইডি কার্ড ছিনিয়ে নেয়া হয়।

বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান তরফদারও গণমাধ্যমকে জানান, তার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম, শালিখা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলমসহ মোট পাঁচজন নিয়োগ কমিটিতে ছিলেন। পরীক্ষা শেষে শিক্ষা কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলমসহ কয়েকজন একই গাড়িতে যশোর ফেরেন। কিন্তু অর্থ লেনদেন বা সাংবাদিককে মারধরের কথা অস্বীকার করেন তিনি। একইভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম ও শালিখা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম। জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে জানেন না বলে জানান। এছাড়া মারধরের সময় তিনি গাড়িতে ছিলেন না বলেও দাবি করেন।

তবে স্থানীয় শতখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ঝন্টু বলেন, পরীক্ষায় যেসব প্রার্থী বেশি নম্বর পেয়েছেন তাদেরকে বাদ দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওই তিনজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অর্থ লেনদেনের বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়ে গেছে। সাংবাদিকরা বিষয়টি নিয়ে খবর সংগ্রহ করতে গেলে তাকে মারধর করা হয়েছে।

এদিকে শালিখা থানা পুলিশকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মাগুরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম।