চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
অক্টোবর ১৫, ২০২১, ০৬:০০ পিএম
কুমিল্লায় পবিত্র কুরআন শরিফ অবমাননার খবরের জেরে চট্টগ্রামেও দুর্গাপূজার মণ্ডপে হামলা হয়েছে। জুমার নামাজের পর মুসল্লিদের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই হামলার চেষ্টা চালানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে লাঠিচার্জ করতে হয়েছে পুলিশকে। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫০ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
এদিকে, মন্দিরে হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে প্রতিমা নিরঞ্জন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রাম পূজা উদ্যাপন পরিষদ। হামলার প্রতিবাদে আজ শনিবার আধাবেলা হরতালের ঘোষণা দিয়েছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ।
গতকাল জুমার নামাজ শেষে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদের সামনে একদল মুসল্লি কুমিল্লায় কোরআন শরিফ অবমাননার খবরের প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশ আয়োজন করে। সমাবেশ থেকেই শুরু হয় মিছিল। সেখান থেকে ৪০-৫০ জনের একটি দল এক-দেড়শ গজ দূরের বিপ্লবী যাত্রামোহন সেন হলের (জেএম সেন হল) পূজা মণ্ডপে হামলা চালায়। মণ্ডপে ঢিল ছোড়ার পাশাপাশি ব্যানার-পোস্টারও ছিড়ে ফেলা হয়।
স্থানীয়রা জানান, এ সময় পূজামণ্ডপে উপস্থিত ব্যক্তিরা হামলা প্রতিরোধের চেষ্টা চালান। তারা হামলাকারী দুজনকে আটকও করেন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ এসে লাঠিচার্জ শুরু করে।
ওই দুজনকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় পুলিশ, কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেডও ব্যবহার করা হয়। এ সময় মুসল্লিরা চেরাগি পাহাড়ের দিকে চলে যান।
সর্বশেষ পরিস্থিতি বলছে, মুসল্লিদের একাংশ পুলিশের ধাওয়া খেয়ে চেরাগি পাহাড়ের দিকে অবস্থান নিয়েছেন। বাকিরা অবস্থান নিয়েছেন আন্দরকিল্লাহ শাহী মসজিদ এলাকায়। অন্যদিকে আন্দরকিল্লা ও জেএম হলের মাঝামাঝি রহমতগঞ্জের প্রবেশমুখে অবস্থান করছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ স্থানীয়রা।
এলাকায় পুলিশও জলকামান নিয়ে অবস্থান করছে। মোতায়েন করা হয়েছে বাড়তি পুলিশ সদস্য। এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।
পরে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্তও সেখানে উপস্থিত হন। উদ্ভূত পরিস্থিতি ও হামলার প্রতিবাদে প্রতিমা নিরঞ্জন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন রানা দাশগুপ্ত এবং আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত হরতালের ঘোষণা দেন।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের পক্ষ থেকেও প্রতিমা নিরঞ্জন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পরিষদের সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য বলেন, ‘প্রতিমা নিরঞ্জনের কোনো পরিবেশ এখন নেই। তাই প্রতিমা নিরঞ্জন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে সবাইকে।’ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও অঘোষিতভাবে প্রতিমা নিরঞ্জন বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনাস্থল থেকে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) বিজয় কুমার বসাক বলেন, জুমার নামাজের পর আন্দরকিল্লায় একটি সমাবেশ হচ্ছিল। পুলিশ সেখানে সতর্ক অবস্থানে ছিল, যেন ব্যারিকেড ভেঙে কেউ বের না হতে পারে। পরে সমাবেশ থেকে ব্যারিকেড ভেঙে মণ্ডপে হামলার চেষ্টা চালানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে।
উপকমিশনারের নিজের বাসার পূজামণ্ডপেও হামলার চেষ্টা হয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন, আশপাশের সিসিক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। হামলার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে।
এদিকে কুমিল্লায় কোরআন শরিফ অবমাননার প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মিছিল হয়েছে। এ নিয়ে বেশ উত্তেজনা ছিল নগরীতে। আন্দরকিল্লা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর গোটা চট্টগ্রামেই এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।