Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

চার মাসেও কমেনি ডেঙ্গুর প্রকোপ

মাহমুদুল হাসান

অক্টোবর ১৩, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


চার মাসেও কমেনি ডেঙ্গুর প্রকোপ

বছরের শুরুতে ঘুমন্ত ডেঙ্গু বর্ষায় জেগে ওঠে। জুলাই থেকে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। চারমাসেও কমেনি ডেঙ্গুর প্রকোপ। প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। গতকাল সারা দেশে ২১১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত প্রায় পৌনে ২১ হাজারের বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। চার মাসে ৮২ জনের মৃত্যুও হয়েছে।২০০১ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৪৪ জন মারা যান। ২০১৯ সালে সরকারি হিসাবে দেশে লক্ষাধিক মানুষ ডেঙ্গু জ্বরাক্রান্ত হয়। তার মধ্যে মারা যান ১৪৮ জন। চলতি বছরের গত সাড়ে ৯ মাসে দুই দশকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রোগী ভর্তি ও মৃত্যু হয়েছে।

 চলতি মাসের গত ১৩ দিনে দেশে আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৯ সালে ডেঙ্গু ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করলেও করোনা মহামারির মধ্যে ২০২০ সালে ডেঙ্গু তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। তবে এবার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ৯২ শতাংশের বেশি মৃত্যু হয়েছে রাজধানীতে। ঢাকায় মৃত্যুবরণকৃত ৭৬ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে মিটফোর্ড হাসপাতালে। চলতি বছরের শুরু থেকে সেখানে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

করোনায় শিশুদের শনাক্ত-মৃত্যু কম হলেও ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার কমেনি। ঢাকা শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গুতে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজধানীর হাসপাতালে করোনা রোগী কমে এলেও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। সাড়ে ৯ মাসে রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ১৭ হাজার ৭২৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এসব হাসপাতালেই মারা গেছেন ৭৬ জন। বাকি ছয়জন রাজধানীর বাইরে মারা গেছেন।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, রাজধানীর ডেঙ্গুর উৎস ধ্বংসে দুই সিটি কর্পোরেশনের গাফিলতি ও অবহেলার পরিণতিতে প্রতি বছর ডেঙ্গু মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। শুধু চিকিৎসার মাধ্যমে ডেঙ্গু মোকাবিলা সম্ভব নয়, এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে জোর দিতে হবে। নয়তো শুধু চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন করে ডেঙ্গু সংক্রমণ মোকাবিলা করা যাবে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, গতকাল নতুন করে ২১১ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ১৬৩ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৮ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ কামরুল কিবরিয়া জানান, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ২০ হাজার ৭২৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার মধ্যে চলতি মাসের গত ১৩ দিনে দুই হাজার ৫৩২ জন রোগী রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ সাত হাজার ৮৪১ জন, আগস্টে সাত হাজার ৬৯৮ জন, জুলাইয়ে দুই হাজার ২৮৬ জন, জুনে ২৭২ জন, মে মাসে ৪৩ জন, এপ্রিলে তিনজন, মার্চে ১৩ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৯ জন এবং জানুয়ারিতে ৩২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১৯ হাজার ৭১৯ জন রোগী। ডেঙ্গুতে এ সময়ে ৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এখনো দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৯২৮ জন। তার মধ্যে ঢাকার ৪৬টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৭৬৬ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৬২ জন।

এদিকে মৃত্যু তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর  ও চলতি মাসের গত ১৩ দিনে ৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে আগস্টে সর্বোচ্চ ৩৪ জন, সেপ্টম্বরে ২৩, জুলাইয়ে ১২ এবং চলতি মাসের ১৩ দিনে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুধু রাজধানীতেই ১৭ হাজার ৯১৬ জন ডেঙ্গু  রোগী ভর্তি হয়েছে। মারা গেছে ৭৬ জন। তার মধ্যে ৪২ জন বেসরকারি হাসপাতালে ও ৩৪ জন সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে মারা গেছে।সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা হয়েছে পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে। সেখানে এই মৌসুমে সর্বোচ্চ ১৯ জনের মৃত্যু হয়।

ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১২ জন, স্কয়ার হাসপাতালে আটজন, ইবনে সিনা হাসপাতালে সাতজন, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে সাতজন,  এভার কেয়ার হাসপাতালে চারজন, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারজন, ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনজন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে দুইজন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুইজন, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দুইজন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সেন্ট্রাল হাসপাতাল, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল এবং আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন করে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর শুধু ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৮০৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে ৭৫০ জন সুস্থ হলেও এখনো চিকিৎসা নিচ্ছে ৪৬ শিশু আর মৃত্যু হয়েছে আরও ১২ জনের।