Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বিক্ষোভে উত্তাল সারা দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

অক্টোবর ১৪, ২০২১, ০৬:২৫ পিএম


বিক্ষোভে উত্তাল সারা দেশ
  • চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজন নিহত
  • ১৪৪ ধারা জারি
  • কুমিল্লাসহ চট্টগ্রাম রেঞ্জের বিভিন্ন মণ্ডপে হামলা, ভিডিও পোস্টকারীসহ আটক ৪৩  
  • ২২ জেলায় বিজিবি মোতায়েন প্রয়োজনে মোতায়েন করা হবে রাজধানীতেও

কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে কুরআন পাওয়া এবং সেটিকে কেন্দ্র করে সহিংসতার জের ধরে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে বেশ কয়েকটি মন্দিরে হামলা ও পুলিশের সাথে হামলাকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার রাতের সেই সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালেই তিনজন নিহত এবং দু’জন গুরুতর আহত হওয়ার কথা জানিয়েছিল পুলিশ। পরবর্তীতে আহতদের একজন হাসপাতালে মারা যান।

হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ জানান, বুধবার সন্ধ্যার পর মন্দির আক্রমণ করার ওই ঘটনা ঘটে। হাজীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার জানিয়েছেন, নিহতরা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।

তবে তারা পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন কি-না তা তিনি নিশ্চিত করেননি। ঘটনার পর বুধবার রাত থেকে হাজীগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এ ছাড়া বুধবার রাতেই নোয়াখালীর হাতিয়া ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে মিছিল নিয়ে মন্দিরে হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ।

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, পুলিশ মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

এর আগে বুধবার দিনের বেলা কুমিল্লার বেশ কয়েকটি পূজামণ্ডপে হামলা চালানো হয়।

ওই হামলার বিষয়ে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেছিলেন, পূজামণ্ডপে কুরআন রাখার তথ্য তারা পেয়েছিলেন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এর মাধ্যমে এবং এ ঘটনার জের ধরে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র‍্যাবের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে শহরে।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল তথ্য দিয়ে উস্কানি দেয়া হচ্ছে। আর কোথাও কোনো হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে ভুল তথ্য দিচ্ছে। পরিস্থিতি এখন শান্তিপূর্ণ।

এদিকে এ ঘটনায় শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে এর আগে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। আর পুলিশ বলছে, তারা সন্দেহভাজন অন্তত ৪৩ জনকে আটক করেছে।

গতকাল কুমিল্লার নানুয়া দীঘিরপাড় পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের সময় পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, উস্কানি দেয়ার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

এ ঘটনায় প্রথম যে ভিডিওটি ফেসবুকে প্রকাশ পেয়েছে, তাতে খুবই উস্কানিমূলকভাবে ধারা বর্ণনা দেয়া হচ্ছিল। পুলিশ ওই ভিডিও পোস্টকারী ফায়েজকে আটক করেছে। ফায়েজের কাছ থেকে তথ্য নেয়া হচ্ছে। সেগুলোর যাচাই চলছে।

তিনি বলেন, কুমিল্লা ছাড়া আর যেখানে যেখানে হামলার ঘটনা ঘটেছে সব জায়গায় পুলিশ তৎপর রয়েছে। প্রতিটি ঘটনাতেই মামলার প্রস্তুতি চলছে। এখন পর্যন্ত আটক ৪৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মঙ্গলবার খুব ভোরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর আসে যে, নানুয়ার দীঘির পূজামণ্ডপের ভেতরে প্রতিমার পায়ের কাছে একটি কুরআন রাখা আছে। খবর পেয়েই জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান।

পুলিশ সেখান থেকে কুরআন নিয়ে আসেন। কিন্তু ১০টা নাগাদ একটি ছবি ব্যাপকভাবে সামাজিক মাধ্যমে ছড়াতে থাকে যেখানে দেখা যায় প্রতিমার হাঁটুর কাছে কুরআন। অনেকে এটি দিয়ে নানা ধরনের লাইভ বক্তব্য দিয়ে কুরআন অবমাননার অভিযোগ করতে থাকেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেছেন, বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ কুরআন অবমাননা হয়েছে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে শহরজুড়ে।

তিনি বলেন, সকালে নানুয়ার দীঘির মণ্ডপে কুরআন নজরে পড়লে দ্রুত পুলিশকে জানানো হয় এবং পুলিশ তখনই এসে কুরআনটি সরিয়ে নেয়। কিন্তু খবরটি খুব দ্রুত ছড়ানো হয় এবং কয়েকটি মাদ্রাসার লোকজন ছাড়াও স্থানীয় অনেকে প্রতিবাদ করতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে সেখান থেকে মণ্ডপগুলোতে হামলা করা শুরু হলে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়।

তিনি বলেন, কয়েকটি গুলির শব্দ শোনা গেলেও সেগুলো কোথায় হয়েছে তা বোঝা যায়নি।

এদিকে ঘটনার পরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরআন অবমাননা করা হয়েছে দাবি করে ব্যাপক প্রচার শুরু হয় এবং অনেকে প্রতিবাদ বিক্ষোভ অনেকে ফেসবুকে সরাসরি সমপ্রচার করেন।

প্রসঙ্গত, বাঙালি হিন্দু সমপ্রদায় এখন তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করছে। পূজা উদযাপন পরিষদের কুমিল্লা জেলা ইউনিটের সম্পাদক নির্মল পাল বলছেন, খুব ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে। পূজা বানচালের জন্য পরিকল্পিতভাবে কুরআন রেখে এ ঘটনা ঘটিয়ে তারাই এখন শহরজুড়ে পূজাবিরোধী বিক্ষোভ করছে।

কয়েকটি মণ্ডপে হামলার চেষ্টা হয়েছে কিন্তু পুলিশের বাধায় ভেতরে ঢুকতে না পারলেও গেট বা সামনের স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়েছে। হিন্দু সমপ্রদায়ের নেতারা জানিয়েছেন, শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে কুমিল্লায় অনেকগুলো পূজামণ্ডপে উৎসব চলছিল। কিন্তু যেই মণ্ডপে কুরআন পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে সেখান থেকে প্রতিমা সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

ব্যবস্থাপকরা জানিয়েছেন, পূজা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা বিসর্জন দিয়ে দিয়েছেন।

মণ্ডপ পরিদর্শনে গিয়ে গতকাল জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেছেন, দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন একটি চক্র অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এটা যে ষড়যন্ত্র তা স্পষ্ট। আমি দেশবাসীকে অনুরোধ করব আপনারা শান্ত থাকুন, কোনো উস্কানিতে কান দেবেন না। এসব ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। আপনারা আস্থা রাখুন।

এদিকে চলমান দুর্গোৎসবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দেশের ২২ জেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

 তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দুর্গাপূজার নিরাপত্তা রক্ষায় দেশের বিভিন্ন জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কুমিল্লা, ঢাকা বিভাগের নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জসহ ২২টি জেলায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

রাজধানীতে বিজিবি মোতায়েন প্রসঙ্গে লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চাহিদা থাকলে রাজধানীতেও বিজিবি মোতায়েন করা হবে। মন্দির ও এর আশপাশে টহল দিতে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে বিজিবি মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।