Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

ফের সক্রিয় ডেসটিনি

রেদওয়ানুল হক

অক্টোবর ১০, ২০২১, ০৬:৩০ পিএম


 ফের সক্রিয় ডেসটিনি
  • ডিজি ও মন্ত্রীর অগোচরেই কমিটি অনুমোদন
  • কারণ জানতে অধিদপ্তরকে মন্ত্রণালয়ের চিঠি
  • ছাড়পত্র দেয়নি দুদক, নেই আদালতের অনুমতিও
  • ভিন্ন নামে কোম্পানি খুলে সম্পদ স্থানান্তরের পরিকল্পনা

সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী একটি আশার বাণী শুনিয়েছিলেন ডেসটিনির গ্রাহকদের। সাংবাদিকদের মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ডেসটিনির যে সম্পত্তি আছে তা বিক্রি করলে হয়তো গ্রাহকের কিছু টাকা ফেরত দেয়া যাবে। মন্ত্রীর এমন আশ্বাসের পর খানিকটা আলোচনায় এসেছিল ডেসটিনি। সম্পত্তিই বা কি আছে, এর দাম কত হতে পারে, গ্রাহকের পাওনা টাকার পরিমাণ কত? এমন প্রশ্নের খোঁজ নিতে গিয়ে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।

জানা যায়, ডেসটিনির সম্পত্তি যা কিছু আছে তা কব্জা করতে ইতোমধ্যে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন কোম্পানিটির কর্তাব্যক্তিরা। এরইমধ্যে ‘ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ পরিচালনা কমিটির অনুমোদন দিয়েছে সমবায় অধিদপ্তর। যদিও এই কমিটির ব্যাপারে জানেন না অধিদপ্তরের ডিজি, দুদক ও সমবায় মন্ত্রণালয়। শুধু সমবায় কার্যক্রমই নয়, এমএলএম ব্যবসাও চালু করতে চায় তারা। বিশেষ তলবি সভা আহ্বান করে কমিটি গঠন করেছে ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের।

এসব কমিটির মূল লক্ষ্য আদালত কর্তৃক জব্দ থাকা সম্পত্তি কব্জায় নেয়া ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো চালু করে অর্থ হাতিয়ে নেয়া। গ্রাহকদের অর্থ ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলে সম্পত্তি নিলামে বিক্রির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া ও ভিন্ন নামে কোম্পানি খুলে এসব সম্পত্তি নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করে দখলে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে নতুন এ কমিটি। নতুন কোম্পানি খোলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়াকে। যিনি বর্তমানে ডেসটিনির প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব নিয়েছেন।

ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছেন তিনি। ‘ডেসটিনি-২০০০’কে সংক্ষেপ করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ডি কে টু’ অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড। এ ছাড়া ‘ডেসটিনেশন এক্সপ্রেস বিডি লিমিটেড’ এবং ‘বাজার করেন ডটকম’ নামে পৃথক দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার। এছাড়া এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করতে যে সময় লাগবে ওই সময়ে কোম্পানি পুনরায় চালু হয়েছে জানিয়ে গ্রাহকদের একাংশের কাছ থেকে বিপুল অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বয়ং সমবায় অধিদপ্তরের ডিজিকে না জানিয়ে ডেসটিনির কর্তাব্যক্তিদের সাথে যোগসাজশে করোনা মহামারির মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার কথা বলে আট লাখ সদস্যের মধ্যে মাত্র দুই হাজার সদস্যকে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে সদস্য নবায়ন করে কোনোরকম ভোট ছাড়াই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী দেখিয়ে নতুন কমিটি অনুমোদন দেয় সমবায় অধিদপ্তরের যুগ্ম নিবন্ধক মো. রিয়াজুল কবির। যিনি অধিদপ্তর গঠিত ডেসটিনির অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। সমবায় অধিদপ্তরের অন্যান্য কর্মকর্তার প্রবল আপত্তির মুখে কমিটিকে বৈধতা দেন ঢাকা বিভাগের এ যুগ্ম নিবন্ধক।

কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে সমবায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মো. হারুন-অর-রশিদ বিশ্বাস আমার সংবাদকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই, আমাদের একজন জয়েন্ট রেজিস্ট্রার আছেন রিয়াজ সাহেব, উনি ভালো বলতে পারবেন এটি কেন হয়েছে; কিভাবে হয়েছে।

ডেসটিনির বিষয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে কি-না এই প্রশ্নটি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, কমিটি কেন হয়েছে সেটি রিয়াজ সাবেহ বলতে পারবেন।’

এ বিষয়ে যুগ্ম নিবন্ধক রিয়াজুল কবির বলেন, অ্যাডহক কমিটি তো বেশি দিন থাকতে পারে না, তাই গ্রাহকদের ভালোর কথা চিন্তা করে আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে দিয়েছি। এ ছাড়া কমিটির করার ব্যাপারে দুদক আমাদেরকে ছাড়পত্র দিয়েছে। দুদক ও আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে কমিটি করে দেয়া হয়েছে।

অধিদপ্তরের ডিজিকে না জানিয়ে কিভাবে কমিটি করা হলো— এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিজিকে জানানো হয়েছে, তিনি হয়তো ভুলে গেছেন।

ডেসটিনির কমিটি করতে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে কি-না জানতে চাইলে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জনসংযোগ কর্মকর্তা (উপ-পরিচালক) মো. আরিফ সাদিক বলেন,  ‘আমার জানা মতে, দুদক এ ধরনের কোনো ছাড়পত্র দেয়নি, যদি অধিদপ্তর দাবি করে তাহলে তাদেরকে ছাড়পত্র দেখাতে বলেন।’

বাস্তবে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডকে লে জে হারুন অর রশিদের হাতে তুলে দিতে নির্বাচনের সময় হিসেবে লকডাউনকে বেছে নেয়া হয়। পাতানো এই নির্বাচনের জন্য অন্তত ২০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। উপ-সহকারী নিবন্ধক জহির, যুগ্ম নিবন্ধক রিয়াজুল কবীরসহ তিন কর্মকর্তার মাঝে এ অর্থ ভাগভাটোয়ারা হয় বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।

এদিকে ডেসটিনির এই কমিটির বিষয়ে জানেন না পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো কমিটি গঠন করার পর মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হয়। ডেসটিনির কমিটির কথা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়নি। এমনকি যদিও কমিটি গঠনে অধিদপ্তরের এখতিয়ার আছে তবুও ডেসটিনির মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করা হয়। কিন্তু ডেসটিনির কমিটি গঠন নিয়ে কোনো আলোচনা তো করা হয়ইনি, এমনকি এটি মন্ত্রণালয়কে অবহিতও করা হয়নি। তাই মন্ত্রণালয় অধিদপ্তরের কাছে জবাব চেয়ে চিঠি দিয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য আমার সংবাদকে বলেন, ‘কমিটির বিষয়ে আমি জানি না। এটি মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়, অধিদপ্তরের কাজ। তবে কমিটি গঠন করার পর তারা আমাদেরকে অবহিত করে, এ ক্ষেত্রে সেটি করেনি। পত্রিকায় বিষয়টি দেখার পর আমি ব্যবস্থা নিতে বলেছি এবং তাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চেয়েছি। কিন্তু তারা এখনো জবাব দেয়নি।

মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা না করে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে আমাদের সাথে আলোচনা করে কিন্তু এ ব্যাপারে তারা আলোচনা করেনি এমনকি কমিটি করার পর আমাদেরকে অবহিতও করেনি। তাই আমরা বিষয়টি তাদের কাছে জানতে চেয়েছি, দেখি তারা কী জবাব দেয়।’

নতুন কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন— সভাপতি লে জে (অব.) এম. হারুন-অর-রশিদ, সাধারণ সম্পাদক ডেসটিনির শেয়ার হোল্ডার মো. আজম আলী, সহ-সভাপতি মো. জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক মো. আমিনুল হক এবং কোষাধ্যক্ষ এ টি এম খুরশিদ আলম। কার্যকরী সদস্যরা হলেন— মো. আবদুর রহিম, মো. আবুল হাছান, মেছবাহ উদ্দিন, খুরশিদা বানু, মো. সাইফুল আলম রতন, মো. জহিরুল করিম এবং মো. বোরহান উদ্দিন সিকদার।

নতুন কমিটির সম্পাদক আজম আলী জানান, দুদকের চিঠির প্রেক্ষিতে সমবায় অধিদপ্তরের অ্যাডহক কমিটি গত ২৮ জুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি নির্বাচন করে। গত ২৯ জুন এ কমিটি দায়িত্ব নেয় এবং তারা তাদের কার্যক্রম পুরোদমে চালিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আদালতের নির্দেশে পুলিশর জিম্মায় থাকা সম্পদ কিভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়া যায় আপাতত সে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে এই কমিটি। তবে বর্তমানে সমিতির সদস্য সংখ্যা কত তাদের কত টাকা আমানত রয়েছে এবং সম্পত্তির মূল্য কত তা কিছুই জানেন না নতুন কমিটির এ সম্পাদক।

কমিটি গঠনের ব্যাপারে আদালতের অনুমতি ছিলো কি-না বিষয়টি জানতে দুদকের প্রধান কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলমের অফিসে যোগাযোগ করা হলে তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করায় তার একজন সহকারী জানিয়েছেন, ‘আদালত এ ধরনের কোনো অনুমতি অনুমোদন দিয়েছেন বলে মনে হয় না। কারণ এ ধরনের কোনো অনুমোদন দিয়ে থাকলে সেটি অবশ্যই আমরা দুদককে জানাতাম এবং দুদক সেটি আপনাদেরকে জানাতে পারতো।’

এদিকে সমবায় অধিদপ্তরের অনুমোদনের ‘ছাড়পত্র’ নিয়েই হারুন-অর-রশিদের নেতৃত্বাধীন ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি পূর্ণোদ্যমে মাঠে নেমেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ডেসটিনির কারাবন্দি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল আমীনের সঙ্গে সমিতি নেতাদের সঙ্গে গভীর রাতে জুম বৈঠক হয়। কারা কর্তৃপক্ষের তদন্তে উঠে আসে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত রফিকুল আমীন সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির সাথে গত জুলাই যে গভীর রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে থেকে চার-পাঁচদিন জুম মিটিং করেন। এসব মিটিং আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

অন্যদিকে গত বছরের অক্টোবর মাসে করোনার প্রকোপে দেশে যখন লণ্ডভণ্ড অবস্থা ঠিক তখনি গঠিত হয় ‘ডেসটিন-২০০০ লিমিটেডের’ নতুন কমিটি, গত বছরের ৩১ অক্টোবর বিশেষ তলবি সভা আহ্বান করে এ কমিটি গঠন করা হয়। ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের নতুন কমিটিতে আছেন চেয়ারম্যান জাকির হোসেন, ল-অ্যান্ড অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি বিপ্লব বিকাশ শীল, ফিন্যান্স সেক্রেটারি শামসুল ইসলাম শামীম।

এছাড়া পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন সাইফুল আলম রতন, মোহাম্মদ হোসাইন আজাদ, সৈয়দ মোহাম্মদ ইকবাল কাদেরী, মইনুদ্দিন আহমেদ, শাহজাদা আল মাহমুদ এবং কামরুল হাসান। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিইও হিসেবে আছেন মুহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া, সাবেক সংসদ সদস্য চাঁদপুর-৪। এ দুই কমিটি একযোগে রফিকুল আমীনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। কাকরাইল মোড়ে আলীস টাওয়ারের কয়েকটি ফ্লোরে চলছে তাদের কার্যক্রম। অপরদিকে কাকরাইলের সাহারা সেন্টারের সপ্তম ফ্লোরে ডেসটিনি মাল্টিপারপাসের অফিস। নতুন যে কোম্পানি গড়ে তোলা হয়েছে তার অফিস বিজয়নগরের মাহতাব সেন্টারে।

ডেসটিনির কার্যক্রম বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি লিগাল অ্যাডভাইজার সাবেক জেলা জজ ফকরুদ্দিন বাদশা বলেন, ‘ডেসটিনির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা নেই মামলা আছে এর সাবেক কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটিতে সাধারণ গ্রাহকের অর্থ আছে তাই এর কার্যক্রম চালু থাকা দরকার।’

এছাড়া অভিযুক্ত যারা আছেন তারাও অর্থ আত্মসাৎ করেননি বলে দাবি করে তিনি বলেন, তাদের অপরাধ ছিলো এক খাতের অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করা। আইনের দৃষ্টিতে সেটি মানি লন্ডারিং হয়েছে। তখন ছিলাম না থাকলে নোট অফ ডিসেন্ট দিতাম। আগে যারা ছিলেন তারা এটি ভুল করেছেন।

বর্তমান কমিটির চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, যেহেতু কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই তাই কোম্পানির ৪৫ লাখ ডিস্ট্রিবিউটরের স্বার্থের কথা চিন্তা করে আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। এখন আমরা মামলা মোকাবিলার কাজ করছি। এছাড়া আদালতের নির্দেশে পুলিশের জিম্মায় থাকা সম্পদ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে আনার কাজটিও গুরুত্বের সহকারে করছি।

তিনি বলেন, যারা অপরাধ করেছেন তাদের শাস্তি হোক এটি আমরাও চাই তবে সাধারণ গ্রাহকদের টাকা যাতে তারা ফেরত পান এবং কোম্পানি যাতে স্বাভাবিক নিয়মে চলে সে জন্য দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে আমরা কাজ করছি।

উল্লেখ্য, বহু স্তর বিপণন ব্যবসার নামে গ্রাহকের কাছ থেকে চার হাজার ১১৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় ডেসটিনি-২০০০। এর মধ্যে ডেসটিনি ট্রি-প্লান্টেশনের আওতায় বৃক্ষরোপণের নামে দুই হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা এবং ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের (ডিএমসিএসএল) অধীনে এমএলএম ব্যবসার নামে এক হাজার ৮৬১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। ২০০০ সালে বিতর্কিত বহু স্তর বিপণন পদ্ধতিতে (এমএলএম) কার্যক্রম শুরু করে ডেসটিনি। যাত্রা শুরুর পর প্রথম এক দশকের মধ্যে বিমান পরিবহন, আবাসন, কোল্ড স্টোরেজ, জুট মিল, মিডিয়া, বনায়নসহ বিভিন্ন খাতে ৩৪টি কোম্পানি খোলে প্রতিষ্ঠানটি।

মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের নামে ২০ লাখের বেশি মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে ডেসটিনির বিরুদ্ধে। ২০১২ সালের ৩১ জুলাই ডেসটিনির তৎকালীন এমডি রফিকুল আমীন এবং ডেসটিনির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান লে জে হারুন-অর-রশিদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিরুদ্ধে চার হাজার ১১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং ৯৬ কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচারের অভিযোগ আনা হয়।

সর্বশেষ গত বছর মো. রফিকুল আমীনসহ তিন কর্মকর্তাকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তির বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। এ ছাড়া অর্থ আত্মসাতের মামলার তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি চার্জশিট দেয় দুদক। চার্জশিটে প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট ও সাবেক সেনাপ্রধান লে জে হারুন-অর-রশিদ, মো. রফিকুল আমীনসহ ৫৩ জনকে আসামি করা হয়।

তবে মামলার পর হারুন-অর-রশিদ ডেসটিনির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন না— এই শর্তে জামিন নেন। রফিকুল আমীনও কয়েক দফা জামিনে কারামুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এ প্রেক্ষাপটে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব নেন সাবেক এমপি মুহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া।